তদন্তের দায়িত্বে সিআইডি কেন, শুরু জল্পনা
গার্ডেনরিচে পুলিশ-খুনের তদন্তভার কেন কলকাতা পুলিশের হাত থেকে নিয়ে সিআইডি-কে দেওয়া হল এই প্রশ্নেই এখন তোলপাড় রাজ্য প্রশাসন।
তা হলে কি কলকাতা পুলিশের উপরে আস্থা রাখতে পারলেন না মুখ্যমন্ত্রী? না, বেশি ভরসা রাখলেন রাজ্য পুলিশের উপরে? নাকি, সিআইডি-র ‘হিমঘরে’ পাঠিয়ে দেওয়া হল পুলিশ-খুনের তদন্ত?
উত্তরে উঠে এসেছে একাধিক মত। এবং সেই উত্তর দিতে গিয়ে দ্বিধাবিভক্ত রাজ্যের পুলিশ কর্তারাই। এক পক্ষ বলছেন, গার্ডেনরিচে অশান্তির শুরুতে উপযুক্ত ব্যবস্থা না-নেওয়ার কারণেই সিপি-র পদ থেকে সরতে হল রঞ্জিত পচনন্দাকে। এবং সেই ‘নিষ্ক্রিয়তা’র খেসারত দিতে হল কলকাতা পুলিশকেও। তাঁদের বক্তব্য, যে কোনও জটিল তদন্তের কিনারা করার যে সুনাম কলকাতা পুলিশের ছিল, সেই গর্বে আঘাত হানলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী। ‘নিরপেক্ষ’ তদন্তের স্বার্থেই তিনি গার্ডেনরিচ-কাণ্ডের তদন্তভার কলকাতা পুলিশের হাত থেকে তুলে নিলেন বলে ওই পুলিশ কর্তাদের অভিমত।
মুখ্যমন্ত্রীর সিদ্ধান্তকে অবশ্য এতটা সরল ভাবে দেখতে রাজি নন পুলিশ কর্তাদের অন্য অংশ। তাঁদের মতে, সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত নতুন পুলিশ কমিশনার সুরজিৎ করপুরকায়স্থকে কিছুটা সময় (ব্রিদিং স্পেস) দিতেই সিআইডি-কে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হল। যে দফতরের দায়িত্বে মুখ্যমন্ত্রীর অত্যন্ত আস্থাভাজন শিবাজি ঘোষ। ফলে গার্ডেনরিচ কাণ্ডের তদন্তও মুখ্যমন্ত্রীর নিয়ন্ত্রণে রইল বলে পুলিশ কর্তাদের ওই অংশের মত।
সুরজিৎ বাম আমলেই এডিজি-র (আইন-শৃঙ্খলা) দায়িত্ব নিয়েছিলেন। নতুন সরকারে, এমনকী, পুলিশ কমিশনার হওয়ার আগের দিন পর্যন্ত ছিলেন ওই পদেই। রাজ্য প্রশাসনের একাংশ বলছেন, ক্ষমতা বদলের পরে ক্রমেই তিনি নতুন মুখ্যমন্ত্রীর আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন। এসপি বদলি থেকে অপরাধের তথ্যপঞ্জি তৈরি সব কাজেই তাঁর ডাক পড়ত মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে। লোবা থেকে তেহট্ট, কিংবা মগরাহাট, নতুন সরকারের আমলে যত গুলি চালনার ঘটনা ঘটেছে, মুখ্যমন্ত্রী সুরজিৎকেই তদন্তের ভার দিয়েছেন। এবং একটা রিপোর্টও সরকারকে ‘অস্বস্তিতে’ ফেলেনি বলে ওই পুলিশ কর্তাদের মত। নতুন ক্ষমতায় গিয়ে তিনি যাতে গোড়াতেই ‘অস্বস্তিতে’ না পড়েন, তাই সুরজিৎকে নিজের বাহিনী ঢেলে সাজার সুযোগ দেওয়া হল, এমনটাই মনে করছেন রাজ্য প্রশাসনের একাংশ।
পুলিশ মহলের অন্দরের খবর, কলকাতার পুলিশ কমিশনার পদ থেকে রঞ্জিতকুমার পচনন্দাকে সরানোর বিষয়টি কিছু দিন ধরেই মুখ্যমন্ত্রীর ভাবনায় ছিল। গার্ডেনরিচ-কাণ্ড ভাবনার বাস্তবায়নকে ত্বরান্বিত করল বলে মনে করছেন পুলিশ কর্তাদের একাংশ। প্রশাসনের বহু কর্তা বলছেন, পচনন্দার কাজ ‘মনঃপূত’ হচ্ছিল না বলে মাস নয়েক আগে সুরজিতের ব্যাচেরই অফিসার শিবাজিকে স্পেশাল সিপি হিসেবে কলকাতা পুলিশে নিয়ে আসেন মুখ্যমন্ত্রী। তার পর থেকে কলকাতা পুলিশ সংক্রান্ত যে কোনও বিষয়ে কথা বলার জন্য তাঁকেই ডাকা হত মহাকরণে। এমনকী, পুলিশকর্তাদের সঙ্গে একান্ত বৈঠকে শিবাজিই পরবর্তী সিপি হবেন বলে সঙ্কেত গিয়েছিল কলকাতা পুলিশে।
কিন্তু পুজোর আগে থেকেই শিবাজি সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রীর মনোভাব একটু শীতল হতে থাকে। পুলিশের একাংশের খবর, শিবাজির সঙ্গে লালবাজারের অফিসারদের ‘বনিবনা’ হচ্ছে না, এমন কথাও মুখ্যমন্ত্রীর কানে যায়। এমনকী গত পুজোয় এন্টালিতে একটি গণ্ডগোল সামাল দেওয়ার সময় শিবাজির কাজে তৎপরতার অভাব ছিল বলে মনে করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সব মিলিয়ে শিবাজিকে মহাকরণে ডেকে পাঠিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানান, সিআইডি-র এডিজি করে তাঁকে পাঠানো হবে ভবানী ভবনে।মুখ্যমন্ত্রীর সেই নির্দেশ মেনে নেন সুরজিতের ‘ব্যাচ মেট’। তবে কমিশনার না-করলেও শিবাজির উপরে মুখ্যমন্ত্রীর আস্থা পুরোপুরি কমেনি। মমতার ঘনিষ্ঠ মহলে বরং এটাই সকলে জানেন যে, শিবাজি ঘোষ এখনও মুখ্যমন্ত্রীর ‘কাছের অফিসার’। গাডের্নরিচে পুলিশ-খুনের তদন্তভার তাঁর হাতে দেওয়া সেই তথ্যকেই মজবুত করল বলে মত প্রশাসনের বহু অফিসারের।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.