|
|
|
|
ফাঁকা মাঠে সিপিএমকে বিঁধলেন বেচারাম মান্না
নিজস্ব সংবাদদাতা • জামবনি |
পঞ্চায়েত নির্বাচনে ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’ ও ‘খুনি’ সিপিএমকে ঝাঁটা মেরে তাড়ানোর হুঁশিয়ারি দিলেন কৃষি প্রতিমন্ত্রী বেচারাম মান্না। জঙ্গলমহলের সিপিএম নেতা-কর্মীদের বাড়ি থেকে অস্ত্র উদ্ধার করার জন্য দলীয় সভামঞ্চ থেকে পুলিশকে কার্যত নির্দেশও দিলেন তিনি। জঙ্গলমহলে এ দিন বেচারামবাবুকে সামনে রেখেই কার্যত ‘ফাঁকা মাঠে’ পঞ্চায়েতের প্রচার শুরু করল তৃণমূল।
বুধবার বিকেলে জামবনি ব্লকের বাহিরগ্রামে ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের উদ্যোগে আয়োজিত এক কৃষক সমাবেশের মুখ্য বক্তা ছিলেন বেচারামবাবু। কিন্তু তৃণমূলের ঘোষিত ওই সমাবেশে মেরেকেটে এ দিন হাতে গোনা কিছু লোক হয়েছিল। সভায় লোকজন না-আসায় প্রায় ঘণ্টাখানেক বেচারামবাবুকে মঞ্চ লাগোয়া মাঠে বসে থাকতে হয়। শ’তিনেক লোক হওয়ার পর তিনি মঞ্চে ওঠেন। পরে বেলিয়াবেড়ার মহাপালেও একটি সভা করেন বেচারামবাবু। সেখানে অবশ্য কিছু লোক হয়েছিল। |
জামবনির দলীয় সভায় রাজ্যের কৃষি প্রতিমন্ত্রী। —নিজস্ব চিত্র। |
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদ-সহ জঙ্গলমহলের অধিকাংশ পঞ্চায়েত সমিতি ও গ্রাম পঞ্চায়েতগুলি সিপিএমের দখলে রয়েছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে জঙ্গলমহলে বামেরা ফের সক্রিয় হচ্ছে। সিপিএমের সভা-মিছিলে ধীরে ধীরে লোকজন বাড়ছে। যা শাসক দল তৃণমূলের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে। জামবনি পঞ্চায়েত সমিতির ক্ষমতায় রয়েছে সিপিএম। এই ব্লকে তৃণমূল সাংগঠনিক প্রভাব বাড়ানোর চেষ্টা করলেও দলের একাধিক গোষ্ঠীর মধ্যে মতপার্থক্য প্রকট। এ দিন বেচারামবাবুর সভায় লোক না হওয়ার পিছনে দলীয় গোষ্ঠী কোন্দলই কার্যত প্রকাশ্যে এসে পড়েছে।
কম লোক হলেও সভায় যথেষ্টই আক্রমণাত্মক ছিলেন বেচারামবাবু। সিপিএমের দুর্নীতির উদাহরণ দিতে গিয়ে বলেন, “পঞ্চায়েত নির্বাচনে ওদের মুড়ো ঝাঁটা মেরে তাড়াতে হবে। ওদের লালপতাকায় এখন কাস্তে হাতুড়ি মানায় না। পুঁজিপতিদের হাতে সিপিএম বিক্রি হয়ে গিয়েছে। ওরা দলীয় পতাকায় কাস্তে হাতুড়ির পরিবর্তে এখন ন্যানো গড়ির ছবি রাখুক।”
পুলিশের উদ্দেশে হুঁশিয়ারি দিয়ে বেচারামবাবু বলেন, “এখানে অনেক পদস্থ পুলিশ আধিকারিক রয়েছেন। তাঁদের বলছি, সিপিএমের নেতারা এখনও কেন ঘুরে বেড়াচ্ছে। ওদের বাড়ি থেকে অস্ত্র উদ্ধার করে, ওদের গ্রেফতার করুন।” উন্নয়নের প্রশ্নে কৃষিমন্ত্রীর সাফাই, “বাংলাকে সোনা দিয়ে মুড়ে দিতে পারব না, তবে রুপো দিয়ে মুড়ে দেব।” পঞ্চায়েত স্তরে কৃষি ও গ্রামোন্নয়নের ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগকে ফলাও করে প্রচার করেন কৃষি প্রতিমন্ত্রী। আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটে সিপিএমের হাতে থাকা পঞ্চায়েতগুলি তৃণমূল দখল করতে পারলে উন্নয়নের ক্ষেত্রে কল্পতরু হওয়ারও প্রতিশ্রুতি দেন বেচারামবাবু। তাঁর দেড় মাসের মন্ত্রীত্বে তিনি ১৬টি জেলায় ঘুরে কৃষকদের স্বার্থ সুনিশ্চিত করেছেন বলে দাবি করেন কৃষি প্রতিমন্ত্রী। বেচারামবাবু বলেন, “আমরা যদি ৩৪ বছরের অত্যাচারের প্রতিশোধ নিতাম, তাহলে সিপিএমের নেতা-কর্মীরা আর গ্রামে থাকতে পারতেন না। আমারা বদলা চাইনি বলেই এখনও সিপিএম নেতা-কর্মীরা পথে ঘাটে বেরোচ্ছেন, বাজার করতে যাচ্ছেন।”
সিপিএমের দখলে থাকা ঝাড়গ্রাম পঞ্চায়েত সমিতি ও গ্রাম পঞ্চায়েতগুলির বিরুদ্ধেও দুর্নীতি ও ব্যর্থতার অভিযোগে সরব হয়েছে তৃণমূল। এ দিন দুপুরে ঝাড়গ্রামের বিডিও-র কাছে সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পে বরাদ্দ টাকা যথাযথ খরচের দাবিতে দলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়ের নেতৃত্বে স্মারকলিপি দেয় তৃণমূল। রাজনৈতিক মহলের মতে, পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে বিরোধীদের দখলে থাকা পঞ্চায়েতগুলির উপর চাপ তৈরি করার জন্যই শাসক দলের নেতারা প্রশাসনিক মহলে স্মারকলিপি দেওয়ার কৌশল নিয়েছেন। |
|
|
|
|
|