ইংরেজি মাধ্যম সরকারি স্কুল এ বার সব জেলায় |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
এ বার পুরোদস্তুর ইংরেজি মাধ্যমের সরকারি স্কুল চালু করার পরিকল্পনা করছে রাজ্য। প্রথম থেকে দ্বাদশ সব শ্রেণিতেই পঠনপাঠন চলবে ইংরেজি মাধ্যমে। বিগত বামফ্রন্ট সরকার বছর তিনেক আগে কয়েকটি সরকারি স্কুলে বাংলার সঙ্গে সঙ্গেই ইংরেজিতে পঠনপাঠন শুরু করেছিল। কিন্তু প্রথম শ্রেণি থেকে নয়, শুধু একাদশ-দ্বাদশে। তৃণমূল সরকার চায়, প্রথম থেকে দ্বাদশ পর্যন্ত সব শ্রেণির পঠনপাঠনই হোক ইংরেজিতে।
২০১০ সালে বালিগঞ্জ গভর্নমেন্ট হাইস্কুল, বেথুন কলেজিয়েট স্কুল, সাখাওয়াত মেমোরিয়াল, বারাসত গভর্নমেন্ট স্কুল, ব্যারাকপুর গভর্নমেন্ট স্কুল, জলপাইগুড়ি জেলা স্কুল-সহ ১১টি স্কুলে একাদশ শ্রেণিতে শুধু বিজ্ঞান বিভাগে ইংরেজি মাধ্যমে সমান্তরাল ক্লাস শুরু হয়। কিন্তু তার জন্য বাড়তি শিক্ষক বা অন্যান্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামোর কোনও বন্দোবস্ত করা হয়নি। ফলে সরকারের ওই প্রয়াস খুব কার্যকর হয়নি বলে অভিজ্ঞ শিক্ষকেরা মনে করেন।
নতুন সরকারের পরিকল্পনা কী?
শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বৃহস্পতিবার জানান, প্রতিটি জেলায় একটি সরকারি স্কুলে সমান্তরাল ভাবে ইংরেজি মাধ্যমের পঠনপাঠন শুরু হবে। যদিও রাজ্যের সব জেলায় সরকারি স্কুল নেই। কিন্তু যেখানে রয়েছে, সেখানেও পুরোদস্তুর একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুল চালু করার মতো পরিকাঠামো নেই। পর্যাপ্ত যোগ্য শিক্ষক এবং অন্যান্য পরিকাঠামোর ব্যবস্থা না-করে এই প্রকল্প রূপায়ণ করতে গেলে বাম আমলের মতোই দশা হবে বলে মনে করছেন শিক্ষাজগতের অনেকেই।
ব্রাত্যবাবু জানান, ২০১৪ সালে সরকারের এই উদ্যোগ বাস্তবায়িত হবে। কিন্তু কী ভাবে তা সম্ভব, সেই প্রশ্ন উঠেছে। সরকারি স্কুলে শিক্ষক নিয়োগ হয় পাবলিক সার্ভিস কমিশন বা পিএসসি মারফত। এই নিয়োগ প্রক্রিয়া যথেষ্ট দীর্ঘ। বাম আমলে যে-সব সরকারি স্কুলে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে ইংরেজি মাধ্যম চালু হয়েছিল, সেগুলির জন্য ৪৪টি শিক্ষক-পদে নিয়োগের বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে এত দিনে। কবে সেই সব পদ পূরণ হবে, তা নিয়েও ধন্দ রয়েছে।
বিকাশ ভবন সূত্রের খবর, সরকারি স্কুলে বাংলার সঙ্গে সঙ্গে ইংরেজি মাধ্যমে পঠনপাঠনের ব্যবস্থা চালু করার আর্জি জানিয়ে বুধবার শিক্ষামন্ত্রীকে চিঠি দেয় পশ্চিমবঙ্গ সরকারি বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। তাদের বক্তব্য, মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্তের মধ্যে ছেলেমেয়েদের ইংরেজি মাধ্যমে পড়ানোর আগ্রহ বাড়ছে। কিন্তু বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলিতে পড়ানোর খরচ অনেক। তাই সরকারি স্কুলে ইংরেজি মাধ্যম চালু হলে তাঁরা উপকৃত হবেন।
এ দিন এক অনুষ্ঠানের শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ব্রাত্যবাবু বলেন, “প্রতিটি জেলায় একটি করে সরকারি স্কুলে বাংলার সঙ্গে সঙ্গে প্রথম শ্রেণি থেকেই ইংরেজি মাধ্যমে পঠনপাঠন চালু করা হবে। পরীক্ষামূলক ভাবে প্রথম শ্রেণিতে চালু করে
পরে তা উঁচু শ্রেণিগুলিতে চালু করা হতে পারে। আবার একসঙ্গে প্রথম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্তও ইংরেজি মাধ্যম চালু হতে পারে। এই বিষয়ে আলোচনা চলছে।”
সরকারের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারি বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। ওই সমিতির সভাপতি দীপক দাস বলেন, “সরকারের সদিচ্ছাকে স্বাগত জানাই। তবে দেখতে হবে, ইংরেজি মাধ্যমে নতুন বিভাগ চালু করার প্রস্তুতিতে যেন খামতি না-থাকে। তা থেকে গেলে উদ্যোগ ফলপ্রসূ হবে না।” |