অবৈধ নিয়োগে সায় না-দিয়ে কোপে আমলারা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
নিয়মবিরুদ্ধ নিয়োগ-নির্দেশে সায় না-দেওয়ায় রাজ্য প্রশাসনের কিছু অফিসার সরকারের কোপে পড়ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। মহাকরণের খবর: নিয়ম-নীতিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে স্রেফ চিরকুটে লিখে গ্রুপ-ডি পদে দেদার নিয়োগের নির্দেশ দিচ্ছে সরকার। অথচ নিয়োগের ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের রায় এবং অর্থ দফতরের নির্দেশিকা না-মেনে কাজ করতে বহু অফিসারেই আপত্তি। ফলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীদের সঙ্গে তাঁদের বিরোধ বাড়ছে। আর তার ‘শাস্তি’ হিসেবেই অনেককে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
মহাকরণের খবর, গত ক’মাসে এই কারণে অন্তত পাঁচ-ছ’জন অফিসারকে পদচ্যুত করা হয়েছে। সর্বশেষ উদাহরণ যুবকল্যাণ দফতরের এক কর্তা। সম্প্রতি শিল্প দফতরের পাঠানো তালিকা মেনে গ্রুপ-ডি পদে লোক নিতে আপত্তি করেছিলেন যুবকল্যাণের যুগ্মসচিব কাঞ্চনকুমার দাস। পরিণতি হিসেবে তাঁকে ‘কম্পালসারি ওয়েটিং’-এ পাঠানো হয়েছে। এবং অভিযোগ: তাঁর জায়গায় এমন এক জনকে বসানো হয়েছে, যিনি পরীক্ষা ছাড়াই শিল্পমন্ত্রীর তালিকা থেকে ৫৫ জনকে কাজে নিতে সম্মত হয়েছেন। আবার ‘অবৈধ নিয়োগে’ সম্মতিদানের ইনাম হিসেবে কারও কারও চাকরির মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ।
নির্দেশ আসছে কী ভাবে?
মহাকরণ-সূত্রের ব্যাখ্যা: শিল্প দফতরের পাঠানো সরকারি নোটের বয়ান হল: ‘মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অমুক দফতরে চতুর্থ শ্রেণির পদে কর্মী নিয়োগের ব্যবস্থা করতে বলা হচ্ছে।’ কিন্তু সঙ্গে থাকছে ‘বেসরকারি’ নির্দেশ, অর্থাৎ চাকরিপ্রার্থীদের নাম ও পরিচিতি সংবলিত চিরকুট। চিরকুট-তালিকা অনুযায়ী নিয়োগ প্রথম শুরু করছিল রাজ্য খনিজ উন্নয়ন পর্ষদ। পরে রাজ্য ক্রীড়া পর্ষদেও কয়েক জনকে নেওয়া হয়, যে বিষয়ে ক্রীড়া-সচিব বিপি গোপালিকাকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সরকারি-সূত্রের দাবি, এক ‘বহিরাগত’ মুখ্যমন্ত্রীর কাছে তালিকা পাঠিয়ে চাকরির সুপারিশ করেছিলেন। সেই তালিকা মেনেই ক্রীড়া পর্ষদে নিয়োগ হচ্ছে।
অন্য দিকে কাঞ্চনবাবুর মতো রাজ্য শিল্প পরিকাঠামো উন্নয়ন নিগমের সিইও দীনবন্ধু ভট্টাচার্যও অনিয়ম মানতে রাজি হননি। অভিযোগ, তাই তাঁকে সরে যেতে হয়েছে। খাদ্য-সচিব থাকাকালীন শেখ নুরুল হক অবৈধ নিয়োগে আপত্তি তোলায় তাঁকেও সরতে হয়। শিল্প-সচিব থাকাকালীন আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলা হয়েছিল দু’শো লোক নিতে। তিনি রাজি হননি। শেষ পর্যন্ত আলাপনবাবু এক মাসের ছুটিতে গেলে তাঁর জায়গায় দায়িত্বপ্রাপ্ত এক অফিসারকে দিয়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। বস্তুত নিয়োগে আপত্তি করাটাই আলাপনবাবুর শিল্প-সচিবের পদ থেকে বদলির অন্যতম কারণ বলে মহাকরণ-সূত্রের দাবি। সূত্রটি আরও জানাচ্ছেন, অনুপ চন্দ ক্ষুদ্রশিল্প-সচিব থাকাকালীন তাঁর কাছেও শিল্প দফতরের চিরকুট-তালিকা এসেছিল। অনুপবাবু তা গ্রহণই করেননি। মাস দুয়েকের মধ্যে তাঁকে সরানো হয়।
তবে কৃষি, কৃষি বিপণন, সেচ ও জনস্বাস্থ্য কারিগরিতে শিল্প দফতরের ‘বেসরকারি’ তালিকা মেনেই নিয়োগ চলছে। প্রশাসনের এক কর্তা বলছেন, “সরকারি পদে যে কোনও ধরনের নিয়োগের ক্ষেত্রে শূন্য পদের সংখ্যা জানিয়ে বহুল প্রচারিত সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দেওয়া বাধ্যতামূলক। চুক্তি-নিয়োগেও তা-ই। কিন্তু বিভিন্ন দফতর এর তোয়াক্কা না-করে শিল্প দফতরের তালিকা থেকে ৩ হাজার লোক নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে।” সরকারের কী বক্তব্য
শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য হল, “মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক নিয়োগ হচ্ছে। এ ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রী আমাকে দফতরগুলোর সঙ্গে সমন্বয়সাধনের নির্দেশ দিয়েছেন। সেই কাজই করছি। কিন্তু কোনও তালিকা পাঠানো হয়নি।”
যদিও এক সচিবের মন্তব্য, “মামলা হলে অফিসারদের জেল প্রায় অবধারিত। তাই পিঠ বাঁচাতে ওই সব চিরকুটের কথাও ফাইলে উল্লেখ করে রাখা হচ্ছে।”
|
সরকার মানে ধারাবাহিকতা, কোর্টে সওয়াল কল্যাণের
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
আগের সরকার, পরের সরকার বলে কোনও কথা হতে পারে না। গণতন্ত্রে রাজনৈতিক ক্ষমতার বদল হয়, কিন্তু সরকার চলতেই থাকে। তাই সরকার মানেই একটা ধারাবাহিকতা। বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে একটি মামলায় সওয়াল করতে গিয়ে এই মন্তব্য করেন তৃণমূল সাংসদ ও আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। এই মামলার আবেদনকারী ঋদ্ধি সিদ্ধি মল ম্যানেজমেন্ট কর্তৃপক্ষ। ওই সংস্থার বক্তব্য, ২০০৭ সালে তারা কেএমডিএ-কে ৩৫ কোটি টাকা দর দিয়ে শিয়ালদহ আদালত চত্বরে উন্নয়নের কাজ করার অনুমতি পায়। পরে তারা ৩৮ কোটি টাকা খরচ করে ওই এলাকার উন্নয়ন করে। চুক্তি অনুযায়ী কাজ শেষ হলেই আবেদনকারী সংস্থার জমি লিজ পাওয়ার কথা। কিন্তু কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার পরে দীর্ঘ সময় কেটে গেলেও তারা জমির লিজ পায়নি।
রাজ্য সরকারের পক্ষে আইনজীবী আনসার মণ্ডল এ দিন আদালতে বলেন, বিষয়টি রাজ্য সরকার খতিয়ে দেখছে। আগের সরকার এই ব্যাপারে জট পাকিয়ে গিয়েছে। রাজ্যের নতুন সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে। কিছুটা সময় লাগবে। সরকারের তরফে অন্য আইনজীবী সুশোভন সেনগুপ্ত জানান, বিষয়টির সঙ্গে তিনটি দফতর যুক্ত। জমি লিজের এই সমস্যার ব্যাপারে ওই তিন দফতরের সচিবদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। সরকারের বক্তব্যের বিরোধিতা করে কল্যাণবাবু বলেন, সরকার তো সরকারই। তার কোনও রকম ‘আগে’ বা ‘পরে’ হয় না। তাঁর কথায়, “মানুষের দু’টি হাত। এক হাত অন্য হাতের সঙ্গে লড়াই করে না। বিভিন্ন দফতর হল সরকারের হাত। তাই এক দফতরের সঙ্গে অন্য দফতরের বিরোধিতার জায়গা নেই।” |