ভয়ের বাতাবরণ কাটাতে সরস্বতী পুজোর আয়োজন হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু, তাতেও ভয় কাটছে না।
গত মঙ্গলবার কলেজের ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র তোলার দিন গণ্ডগোল চরমে পৌঁছয়। বহিরাগত যুবকের গুলিতে নিহত হন কলকাতা পুলিশের অফিসার তাপস চৌধুরী। ১৮ তারিখ মনোনয়ন পেশ করার শেষ দিন। ওই দিনও তাই গণ্ডগোলের আশঙ্কা করছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার কলেজের টিচার-ইন-চার্জ বিজয় আচার্য জানান, মনোনয়ন জমা দেওয়ার দিনে একটি পরীক্ষা নেওয়ার কথা ছিল। সেই পরীক্ষা পিছিয়ে ২৫ তারিখ নেওয়া হবে। তাঁর কথায়, “এই পরিস্থিতিতে আর ঝুঁকি নেওয়া সম্ভব নয়।”
কলেজের পরিবেশ স্বাভাবিক করতে আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন ছাত্র-শিক্ষক সকলেই। এ বার সরস্বতী পুজো করা নিয়ে সংশয় ছিল। কিন্তু, বুধবারেই ছাত্রদের একাংশ এসে জানান, তাঁরা সরস্বতী পুজো করতে চান। তাই, নমো নমো করে হলেও সরস্বতী পুজো হচ্ছে। কারণ, বৃহস্পতিবার দুপুরে যখন সরস্বতী মূর্তি নিয়ে আসা হয়, তখন সেখানে ছিলেন চার-পাঁচ জন ছাত্র। প্রতিমা নামাতে হাত লাগাতে হয় শিক্ষকদেরও।
কলেজ সূত্রের খবর, অন্যান্য বার বেশ ঘটা করে পুজোর আয়োজন হয়। হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও। আলোর মালা তৈরি হয়। মাইক বাজে। কার্ড ছেপে আশপাশের স্কুল-কলেজগুলিতে নিমন্ত্রণ করা হয়। এ বার সে সব থেকে অনেক দূরে গার্ডেনরিচের হরিমোহন কলেজ। কলেজের তৃণমূল ছাত্র সংসদের নেতা সুদীপ দাসের বক্তব্য, “যে ভাবেই হোক, আমরা পুজো করবই। কলেজের ভিতরের পরিবেশ স্বাভাবিক করার চেষ্টা হচ্ছে।” কলেজ সূত্রের খবর, গত বছর যে ছাত্রীরা সরাসরি পুজোয় অংশ নিয়েছিলেন, তাঁদের ক’জন এ বার আসতে পারবেন, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। প্রতি বার বিসর্জনের পরের দিন বড় করে খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন হয়। এ বার মনোনয়ন নিয়ে ব্যস্ত ছাত্রেরা সেই আয়োজন করতে পারবেন কি না তা নিয়েও সন্দেহ দেখা দিয়েছে।
এই মাসের ১৮ তারিখ মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। মঙ্গলবার মনোনয়নপত্র তোলার দিনই যাবতীয় গণ্ডগোলের সূত্রপাত। ভিতরে তখন মনোনয়নপত্র তুলছিলেন ছাত্র-ছাত্রীরা। কলেজের বাইরে বন্দর এলাকার দুই ক্ষমতাবান নেতার লোকজন জড়ো হয়ে গণ্ডগোল পাকাতে থাকে। সেই গণ্ডগোলের জেরেই গুলিতে নিহত হন তাপসবাবু। যদিও ওই ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে কলেজের ছাত্র সংসদ নির্বাচনের কোনও সম্পর্ক নেই বলে বৃহস্পতিবার মন্তব্য করেছেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু।
বুধবারে কলেজের বাইরে যত পুলিশ ছিল, এ দিন ছিল তার চার গুণ। কলেজের ভিতরেও মোতায়েন ছিল পুলিশ। নিয়ে আসা হয়েছিল র্যাফ-ও। কলেজে ঢুকতে গেলে বাধা দেন পাহারাদার। বলেন, “ফোনে প্রিন্সিপ্যালের সঙ্গে কথা বলুন।” এ দিন সকাল থেকে কলেজে বিএ, বিএসসি, বিকম-এর দ্বিতীয় বর্ষের টেস্ট পরীক্ষা চলছিল। বিজয়বাবুর দাবি, প্রায় পাঁচশো ছাত্র-ছাত্রী সেখানে পরীক্ষা দিয়েছেন। কলেজের ইংরেজি শিক্ষক জয়ন্ত মিত্র বলেন, “চাপা আতঙ্ক থাকবেই। কিন্তু, যে ভাবে পুলিশি ব্যবস্থা করা হয়েছে, তাতে এখন নতুন করে আর গণ্ডগোলের আশঙ্কা নেই। তবে পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে আরও একটু সময় লাগবে।”
এ দিকে, এ দিন শহরের এক অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “মঙ্গলবারের ঘটনা কলেজের ভিতরের পরিস্থিতির সঙ্গে সম্পর্কিত ছিল না। ভিতরে যে মনোনয়ন জমা দেওয়ার কথা ছিল, তা শান্তিপূর্ণ ভাবে হয়েছে। কোনও ছাত্রের সঙ্গে ছাত্রের মারামারি হয়নি। অধ্যাপক, শিক্ষাকর্মী বা অধ্যক্ষ কারও হেনস্থা হয়নি।” কিন্তু অভিজ্ঞ শিক্ষকেরা অন্য কথা বলছেন। তাঁদের মতে, কলেজ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সর্বত্রই গোলমাল বাধছে। তাই ক্যাম্পাসে পড়াশোনার পরিবেশ বজায় রাখতে তা বন্ধ রাখা হোক। এ নিয়ে রাজ্য সরকার কী ভাবছে? ব্রাত্যবাবু জানান, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেই যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার নেওয়া হবে। তিনি বলেন, “আমরা সব তরফের মত খতিয়ে দেখছি। বিরোধী মতামতও গুরুত্ব দিয়ে শোনা হচ্ছে। সব দেখে, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাতে পারব।” |