লক্ষ্মীর বোলিং দর্পে ধামাচাপা ব্যাটিং ব্যর্থতা
কুড়ি ওভারে ৬৮, হাতে পাঁচ উইকেট। বাংলাকে হারানোর জন্য এই ম্যাজিক ফিগারই তখন জ্বলজ্বল করছে ওড়িশার ব্যাটসম্যানদের সামনে। জেট গতির ক্রিকেট যুগে এ তো এক চুমুকে এক গ্লাস শরবত শেষ করার চেয়েও সোজা কাজ। কিন্তু প্রাচীন সেই প্রবাদবাক্যটাই বা ভুলে গেলে চলবে কী করে কাপ আর ঠোঁটের মধ্যে দূরত্ব অনেক। দিনের শেষে ১১ রানে ম্যাচ জিতে ওড়িশার ক্রিকেটারদের সেই প্রবাদটাই আর এক বার মনে করিয়ে দিলেন বাংলার বোলাররা।
ম্যাচ তো হাতছাড়া হতেই পারে, এমনকী বোনাস পয়েন্ট নিয়েও মাঠ ছাড়তে পারে প্রাক্তন ভারতীয় পেসার দেবাশিস মোহান্তির দল, এই আতঙ্ক যখন ক্রমশ বিষাক্ত গ্যাসের মতো ছড়াচ্ছে বাংলা শিবিরে, তখনই বিভুদত্ত পন্ডাকে ফিরিয়ে দিলেন মনোজ তিওয়ারি। ব্যাট হাতে দলকে ৫৫ রান দেওয়ার পর মনোজের এই ‘ব্রেক থ্রু’-ই আতঙ্কের বিষ তাড়ানো শুরু করল।
তৃপ্ত। বাংলাকে জিতিয়ে অধিনায়ক। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস
হিসেব বলছে, বাংলার দেওয়া ১৮৭-র টার্গেট ৪১ ওভারের মধ্যে তুলে ফেলতে পারলেই শুধু জয় নয়, বোনাসও পাবে ওড়িশা। ১৫ ওভারে তখন দরকার ৪২। প্রয়োজনীয় রান রেট আরও কমেছে। এই সময়ে ঋদ্ধিমান সাহার গ্লাভস পিছলে পড়ে গেল বিপ্লব সামন্তরায়ের ব্যাট ছুঁয়ে আসা বল। শুধু বোলার দিন্দা নন, হতাশ পুরো বাংলা শিবিরই। এই বিপ্লবই তো ওড়িশাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিলেন জয়ের দিকে। তিনি তখন ৪১-এ। ওড়িশা ১৫১-য়। কিছুক্ষণ পর হতাশা কাটিয়ে আক্রমণ করলেন দিন্দা। এ বার তাঁর বলে মহম্মদ সামির হাতে বন্দি লগনজিৎ সামাল। ১১ ওভারে দরকার ২৩। যাক, বোনাসের গেরো কাটল তা হলে। আতঙ্কের বিষের জায়গায় শিবিরে তখন সুবাতাস হয়ে জয়ের ভাবনা প্রবেশ করা শুরু করেছে। এই জায়গা থেকেই লড়াই শুরু বাংলার ক্রিকেটের লক্ষ্মীর।
কে বলবে, তিনি একত্রিশ বছরের? বিপ্লবের স্টাম্প ছিটকে দিয়ে বাংলাকে লড়াইয়ে ফেরালেন তিনি। দীপক বেহরার ব্যাটের কানা ছুঁইয়ে ঋদ্ধিমানের গ্লাভসে বল জমা করে সেই জয়ের আশা আরও উজ্জ্বল করলেন তিনিই (ওড়িশা তখন জয় থেকে ১২ রান দূরে) এবং অলোক মঙ্গরাজকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলে বিপক্ষের মুখের গ্রাস কেড়ে নিলেন সেই তিনিই, লক্ষ্মীরতন শুক্ল। দিনের শেষে তাঁর বোলিং ফিগার ৫-৩৪। ৫০ ওভারের জাতীয় ক্রিকেটে এমন বোলিং এই প্রথম এবং সেরা। লক্ষ্মী নিজে স্বীকারও করে নিলেন সে কথা। বাংলার হতাশাজনক ব্যাটিংকে যদি লড়াইয়ের জায়গায় নিয়ে আসেন মনোজ তিওয়ারি, তা হলে বোলিংয়ে অবশ্যই তিনিই হয়ে উঠলেন ত্রাতা, যাঁকে মদত জুগিয়ে গেলেন অশোক দিন্দা (৪-৪৮), যিনি প্রথম তিন ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে দিয়ে জয়ের ভিতটা তৈরি করেন। সেই ভিতের ওপর দাঁড়িয়েই বাকি কাজটুকু সেরে নেন বাংলার অধিনায়ক লক্ষ্মী।
ফর্মে ফিরছেন মনোজ
এমন সাফল্যের মধ্যেও কোচ রামনের কপালে ভাঁজ তাঁর দলের ব্যাটসম্যানদের জন্য। সত্যিই চিন্তার বিষয়। মনোজের ৫৫ (তা-ও ৯৫ বলে) বাদ দিলে বাকিদের অবদান সামান্যই। লক্ষ্মী নিজে তিনের বেশি রান করতে পারলেন না, অনেক আশা করে যাঁকে ওপেন করতে পাঠিয়েছিলেন, সেই সৌরাশিস লাহিড়ির ব্যাটেও মাত্র চার রান। বলও করলেন মাত্র এক ওভার। ওড়িশা বলেই হয়তো পার পেয়ে গেল এই ব্যাটিং। বরং বলা যায় লক্ষ্মীদের বোলিংয়ে চাপা পড়ে গেল এই ক্ষত। পরের ম্যাচে সামনে ধোনির রাজ্য ঝাড়খন্ড। তার আগে এই ব্যাটিং অশনি সঙ্কেত বই কি।

সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলা ১৮৬ (মনোজ ৫৫, বসন্ত মোহান্তি ৪-২২)
ওড়িশা ১৭৫ (বিপ্লব সামন্তরায় ৫১, লক্ষ্মী ৫-৩৪, দিন্দা ৪-৪৮)




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.