ম্যাচ রিপোর্টটা শুরু করতে চাই একজনকে ধন্যবাদ দিয়ে। তিনি, স্যর অ্যালেক্স ফার্গুসন।
এত দিন জানতাম, কমজোরি দল নিয়ে হেভিওয়েট টিমের সঙ্গে সমানে সমানে টক্কর দিতে পারেন বিশ্বে শুধু একজন কোচ। তিনি খুশ হিডিঙ্ক। বুধবার রাতের পর থেকে হিডিঙ্কের পাশে ফার্গুসনের নামটাও রাখতে হবে। কী করে স্রেফ বুদ্ধি দিয়ে, স্ট্র্যাটেজির ফাঁদে ফেলে রিয়াল মাদ্রিদের মতো একটা মহাশক্তিধর টিমকে অকেজো করে দেওয়া যায়, দেখিয়ে দিলেন ফার্গুসন। উনি জানতেন, ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড কাগজে-কলমে কয়েক মাইল পিছিয়ে। দেশ-বিদেশের মিডিয়াতে জল্পনা চলছিল, নিজেদের মাঠে রিয়াল চ্যাম্পিয়ন্স লিগ প্রি-কোয়ার্টার প্রথম লেগ-টা কত গোলে জিতবে সেটা নিয়ে। ম্যাঞ্চেস্টারের জয় নিয়ে নয়। আমি নিজেও তো রিয়ালের পক্ষেই প্রিভিউ লিখেছিলাম। ভাবতে পারিনি, ফার্গুসন এ ভাবে সবাইকে অবাক করে দেবেন। |
প্রথম চমকটা ফর্মেশনে। রোনাল্ডোদের ঘরের মাঠে ফার্গুসন নেমে পড়লেন ৪-২-৩-১ ফর্মেশনে। মাঝমাঠে জাপানি ফুটবলার কাগাওয়াকে নিয়ে এলেন। আর রোনাল্ডোর পিছনে লেলিয়ে দিলেন ফিল জোন্সকে। এতে হল কী, মাঝমাঠে ফাঁকা জায়গা তৈরি হল খুব কম। রিয়াল মিডফিল্ডাররা খেলাটা তৈরি করতে পারছিল না। রিয়াল-মগজ মোরিনহো যে একেবারে চেষ্টা করেননি তা নয়। মার্সেলোর জায়গায় কোয়েন্ত্রাও নামল। কোয়েন্ত্রাও প্রথম ঝটকাটাও দিল। কিন্তু তাতে দেখলাম, রিয়াল নয়, জেগে গেল ম্যাঞ্চেস্টার! ওয়েলবেক বাঁ দিকে সরে যাচ্ছিল বারবার। আর নিজেদের মধ্যে ক্রমাগত জায়গা বদলে-বদলে রুনি আর কাগাওয়া ধাঁধায় ফেলে দিল মোরিনহোর মাঝমাঠকে। বুদ্ধি করে এই দু’জন পাল্টা চাপ রেখে যাচ্ছিল রিয়ালের কোয়েন্ত্রাও আর আলোন্সোর উপর। কিন্তু তবু রিয়ালের রোনাল্ডো ছিল। বেশিক্ষণ চুপ করিয়ে রাখা ওকে সম্ভব নয়। ওয়েলবেক গোলটা পাওয়ার পর দশ মিনিটও গেল না, অসাধারণ স্পট জাম্পে ওর পুরোনো ক্লাবের জালে বল ঢোকাল সিআরসেভেন। দেখুন, রোনাল্ডোর গতি আটকানোর সাধ্য ম্যাঞ্চেস্টার ডিফেন্সের নেই। কিন্তু ফার্গুসন শুধু ওকে নিয়ে না পড়ে থেকে রোনাল্ডোর সতীর্থদের অকেজো করার দিকে নজর রেখেছিলেন। ওজিল, বেঞ্জিমারা মাঝে মাঝে বল পেলেও তাই বিশেষ সুবিধে করতে পারেনি। বুঝলাম না কেন বেঞ্জিমার বদলে ইগুয়াইনকে শুরু থেকে নামালেন না মোরিনহো। ও গোড়া থেকে নামলে রিয়াল জিতে মাঠ ছাড়ত না, কে বলতে পারে।
আসলে মোরিনহো আর ফার্গুসন এক জিনিস নন। মোরিনহো বিতর্ক তৈরি করতে ভালবাসেন। কিন্তু মস্তিষ্ক-যুদ্ধে ফার্গুসনের মহড়া নেওয়া ওর পক্ষে কঠিন। বিশ্বের সমস্ত ফুটবল কোচেরই ফার্গুসনের কোচিং দেখে শেখা উচিত। আরও একজনের কথা বলতে হবে। ম্যাঞ্চেস্টার গোলকিপার ডেভিড ডি জিয়া। শেষ দিকে রোনাল্ডোরা যখন ছিন্নভিন্ন করে ছাড়ছে ম্যাঞ্চেস্টার ডিফেন্সডি জিয়া একা সব সামলেছে। ওই সময় আবার ম্যাঞ্চেস্টারের ফান পার্সিও দু’টো সুযোগ পেয়েছিল।
দু’দলের মধ্যে আমার বেশি ভাল লাগল ম্যাঞ্চেস্টারকে। বিশেষ করে ওদের ডিফেন্স। রিয়ালের পালা শেষ, এ বার ফিরতি ম্যাচ ফার্গুসনের ঘরের মাঠে। এমনিতেই অ্যাওয়ে গোলের সুবিধাটা ম্যাঞ্চেস্টারের দিকে। তা ছাড়া ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে মোরিনহোর রেকর্ডটাও তো মোটেই ভাল নয়।
|
হোসে মোরিনহো
ওরা অ্যাওয়ে ম্যাচে গোল করে গেল বলে সুবিধাজনক জায়গায় আছে, ভাববেন না। পরের ম্যাচটাও ৫০-৫০। আমরা ওল্ড ট্রাফোর্ডে গিয়ে একটার বেশি গোল করতে পারি। |
অ্যালেক্স ফার্গুসন
পরের ম্যাচে যে দল প্রথম গোল করবে তাদের অ্যাডভান্টেজ বেশি। জানি ওরা ঝড়ের মতো কাউন্টার আক্রমণে আসবে। তবে রিয়ালকে সামলানোর অস্ত্র আমাদেরও আছে। |
|
|
ম্যাঞ্চেস্টার |
রিয়াল |
গোল |
১ |
১ |
বল পজেশন |
৪৫% |
৫৫% |
গোলে হানা |
১৩ |
২৮ |
গোলে শট |
৯ |
১৪ |
কর্নার |
৮ |
১২ |
অফ সাইড |
৩ |
০ |
ফাউল |
১২ |
১৪ |
হলুদ কার্ড |
৩ |
০ |
লাল কার্ড |
০ |
০ |
|