নিমতার কাছে একটি গ্যারাজে খুব কম দামে বিলাসবহুল গাড়ি বিক্রি হচ্ছে। নিউ টাউন থানায় গোপন সূত্রে এই খবর আসার পরেই খোঁজখবর শুরু করেন অফিসারেরা। আর সেই খোঁজ নিতে গিয়েই ধরা পড়ে গেল একটি আন্তঃরাজ্য গাড়ি পাচার চক্র।
পুলিশ জানিয়েছে, নিউ টাউন ও নিউ টাউন সংলগ্ন এলাকায় গত ১০ থেকে ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তল্লাশি চালিয়ে মোট এগারোটি গাড়ি উদ্ধার হয়েছে। তার মধ্যে একটি ১২ চাকার ট্রাক, তিনটি ১০ চাকার ট্রাক, একটি ৬ চাকার ট্রাক, তিনটি টাটা সুমো, একটি বোলেরো, একটি টাটা ইন্ডিগো ও একটি টাটা সাফারি। এই ঘটনায় ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃতদের নাম রঞ্জিত বিশ্বাস, নরেণ ঠাকুর, দীপককুমার দুবে, দীপু হাজরা, মিথিলেশ ঠাকুর ও বিজয়কুমার রায়। এদের কারও বাড়ি নিমতা, কেউ থাকে ফুলবাগানে। এমনকী, এদের মধ্যে বিহারের মজফফরপুরের বাসিন্দাও আছে। বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের এডিসি সন্তোষ নিম্বলকর বলেন, “উত্তর ২৪ পরগনার নিমতা এলাকার কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ের ধারে একটি গ্যারাজ থেকে রঞ্জিত বিশ্বাসকে ধরা হয়। সেখান থেকেই উদ্ধার হয় ১০টি গাড়ি। পরে রঞ্জিতকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বাকিদের গ্রেফতার করা হয় ও উদ্ধার হয় আরও একটি গাড়ি।” ধৃতদের বৃহস্পতিবার আদালতে তোলা হলে তাদের ১০ দিনের পুলিশি হেফাজত হয়। |
পুলিশ জানিয়েছে, গ্যারাজ থেকে যখন গাড়িগুলি উদ্ধার হয়, তখন প্রতিটি গাড়ি ও ট্রাক খুবই যত্নে ছিল। গাড়ির অন্দরসজ্জাও ছিল দেখার মতো। অথচ এই গাড়িগুলি পাওয়া যাচ্ছিল অবিশ্বাস্য কম দামে। পুলিশ গাড়িগুলি ধরার পরে তদন্তে নেমে দেখে গাড়ির চেসিস নম্বর পর্যন্ত পাল্টে ফেলেছে দুষ্কৃতীরা। এমনকী, গাড়ি বিক্রির জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রও বানিয়ে ফেলেছিল দুষ্কৃতীরা। ফলে ক্রেতাকে সহজেই বোকা বানানো যেত। পুলিশ জানিয়েছে, গাড়ির চেসিস নম্বর পাল্টানোর জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রও তারা রেখেছিল। সেই যন্ত্র উদ্ধার হয়েছে। তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, গাড়ির কাগজ তৈরি করা হত নাগাল্যান্ড থেকে।
পুলিশের দাবি, তদন্ত করে তারা জানতে পেরেছে, এই চক্রটি আসলে চালিত হত বিহারের মজফফরপুর থেকে। বিহারের চোরাই গাড়ি বিক্রি হত পশ্চিমবঙ্গে। অন্য দিকে, পশ্চিমবঙ্গের চোরাই গাড়ি বিক্রি করা হত বিহারে। এই চক্রের মূল পাণ্ডা মামা নামে এক ব্যক্তি। তিনি মজফফরপুর থেকে পুরো বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করেন বলে পুলিশ জানতে পেরেছে। যদিও এডিসি সন্তোষ নিম্বলকর বলেন, “মামাকে এখনও গ্রেফতার করা যায়নি। তবে ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গিয়েছে, গত ৪ বছর ধরে এই চক্রটি কাজ করছে। প্রায় ১০০টি চোরাই গাড়ি বিক্রি করেছে এই চক্র।” |