ইংরেজবাজার বিধানসভার উপনির্বাচনের মুখে মালদহের কালিয়াচকের রাজনগর এলাকায় হদিস মিলল প্রচুর অস্ত্র-সহ একটি অস্ত্র কারাখানার। বুধবার ভোর রাতে পুলিশ রাজনগরের নতুন তিনঘরিয়া গ্রামে হানা দিয়ে ওই অস্ত্র কারখানার সন্ধান পায়। সেখানে উদ্ধার হয় ৯ টি মাসকেট, একটি পাইপগান, ১৫ রাউন্ড গুলি, প্রায় ৪০টি আগ্নেয়াস্ত্র বানানোর যন্ত্রাংশ। ওই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ তিন জনকে গ্রেফতার করে। পুলিশ জানায়, ধৃতদের দু’জনের একই নাম। শ্যামল মন্ডল। অন্য জনের নাম দিলীপ মণ্ডল। বিভিন্ন মহলের অভিযোগ, ধৃতদের মধ্যে বেগুনটোলা গ্রামের বাসিন্দা শ্যামল মণ্ডল তৃণমূলের সমর্থক। স্বামীকে ছাড়াতে এ দিন তাঁর স্ত্রীকে কালিয়াচক তৃণমূল দফতরে ঠায় বসে থাকতে দেখা গিয়েছে।
যদিও ঘটনার সঙ্গে তৃণমূল সমর্থকের জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন দলের জেলা সভাপতি তথা রাজ্যের নারী ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র। তিনি বলেন, “পুলিশ যাদের ধরেছে তাদের মধ্যে আমাদের দলের কোনও কর্মী বা সমর্থক নেই। শুনেছি একজন কংগ্রেসের সমর্থক।” তবে কেন ধৃতকে ছাড়াতে তাঁর স্ত্রী কালিয়াচক তৃণমূল অফিসে ঠায় বসেছিলেন? উত্তরে জেলা তৃণমূল সভাপতি বলেন, “যে কেউ পার্টি অফিসে যেতে পারেন। কিন্তু সেই কারণেই তিনি আমাদের কর্মী এটা কে বলেছে! আমাদের দলের কেউ ধৃতদের ছাড়াতে থানায় যায়নি।” কিন্তু দলের জেলা সভাপতি যাই বলুক না কেন কালিয়াচক থানার পাশে তৃণমূল দফতরে বসে ধৃত শ্যামল মন্ডলের স্ত্রী চন্দনা মণ্ডল বলেন, “আমার স্বামী তৃণমূলের সমর্থক। আমি নিজে ওই দল করি। তাই স্বামীকে ছাড়াতে পার্টি অফিসে ছুটে এসেছি।” |
এ দিকে কংগ্রেস নেতৃত্ব অভিযোগ করেন, ইংরেজবাজার উপনির্বাচনে সন্ত্রাস সৃষ্টির জন্য তৃণমূলের মদতে ওই অস্ত্র কারখানা চলছিল। জেলা কংগ্রেস সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যপ্রতিমন্ত্রী আবু হাসেম খান চৌধুরী বলেন, “ষড়যন্ত্র ফাঁস হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়ে এখন কংগ্রেসের ঘাড়ে দোষ চাপানো হচ্ছে। তৃণমূলের সন্ত্রাস সৃষ্টির ওই পরিকল্পনার কথা নির্বাচন আধিকারিককে জানানো হয়েছে।” পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, নির্বাচনের আগে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে বিভিন্ন এলাকায় তল্লাশি চালাতে গিয়ে এ দিন ওই অস্ত্র কারখানার হদিস মিলেছে। জেলা পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “মঙ্গলবার রাত থেকে কালিয়াচক থানার পুলিশ তল্লাশি চালানোর সময় রাজনগর এলাকায় একজনের বাড়িতে অস্ত্র তৈরির কারাখানার খোঁজ পায়। প্রচুর অস্ত্র ও অস্ত্র তৈরির যন্ত্রপাতি উদ্ধার হয়েছে।”
পুলিশ সুপার জানান, প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, অনেকদিন থেকে ওই অস্ত্র তৈরির কারখানা চলছে। ওই কারবারে আরও কে জড়িত রয়েছে। তৈরি অস্ত্রের ক্রেতা কে। কোথায় বিক্রি করা হত তার খোঁজ চলছে। পুলিশ জানায়, ধৃত শ্যামল মন্ডল, দিলীপ মন্ডলের বাড়ি নতুন তিনঘরিয়া গ্রামে। বেগুনটোলা গ্রামের বাসিন্দা শ্যামলবাবু পেশায় মুদি দোকানদার। ভোর রাতে গ্রেফতারের পর থেকে ওই শ্যামল মণ্ডলের স্ত্রী স্বামীকে ছাড়াতে কালিয়াচক-১ নম্বর ব্লক তৃণমূল কংগ্রেস পার্টি অফিসে ছুটে যান। |
কালিয়াচকের এক দিকে বাংলাদেশ সীমান্ত। অন্যদিকে ঝাড়খণ্ড। ঘটনার প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে, ঝাড়খণ্ডের মুঙ্গের থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে একদল দুষ্কৃতী কলিয়াচকে বেআইনি অস্ত্র তৈরি করছে। মাসকেট, পাইপগান-সহ বিভিন্ন পিস্তল তৈরি হচ্ছে। সেখান থেকে অস্ত্র মালদহ, মুর্শিদাবাদের পাশাপাশি সীমান্ত টপকে বাংলাদেশেও পাচার হচ্ছে। |