|
|
|
|
শাসকদলের সঙ্গে বিরোধ, সরানো হল বিডিওকে
দিবাকর রায় • কলকাতা |
শাসক দলের রোষে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হল এক বিডিও-কে। মঙ্গলবার বিকেলে তৃণমূলের ঘাঁটি পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দকুমারের বিডিও শীর্ষেন্দু সাহাকে সরিয়ে দেওয়া হয়। শীর্ষেন্দুবাবুকে ‘কম্পালসারি ওয়েটিং’য়ে পাঠানো হয়েছে। অভিযোগ, নন্দকুমারের তৃণমূল বিধায়ক সুকুমার দে ও পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বাবুলাল মণ্ডলের সঙ্গে কিছু দিন ধরেই বিরোধে জড়িয়েছিলেন শীর্ষেন্দুবাবু।
পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তৃণমূলের বাবুলাল মণ্ডল বুধবার দুপুরে বলেন, “গত কাল নতুন বিডিও-র কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করা হয়েছে। এটা প্রশাসনিক নির্দেশ বলেই জানি। ওই বিডিওর সময়ে পঞ্চায়েতের কাজে গতি ছিল না। প্রধানেরা বেশি কাজ করতে চাইছিলেন। সেই কাজের জন্য ঠিক মতো সাহায্য পাচ্ছিলেন না।”
পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি এ কথা বললেও বিডিও-র ঘনিষ্ঠেরা এ কথা মানতে নারাজ। তাঁদের বক্তব্য, এর আগে ওই পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ছিলেন বর্তমান বিধায়ক সুকুমার দে। তিনি তৃণমূলের অন্দরের গোষ্ঠীবিন্যাসে তমলুকের সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। নিজের পছন্দের বাবুলাল মণ্ডলকে সুকুমারবাবুই পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি করেছেন বলে দলীয় সূত্রে খবর। বিডিও শীর্ষেন্দুবাবুর ঘনিষ্ঠেরা জানিয়েছেন, গত কয়েক বছরে পঞ্চায়েতের নানা কাজ খতিয়ে দেখতে গিয়ে বেশ কিছু অনিয়ম খুঁজে পান তিনি। সে কাজের বৈধ কাগজপত্র খুঁজতে গেলেই বিরোধ তৈরি হয়। বিধায়ক সুকুমারবাবুর সঙ্গে বিডিও শীর্ষেন্দুবাবুর বিরোধ প্রকাশ্যে আসে। ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পের সহায়ক নিয়োগ নিয়ে তা চরম আকার নেয়।
জেলা প্রশাসনের এক কর্তা জানিয়েছেন, দু’তরফের বিরোধ মেটাতে জেলা প্রশাসন বেশ কয়েক বার আলোচনায় বসে। বিধায়কের তরফে জেলাশাসকের কাছেও অভিযোগ জানানো হয়। তবে তা মেটেনি। বাবুলালবাবু বলেন, “১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে এক জন স্থায়ী অফিসার নিযুক্ত হওয়া সত্ত্বেও আগের চুক্তিতে নিযুক্ত হওয়া আধিকারিককে নবীকরণ করিয়েছিলেন এই বিডিও। এর ফলে সরকারি রাজস্বের অপচয় হচ্ছিল।” এ ছাড়া শীর্ষেন্দুবাবুর পারিবারিক বিষয়ে সমস্যা হচ্ছিল বলে জানিয়েছেন তিনি। তবে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির অভিযোগ নিয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি শীর্ষেন্দুবাবু। তিনি বলেন, “সরকারি কর্মচারী। নির্দেশ হাতে পেয়ে চার্জ বুঝিয়ে দিয়েছি।”
জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, মঙ্গলবার খেজুরির শেরখাঁচকে সরকারি সভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হাজির ছিলেন। সেই সভায় সাংসদ শুভেন্দুবাবু ও বিধায়ক সুকুমার দে-ও ছিলেন। সেখানেই সুকুমারবাবু বিষয়টি ফের তোলেন। তারপরেই তড়িঘড়ি জেলা প্রশাসনের তরফে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
সিপিএমের পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য নিরঞ্জন সিহি বলেন, “এর মধ্যে নতুন কিছু নেই। এর আগে আইএএস এবং আইপিএসদের কম্পালসারি ওয়েটিংয়ে পাঠানো হয়েছে। তৃণমূলের স্বেচ্ছাচারিতা আর তোলাবাজির প্রতিবাদ করলেই সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কেউ কাজ না পারলে তাঁকে অন্য দায়িত্বে পাঠানো যেতে পারে। এ ভাবে কম্পালসারি ওয়েটিংয়ে পাঠানোর কোনও মানে থাকতে পারে না।” এর ফলে প্রশাসনের মনোবল ভেঙে যাবে বলে মনে করেন তিনি। জেলা প্রশাসনের কর্তারা অবশ্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিঘা সফর নিয়ে ব্যস্ত। বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে তাঁরা মুখ খুলতে চাননি। |
|
|
|
|
|