ভালবাসার দিনে ‘বলি’ ভালবাসা!
জীবনে সমাপতন মাঝে মাঝে হয় বটে, কিন্তু তা বলে এমন? এত নির্মম? সন্ত ভ্যালেন্টাইনও বোধহয় স্তব্ধ হয়ে যেতেন!
অলিম্পিকের দুনিয়া যাঁকে ডাকে ‘ব্লেড রানার’ বলে, চেনে অস্কার পিস্টোরিয়াস নামে, তিনি কিনা খুন করে ফেললেন নিজের প্রেমকে! পিস্টোরিয়াসের পিস্তল এফোঁড়-ওফোঁড় করে দিল প্রেমিকার শরীর।
বেছে বেছে ঠিক এই দিনে! চোদ্দোই ফ্রেব্রুয়ারি! বিশ্ব যে দিন আবদ্ধ ভালবাসার গ্রন্থিতে। |
এবং দুনিয়া ডুবে শুধু একটাই প্রশ্নে। পিস্টোরিয়াস কি এটা জেনেশুনে করেছেন? না কি পুরো ব্যাপারটাই অনিচ্ছাকৃত? দুর্ঘটনা? উত্তর নেই এখনও।
ঘটনার বিবরণ শুনলে প্রেমিক-প্রেমিকাদের হৃদযন্ত্র বন্ধ হবে যেমন, তেমনই ডুবতে হবে চরম বিষাদে। ভ্যালেন্টাইনস ডে উপলক্ষে প্রেমিক পিস্টোরিয়াসকে ‘সারপ্রাইজ গিফট’ দিতে চেয়েছিলেন প্রাক্তন মডেল রিভা স্টিনক্যাম্প। গত রাতে টুইটও করেছিলেন। এবং ‘সারপ্রাইজ গিফট’ দিতেই কি না কে জানে, ভোর চারটেয় প্রিটোরিয়ায় পিস্টোরিয়াসের ম্যানসনে রিভার ঢুকে পড়া।
আর ‘রিটার্ন গিফট’? পিস্তলের গর্জন। তীব্র গতিতে বুলেটের ছিটকে বেরিয়ে আসা। একটা, দু’টো, তিনটে। গলায়, বুকে, মাথায়...। কয়েক সেকেন্ড লাগল শরীরটা এলিয়ে পড়তে। রক্তের বিছানায়।
মাথা নিচু। ‘হুডে’ মুখ ঢাকা। ক্লান্ত, রীতিমতো ধস্ত শরীরের অলিম্পিকের কিংবদন্তিকে তাঁর বিশাল বাড়ি থেকে যখন বের করে আনছে দক্ষিণ আফ্রিকার পুলিশ, তখনও বিস্ময়ের ঘোর কাটেনি উপস্থিতদের। বরং চরম জল্পনা চলেছে, অলিম্পিকে অবিশ্বাস্য রোম্যান্সের জন্ম দিয়েছেন যিনি, দৌড়েছেন কৃত্রিম পা নিয়ে, সেই পিস্টোরিয়াস কী করে গলা টিপে এ ভাবে খুন করলেন জীবনের রোম্যান্সকে? প্রিটোরিয়া পুলিশ তাঁর বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ এনেছে। আদালতেও তাঁকে তোলা হয়েছে। মাত্র দু’মাস বয়স সম্পর্কের, তাতে এত বড় ফাটল?
অলিম্পিক কিংবদন্তি নিজে কী বলছেন, জানার উপায় নেই। কিন্তু পুলিশকে পিস্টোরিয়াস যা বয়ান দিয়েছেন, তার সারমর্ম একটাই। তিনি বুঝতে পারেননি! অত রাতে প্রেমিকাকে চিনতে পারেননি। ভেবেছিলেন, বাড়িতে চোর ঢুকেছে!
যে তত্ত্বটাই বিশ্বাসযোগ্য মনে হচ্ছে খেলাধুলোর জগতের। কাটাছেঁড়া চলছে রিভার টুইটের। যেখানে তিরিশ বছরের মডেল লিখেছিলেন, ‘কাল আপনারা নিজের ভালবাসাকে কী উপহার দিচ্ছেন?’ বলা হচ্ছে, কই কোথাও তো পিস্টোরিয়াসের সঙ্গে রিভার ছিটেফোঁটা মনোমালিন্যের খোঁজ নেই। গত রবিবার এক সাক্ষাৎকারে তো রিভা বলেও দিয়েছিলেন, “আমার হৃদয়ে ওর জায়গাটা অন্য রকম।” বরং দ্বিতীয় তত্ত্বটা অনেক বেশি বিশ্বাসযোগ্য ঠেকছে মিডিয়ার কাছে। গোটা পৃথিবীতে অপরাধের দিক থেকে দক্ষিণ আফ্রিকা দু’নম্বরে। প্রতি পঞ্চাশ জনের মধ্যে গড়ে তিন করে নিত্য খুন হন। সঙ্গে ধর্ষণ, ডাকাতির গোনাগুনতি নেই। বেশির ভাগ গৃহস্থ নিজের কাছে আগ্নেয়াস্ত্র রাখেন। অস্কারের কাছেও যেটা ছিল। পুলিশ জানাচ্ছে, পিস্টোরিয়াসের বিশাল অট্টালিকা নিয়ে আগেও অভিযোগ এসেছে। উঠেছে বাড়িতে এক মহিলাকে মারধরের অভিযোগ।
এবং তাঁকে ঘিরে ভিন্ন মন্তব্য, ভিন্ন মতবাদ। কোথাও চরম ঘৃণা, কোথাও সহানুভূতি। পিস্টোরিয়াসের সদ্য প্রাক্তন বান্ধবী কিছু দিন আগেও বলেছেন, “আমি নিশ্চিত রিভা ছাড়াও পিস্টোরিয়াসের অন্যান্য মহিলার সঙ্গে সম্পর্ক আছে। লোকে যা ভাবে ও তা নয়।” আর বৃহস্পতিবার, ঘটনার পর পিস্টোরিয়াসের বাবা হেনকে বলেছেন, “অস্কার খুব ভাল ছেলে। যা হয়েছে সেটা মারাত্মক ভুল থেকে হয়েছে।” লন্ডন অলিম্পিকে পিস্টোরিয়াসের রুমমেট আরনু ফৌরিও বলে ফেলেছেন, “ওর জন্য, মেয়েটার পরিবারের জন্য প্রার্থনা করছি।”
মহানায়কও বা আজ আর কী করবেন? শুধু ওই প্রার্থনা ছাড়া?
|
|
অস্কারের বেডরুমে |
ঢুকলে দেখা যেত একটা ক্রিকেট ব্যাট, একটা বেসবল ব্যাট, একটা রিভলভার, একটা মেশিনগান। রিভলভার থাকত বিছানার পাশে, মেশিনগানটা জানলার পাশে।
কেন থাকত এত অস্ত্র? অস্কার পিস্টোরিয়াস বলেছিলেন, তিনি সব সময় আতঙ্কে থাকেন কখন তাঁর বাড়িতে দুষ্কৃতীরা হামলা করে। অস্ত্র থাকত নিজের নিরাপত্তার জন্য। |
|
অস্কার আদর্শ পুরুষ। আমার হৃদয়ে ওর জন্য সব সময় আলাদা জায়গা থাকবে।
রিভা স্টিনক্যাম্প
(মৃত্যুর আগে এক সাক্ষাৎকারে) |
বান্ধবী রিভার সঙ্গে |
|
পুলিশের বয়ান |
|
চার বছর আগেও অস্কারের নামে নাইটক্লাবে এক মহিলাকে শারীরিক ভাবে নিগ্রহ করার অভিযোগ আছে। |
|
অস্কার মেয়েদের সঙ্গে এ রকমই করে থাকে। আমি নিশ্চিত,
রিভা ছাড়া অন্য মেয়ের সঙ্গেও অস্কারের সম্পর্ক আছে।
সামান্থা টেলর
(কিছু দিন আগে বলেছিলেন, যখন তাঁর সঙ্গে অস্কারের সম্পর্ক ভেঙে যায়) |
|