এক দিকে লরি পার্কিং, অন্য দিকে বস্তি। গঙ্গার দু’পাড়ে দু’রকম ভাবে জমি দখল হয়ে রয়েছে। কিন্তু সেই দখলদার সরানোর ব্যাপারে উদাসীন সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। বারবার আবেদন করেও কোনও ফল হয়নি। এমনই অভিযোগ নিবেদিতা সেতু টোলওয়ে কর্তৃপক্ষের। স্থানীয় বাসিন্দাদেরও অভিযোগ, এর ফলে আইন-শৃঙ্খলার সমস্যা হচ্ছে।
টোলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানান, ২০০৭-এ রাজ্য সরকারের সঙ্গে হওয়া চুক্তিতে বলা রয়েছে, আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত যে কোনও বিষয়ে সরকারের তরফে পুরোপুরি সহযোগিতা করা হবে। কিন্তু অভিযোগ, সেতুর নীচের বস্তি সরানোর জন্য সিপিএম পরিচালিত বালি পুরসভা এবং দক্ষিণেশ্বর এলাকায় বেআইনি লরি পার্কিং সরানোর জন্য তৃণমূল পরিচালিত বরাহনগর পুরসভা এবং পুলিশকে বারবার জানিয়েও কোনও ফল হয়নি।
ডানলপ মোড় থেকে কিছুটা এগিয়ে সাহেববাগান থেকে দক্ষিণেশ্বর পর্যন্ত পিডব্লিউডি রোডে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সার দিয়ে শয়ে-শয়ে লরি, ট্রাক পার্ক করা থাকে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, কোনও কোনও জায়গায় দিনের পর দিন দাঁড় করানো থাকে লরি। গত বছর ২৩ ফেব্রুয়ারি বরাহনগরের এক ঝুপড়িবাসী মহিলাকে ম্যাটাডরে তুলে নিয়ে গিয়ে দক্ষিণেশ্বরের কাছে নিবেদিতা সেতুর নীচে ধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ। পরে তাঁর মৃত্যু হয়। এ ছাড়া, মাঝেমধ্যেই ছিনতাই-সহ বিভিন্ন অসামাজিক কাজ হয় বলেও অভিযোগ।
নিবেদিতা সেতুর বালি টোল প্লাজার চিফ জেনারেল ম্যানেজার (অপারেশন) সুমিত মুখোপাধ্যায় বলেন, “সেতুর নীচে মদের ঠেক চলছে খবর পেয়ে পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে আমরা সেগুলি ভেঙে দিয়েছি। ওই জায়গায় সেতুর নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন হয়েছে। কিন্তু পার্কিং সরানোর কাজ তো পুলিশের করার কথা।”
কাদের অনুমতিতে এই পার্কিং? সদুত্তর নেই কারও কাছেই। বরাহনগর পুরসভার তৃণমূল চেয়ারপার্সন অপর্ণা মৌলিকের কথায়, “সমস্যাটা দীর্ঘদিনের। তবে দখলদারি সরাতে চেষ্টা চালাচ্ছি।” ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের পুলিশ কমিশনার সঞ্জয় সিংহ বলেন, “লরি সরানোর কাজ শুরু হয়েছে। আশা করি তাড়াতাড়ি সমস্যাটি মেটানো সম্ভব হবে। ওখানে নিয়মিত টহলদারিও করা হয়।”
তবে ডানলপ ব্রিজ ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক অমিতাভ মিত্রের দাবি “১৯৮২ সাল থেকে ওই জায়গায় লরি রাখছি। সংগঠনের ২৩০টা মতো লরি রয়েছে। বাকিগুলো কাদের জানি না।” তিনি আরও বলেন, “সেতু তৈরির সময়ে প্রশাসন ও সেতু কর্তৃপক্ষের তরফে বারবার বলা হয়েছিল, বিকল্প ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। কিন্তু এখন বলা হচ্ছে নিজেদের ব্যবস্থা করে নিতে হবে। এটা কী করে হয়?”
বালির দিকেও রয়েছে দখলদারি। অভিযোগ, বালি নিমতলায় গঙ্গার ধারে নিবেদিতা সেতুর নীচে একটি বস্তি রয়েছে। সেখানে ৪৪টি পরিবার বাস করে। কয়েক মাস আগেই ওই বস্তিতে একটি অগ্নিকাণ্ডে সেতুর একটি স্তম্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সুমিতবাবু বলেন, “অল্পের জন্য বড় দুর্ঘটনা এড়ানো গিয়েছে। কোনও ভাবে যদি স্তম্ভের বিয়ারিং-এর ক্ষতি হত, তা হলে সেতুর ভারসাম্যের সমস্যা তৈরি হত।”
নিবেদিতা সেতু কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ২০০৯ সালে বালি পুরসভার তরফে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে সেতুর নীচে ৬ মাসের জন্য পুরসভার সাফাইকর্মীদের থাকতে দেওয়ার অনুমতি নেওয়া হয়। অনুমতিও মেলে। অভিযোগ, নির্দিষ্ট সময়ের পরে নিবেদিতা সেতু কর্তৃপক্ষ ওই জমি খালি করার জন্য পুরসভাকে চিঠি দেয়। কিন্তু কোনও উত্তর মেলেনি। সুমিতবাবুর অভিযোগ, “পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, এখন আর ওই জায়গায় কোনও পুরকর্মী থাকেন না। তা হলে বহিরাগতদের কারা থাকতে দিল? জমি খালি করার জন্য পুরসভা থেকে পুলিশ, বিধায়ক সবাইকে জানিয়েও কোনও ফল হয়নি।”
বালি পুরসভার সিপিএম চেয়ারম্যান অরুণাভ লাহিড়ীর অবশ্য সাফ বক্তব্য: “পুরসভার কোনও কর্মী ওখানে থাকে না। বহিরাগতদের যদি সেতু কর্তৃপক্ষ তুলে দেন, আমাদের কোনও আপত্তি নেই। চিঠি দিয়ে তা জানিয়ে দিচ্ছি।” |