উত্তরবঙ্গের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায় বেড়ে চলা সংঘর্ষ ও গুলিতে মৃত্যুর ঘটনায় উদ্বিগ্ন কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন দফতরের প্রতিমন্ত্রী দীপা দাশমুন্সি। পরিস্থিতি নিয়ে তিনি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবেন। বুধবার উত্তর দিনাজপুরের হেমতাবাদ ব্লকের মকরহাট এলাকায় ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া মুসলিমপাড়া ঘুরে দেখার সময় কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী একথা জানান। তিনি বলেন, “সীমান্ত সংলগ্ন এলাকার গরিব বাসিন্দারা নিরাপত্তার অভাববোধ করছে। আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী কলকাতায় আসছেন। তাঁকে ওই সমস্যার কথা জানাব।”
কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী এ দিন গত সোমবার মুসলিমপাড়া এলাকায় বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডের (বিজিবি) গুলিতে মৃত চাষি আব্দুল ফরিদের বাড়িতে যান। পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন। তাঁদের হাতে ২০ হাজার টাকা আর্থিক সাহায্য তুলে দেন। দীপাদেবীর সঙ্গে ছিলেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি মোক্তার আলি সর্দার সহ প্রশাসনের কর্তারা। জেলাপরিষদের তরফে মৃত চাষির পরিবারের সদস্যদের হাতে পৃথকভাবে ১০ হাজার টাকা তুলে দেওয়া হয়। এ দিন আব্দুলের স্ত্রী সারিফুল খাতুন কান্নায় ভেঙে পড়ে মন্ত্রীর কাছে জানতে চান, “তিন নাবালক ছেলের কী হবে!” ওই সময় নগরোন্নয়ন দফতরের প্রতিমন্ত্রী সারিফুল খাতুনকে আশ্বাস দেন তিন ছেলেকে হস্টেলে রেখে সরকারি খরচে পড়াশোনার ব্যবস্থা করা হবে। পরে তিনি সীমান্তের বিএসএফ কর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন। দীপা দেবী বলেন, “সমস্ত ঘটনা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানাব।” |
সোমবার আব্দুল ফরিদ নামে ওই চাষি সীমান্তের কাঁটাতারের ওপারে ভারতীয় ভূখন্ডে নিজের জমিতে সার দিতে যান। অভিযোগ, ওই সময় বিজিবি-র তিন জওয়ান ভারতীয় ভূখন্ডে ঢুকে চাষির ২৫ কেজি সার ছিনতাইয়ের চেষ্টা করে। বাঁধা দেওয়ায় চাষির সঙ্গে বিজিবির জওয়ানদের সংঘর্ষ হয়। জওয়ানরা তিন রাউন্ড গুলি চালায়। মারা যান আব্দুল। জখম হয় আব্দুলের ভাইপো সুর আলম।
এ দিন মন্ত্রীকে পেয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, মকরহাট এলাকায় প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত। কাঁটাতারের ওপারে ভারতীয় ভূখন্ডে এলাকার প্রায় দেড় হাজার বাসিন্দার এক হাজার বিঘা কৃষিজমি রয়েছে। দিনে তিনবার বিএসএফের জওয়ানরা সীমান্তের গেট খুলে দেয়। তখন চাষিরা জমিতে চাষের কাজ করে সন্ধ্যার আগে ফিরে আসেন। বাসিন্দাদের অভিযোগ, বিএসএফ নিয়মিত সীমান্তের গেট খোলে না। চাষিদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে। রাতের অন্ধকারে বাংলাদেশের দুষ্কৃতীরা বিজিবির মদতে খেতের ফসল লুঠ করে পালায়। কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী বলেন, “পেটের টানে চাষিদের সীমান্তের কাঁটাতারের ওপারে চাষ করতে যেতে হয়। কিন্তু বিজিবির আতঙ্কে তাঁরা চাষ করতে যেতে পারছেন না। রাতের অন্ধকারে গরিব চাষিদের ফসল লুঠ হয়ে যাচ্ছে। বিএসএফের বিরুদ্ধেও বাসিন্দাদের ক্ষোভ রয়েছে।”
|