বরাকরের ধসপ্রবণ এলাকায় পাকা বাড়ি বা বহুতল নির্মাণের কোনও নকশা অনুমোদন করবে না কুলটি পুরসভা। সম্প্রতি শহরবাসীর উদ্দেশ্যে এরকম একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছেন পুরসভার চেয়ারম্যান। দেরিতে হলেও পুর-কর্তৃপক্ষের যে বোধোদয় হয়েছে এতেই স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন বরাকরবাসী। অবশ্য স্থানীয় বাসিন্দারা এমনও অভিযোগ তুলেছেন যে, অতীতেও ধসপ্রবণ এলাকায় বহুতল নির্মাণে জেলা প্রশাসন নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। কিন্তু তবুও কুলটি পুর-কর্তৃপক্ষ সে সবে আমল দেননি। তবে এ বার সেরকম কিছু হবে না বলেই দাবি পুর-কর্তৃপক্ষের।
কুলটির পুরপ্রধান তথা এলাকার বিধায়ক উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়ের স্বাক্ষর করা এই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, বরাকর স্টেশন রোড এলাকায় ঘনঘন ধস নামছে। বসবাস বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। এ অবস্থায় এই অঞ্চলে নতুন দালান বা পাকা বাড়ি নির্মাণের জন্য কোনও রকম নকশা অনুমোদন করা হবে না। ইতিপূর্বে যে সব নকশা অনুমোদন হয়েছে সেগুলিও বাতিল বলে গণ্য করা হবে। পুরপ্রধান জানান, ২০০৭ সালের ১৩ মে রাজ্য সরকার, বিসিসিএল কর্তৃপক্ষ ও ডিজিএমএস একটি বিশেষ বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানায়, বরাকরের স্টেশন রোড অঞ্চল ধসপ্রবণ, এখানে বসবাসযোগ্য দালান ও বহুতল নির্মাণ বিপজ্জনক। স্বভাবতই এই এলাকায় বহুতল বা পাকা নির্মাণের অনুমতি দেওয়া সম্ভব নয়। |
তবে এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, ২০০৭ সালে রাজ্য সরকার ও খনি কর্তৃপক্ষের জারি করা ওই বিজ্ঞপ্তির পরেও বরাকর স্টেশন রোডের ধসপ্রবণ এলাকায় একাধিক দালান ও বহুতল তৈরি হয়েছে। এমনকী পুর কর্তৃপক্ষের জারি করা সাম্প্রতিক বিজ্ঞপ্তির আগে পর্যন্তও নতুন নতুন নির্মাণ হয়েছে এখানে। পুর কর্তৃপক্ষ কোনও নজরই দেননি বলে অভিযোগ তাঁদের। এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে পুরসভার নকশা অনুমোদন দফতরের চেয়ারম্যান পারিষদ সুজিত রায় বলেন, “গত বছরের ডিসেম্বরেও দালান নির্মাণের নকশা অনুমোদেন করা হয়েছে। ২০০৭ সালে রাজ্য সরকার ও খনি কর্তৃপক্ষ যে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল তা আমরা জানতাম না।” অথচ পুরপ্রধান তথা বিধায়ক উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় স্পষ্ট জানান, সাম্প্রতিক যে বিজ্ঞপ্তি তিনি জারি করেছেন তা ২০০৭ সালের ওই বিজ্ঞপ্তির ভিত্তিতেই। এ নিয়ে পুরসভায় অস্বচ্ছতার অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁদের দাবি, অবিলম্বে এই অঞ্চলে বহুতল নির্মাণের উপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি করতে হবে। পুরপ্রধান বলেন, “আমি নিজে খোঁজখবর করব। কোথাও কোনও অস্বচ্ছতা থাকলে তা কঠোর হাতে দমন করব।”
খনি কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসনিক আধিকারিকেরাও মনে করেন, এ অবস্থায় এলাকায় বহুতল নির্মাণ বা পাকা দালান নির্মাণ অত্যন্ত বিপজ্জনক। জানুয়ারি মাসের ১৮ ও ২৫ তারিখেও প্রায় একই জায়গায় বিপজ্জনক ধস নামে। আশেপাশের এলাকায় ফাটল ধরে। ফাটল ধরে বেশ কয়েকটা বাড়িতেও। বিশেষজ্ঞদের কথায়, এখানে মাটির তলার কয়লার স্তর কেটে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু ফাঁকা জায়গা বালি দিয়ে ভরাট করা হয়নি। ফলে ভূগর্ভস্থ অংশ ফাঁপাই রয়ে গিয়েছে। তাই মাটির উপরের অংশে চাপ যত বাড়ছে এলাকায় ততই ধস নামছে ও ফাটল দেখা দিচ্ছে। |