হিরে থেকে কস্টিউম জুয়েলারি, ভালবাসা দিবসে জমেছে ব্যবসা
জেলে বন্দি ভ্যালেন্টাইনস জেলারের মেয়েকে ‘ফ্রম ইওর ভ্যালেন্টাইনস’ লেখা গ্রিটিংস কার্ড দিয়েছিলেন। সেটাই প্রথম ভ্যালেন্টাইনস শুভেচ্ছাপত্র। যা আজও লেখা হয়। লেখে আম বাঙালিও।
এখন দেশ বিদেশের বড় শহরগুলির মতো এই দিনে নতুন সাজে সেজে উঠছে উত্তরের শহরগুলিও। জলপাইগুড়ির বাসিন্দা বর্তমানে কলকাতায় কর্মরত বেসরকারি সংস্থার ডেপুটি ম্যানেজার বাসব দত্ত বলেন, “এটা ঠিক ভালবাসা জানানোর বিশেষ কোনও দিন বা সপ্তাহ নেই। তবু মানুষের মধ্যে যে ভাবে হিংসা, বিদ্বেষ, বিভেদ বেড়ে চলেছে, সেখানে ভ্যালেন্টাইনস ডে যেন শান্তির দূত। প্রিয় নারী বা পুরুষ নয়। ওই বিশেষ দিনে যে কাউকে ভালবাসার বার্তা দেওয়া যেতে পারে।” যদিও মালবাজার কলেজের ছাত্র হিমবন্ত সাহা অন্য কিছু ভাবছেন। ওই বিশেষ দিনটিতে অনেক কিছু করার থাকে। যেমন, উপহার দেওয়া, সিনেমা দেখা, খাওয়াএকটা দিন উদ্যাপন।
কী ভাবে এল ওই দিন! সময়টা তৃতীয় শতাব্দী। রোমে তখন সম্রাট ক্লডিয়াস টু-এর রাজত্ব। তিনি মনে করতেন অবিবাহিত ছেলেরা উপযুক্ত সৈনিক হতে পারে। তাই নিষিদ্ধ করলেন তরুণদের বিয়ে। সম্রাটের ওই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করলেন এক সন্ন্যাসী। তিনি লুকিয়ে প্রেমিক প্রেমিকাদের বিয়ের ব্যবস্থা করতে শুরু করলেন। ঘটনার কথা জানাজানি হলে সন্ন্যাসীকে ধরে মৃত্যুদন্ড দেন সম্রাট। ওই সন্ন্যাসীর নাম!—সন্ত ভ্যালেন্টাইন।
উপহারের পসরা জলপাইগুড়িতে। ছবি: সন্দীপ পাল।
শিলিগুড়ির বাসিন্দা বর্তমানে কলকাতার একটি বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত শঙ্খদীপ দত্ত ওই দিনে প্রেমের প্রস্তাব দেন স্ত্রী বিজুরিকাকে। মাধ্যম ছিল ফেসবুক। বিজুরিকাকে ভাল লেগেছিল, কিন্তু বলি বলি করেও অনেকদিন বলে উঠতে পারেননি সে কথা। এর পরে এক ভ্যালেন্টাইনস ডে ফেসবুকে তাঁদের মিলিয়ে দেয়। তাই প্রতি বছর ওই দিনটিতে কিছু একটা করার পরিকল্পনা থাকে ওঁদের। ঠিক করেছেন এ বার সেবক রোডের একটি রোস্তোরাঁয় ডিনার সারবেন। অন্য বার কলকাতায় কাটত। ছুটি মেলায় এ বার সটান নিজের শহর শিলিগুড়িতে।
জলপাইগুড়ির বাসিন্দা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক সাহিত্যের ছাত্রী রোশনী সরকারের গলায় ভিন্ন সুর। তাঁর কথায়, “উপহার দেওয়া বা নেওয়ার কোনও দিনক্ষণ নেই। বিশেষ মানুষটির জন্য বিশেষ মুহূর্ত এমনিই তৈরি হতে পারে। তবে এটা ঠিক ভ্যালেন্টাইনস ডে-র জন্য বিশেষ প্রত্যাশা থাকেই।”
সেই উপলক্ষেই সেজে উঠেছে কার্ড থেকে উপহার সামগ্রীর দোকানগুলি। একটি প্রখ্যাত গয়না প্রস্তুতকারী সংস্থার শিলিগুড়ি শোরুমের ম্যানেজার সৌমেন রায় বলেন, “অন্য দিনের তুনায় ভ্যালেন্টাইনস ডে উপলক্ষে বিক্রি কয়েকগুণ বেড়ে যায়। ক্রেতা টানতে থাকে বিশেষ ছাড়ের ব্যবস্থা। বিশেষ মডেলের গয়নাও থাকে।” এ বার বাজারে এসেছে ১ হাজার ৯৮০ টাকায় হিরের পেনডেন্ট, সোনার লকেটযুক্ত চেনের দাম ৩ হাজার ৯০০ টাকা। বাজারে নতুন ‘ট্রেন্ড’ কস্টিউম জুয়েলারি। সেই সম্ভারও রয়েছে। বাজার তাতাতে ‘ক্যাচ লাইন’ হয়েছে ‘চারদিকে শুধুই ভালবাসা’। এমনকী কয়েক মাস আগে থেকে কেনাকাটার সুযোগ সাধ্যের মধ্যে এনে দিতে নানা ‘মাস্টার প্ল্যান’ বাজারে ছেড়েছে বিভিন্ন সংস্থা। যেমন, মাসে টাকা রাখলে বছর পরে মিলবে পছন্দের গয়নাটি। ভ্যালেন্টাইনস ডে-র মধ্যে ওই সুযোগ নিলে মিলবে বিশেষ উপহার।
শিলিগুড়ির হাকিমপাড়ার বাসিন্দা সমীর সরকার পঁচাত্তর বছরের মা অঞ্জলি দেবীকে হিরের পেনডেন্ট উপহার দিচ্ছেন। সমীরবাবু বলেন, “জন্মদিনে অথবা মাদার্স ডে-র সময় উপহার দেওয়া হয়। কিন্তু এ দিনের আলাদা গুরুত্ব।” জলপাইগুড়ির কদমতলার একটি উপহার সামগ্রীর দোকানের মালিক রণজিৎ সাহা জানান, বেশি বিক্রি হয় হার্ট চকোলেট, ফুলদানি, ফটোফ্রেম। এ বার চাহিদা বেড়েছে ‘আই লাভ ইউ’ মিউজিক শোনা যাবে এমন কার্ডের। ই-মেল বা ফেসবুকে ডিজিট্যাল কার্ডের ব্যবহারও বেড়ে যায়। দূরের মানুষকে কাছে আনার এমন প্রয়াস সোস্যাল নেটওয়ার্কে সৌজন্যে পাওয়া বলে জানান তরুণ স্বাস্থ্য কর্মী শুকদেব চন্দ। জলপাইগুড়ির মার্চেন্ট রোডের কার্ড ব্যবসায়ী ভূমিকা দে বলেন, “সাবেকি গ্রিটিংস কার্ডও পাল্লা দিয়ে চলেছে।” শিলিগুড়ির হাসমি চক মোড় সংলগ্ন ফুল ব্যবসায়ী নরেন দত্ত জানান, স্কুলের ছাত্রীরা এই দিনে প্রচুর ফুল কিনে নিয়ে যায়। ওরা বেশি চায় ডাচ গোলাপ, জারবেরা ইত্যাদি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.