|
|
|
|
খাকি পুলিশের বিরুদ্ধে পথে গ্রিন পুলিশ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
গার্ডেনরিচে কলকাতা পুলিশের সাব-ইনস্পেক্টর গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাওয়ার পরে যখন পুলিশকর্মীদের মনোবল ধাক্কা খেয়েছে, তখন হাওড়ায় পুলিশের বিরুদ্ধেই বিক্ষোভে নামল পুলিশ।
বৃহস্পতিবার সকালে দুর্ঘটনায় এক গ্রিন পুলিশকর্মীর মৃত্যুর প্রতিবাদে এই বিক্ষোভে হাওড়া সেতু অবরোধ থেকে রাস্তা অবরোধ, গাড়িচালকদের মারধর থেকে পুলিশের সঙ্গে গ্রিন পুলিশের ধস্তাধস্তি দফায় দফায় সবই চলল রাত পর্যন্ত। বিপর্যস্ত হয়ে পড়ল হাওড়া শহর। আঁচ পড়ল কলকাতাতেও।
পুলিশ জানায়, ঘটনার সূত্রপাত সকাল সাড়ে ন’টায়। বালির ২ নম্বর জাতীয় সড়কে মাইতিপাড়ার জিরো পয়েন্টে গাড়িতে রিফ্লেক্ট স্টিকার (রাতে আলো পড়লে যা চকচক করে) লাগাচ্ছিল একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। তাতে সহযোগিতা করছিলেন বালি মাইতিপাড়া সাব ট্রাফিক গার্ডের দুই কনস্টেবল ও দুই গ্রিন পুলিশকর্মী। সেই সময়ে ডানকুনির দিক থেকে মালবোঝাই একটি ছোট লরি বালির দিকে আসছিল। গ্রিন পুলিশকর্মী সুজিত রায় গাড়িটিকে হাত দেখিয়ে দাঁড়াতে বলেন। অভিযোগ, থামা দূরে থাক, গাড়িটি আচমকাই গতি বাড়িয়ে দেয়। সুজিত রাস্তার ধারে সরে গেলেও গাড়িটি তাঁকে ধাক্কা মেরে রাজচন্দ্রপুর টোলপ্লাজার দিকে চলে যায়। পরে গাড়িটিকে ধরে ফেলেন এলাকাবাসীরা ও পুলিশ। গাড়িটি ভাঙচুর করে চালককেও মারধর করা হয়। |
স্তব্ধ হাওড়া সেতু। —নিজস্ব চিত্র |
পুলিশ জানায়, বালি রাজচন্দ্রপুরের বাসিন্দা সুজিত রায়ের (২৭) মা, স্ত্রী ও একটি তিন মাসের ছেলে রয়েছে। ২০১১ সালে গ্রিন পুলিশ হিসেবে বালি ট্রাফিকে যোগ দেন তিনি। এ দিন দুর্ঘটনার পরে সুজিতকে জয়সোয়াল হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিত্সকেরা জানান, ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। খবর শুনে ক্ষোভে ফেটে পড়েন গ্রিন পুলিশকর্মীরা। হাসপাতাল থেকে বালি থানায় নিয়ে যাওয়া হয় সুজিতের দেহ। সেখান থেকে মর্গে যাওয়ার সময়ে গাড়ির সামনে মিছিল করেন গ্রিন পুলিশকর্মীরা। রাস্তায় শুরু হয় যানজট। অভিযোগ, কয়েকটি যানবাহনের চালককে মারধর করেন কয়েক জন গ্রিন পুলিশকর্মী। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি সামলাতে চেষ্টা করে পুলিশ। তাতে গ্রিন পুলিশকর্মীদের ক্ষোভ বাড়ে। বেলুড় বাজারের মোড়ে রাস্তায় বসে পড়েন তাঁরা। এর জেরে ঘণ্টাখানেক জিটি রোড বন্ধ থাকে।
গ্রিন পুলিশকর্মীদের অভিযোগ, ২০১২ সালের মার্চে ডিউটিতে যাওয়ার পথে লরির ধাক্কায় মৃত্যু হয় মালিপাঁচঘরা ট্রাফিক গার্ডের গ্রিন পুলিশকর্মী শুভদীপ কোনারের। তাঁর মৃত্যুর পরে বিভিন্ন সাহায্যের প্রতিশ্রুতি এলেও আজও একটি সাহায্যও মেলেনি। তাঁদের আরও অভিযোগ, স্বাস্থ্যবিমা থাকলেও তার কোনও কাগজপত্রও আজও হাতে পাননি তাঁরা। নেই কোনও জীবনবিমা। বেতনও অনিয়মিত। তার উপরে রয়েছে প্রতিনিয়ত কর্তাদের দুর্ব্যবহার।
এ দিন বেলুড়ে অবরোধের পরে গ্রিন পুলিশকর্মীরা হাওড়া মর্গে পৌঁছন। সেখান থেকে মিছিল করে হাওড়া পুলিশ কমিশনারেটের অফিসে যান তাঁরা। অফিস ঘেরাও করে বিক্ষোভ শুরু হয়। সিটি পুলিশের এসিপি (সদর) অনুরাধা মণ্ডল গ্রিন পুলিশের চার প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলেন। পরে বিক্ষোভকারীরা জানান, পুলিশকর্তাদের থেকে তেমন আশ্বাস তাঁরা পাননি। তাই অনির্দিষ্ট কালের জন্য কাজ বন্ধ করে দিচ্ছেন। বিকেলে হাওড়া ব্রিজ অবরোধ করেন তাঁরা। কলকাতা ও হাওড়া দু’দিকের রাস্তাই প্রায় আধ ঘণ্টা অবরুদ্ধ হয়ে যান চলাচল বিপর্যস্ত হয়। অবরোধ তুলতে গেলে পুলিশের সঙ্গে গ্রিন পুলিশের হাতাহাতি হয়। ৪০ জন গ্রিন পুলিশ গ্রেফতার হন।
হাওড়া সিটি পুলিশের কমিশনার অজেয় রানাডে বলেন, “বিক্ষোভকারী গ্রিন পুলিশদের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ আনা হচ্ছে। একটি নির্দিষ্ট চুক্তিতে ওঁদের চাকরিতে নেওয়া হয়। এর পরে যা দাবি-দাওয়া আছে, তা সরকারকে জানাতে পারি মাত্র।” |
|
|
|
|
|