কলকাতা লিগ: খেতাবের দৌড়ে লাল-হলুদ
‘জোড়া গোলাপ’ উপহার পেনের

ইস্টবেঙ্গল- ৪ (বরিসিচ, সঞ্জু, পেন-২)
কালীঘাট মিলন সঙ্ঘ- ০
খালি হাতে যুবভারতীর চতুষ্কোণে ঢুকলেন অসীম খিদে নিয়ে। বিরানব্বই মিনিটে বেরোলেন জোড়া ‘গোলাপ’ আর স্বস্তির হাসি সঙ্গে করে।
ভ্যালেনটাইন্স ডে-র চব্বিশ ঘণ্টা আগেই ‘গোলাপ’ উপহার দিলেন পেন ওরজি। ট্রেভর জেমস মর্গ্যানের জন্য ‘লাল গোলাপ’। ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের ‘হলুদ গোলাপ’। দু’টো অনবদ্য গোল যে ‘গোলাপ’-এর মতোই দেখাচ্ছে!
বুধবার যুবভারতীতে কলকাতা লিগে ফের পুরোনো পেনের স্মৃতি ভেসে উঠল। সেই ‘উইথ দ্য বল’ দৌড়, স্ন্যাচিং, ড্রিবল এবং সবচেয়ে আকর্ষণীয় লম্বা লম্বা স্ট্রাইডে বিস্তৃত এলাকা জুড়ে খেলা। ছোটখাটো চেহারার পেন এত মসৃণ ফুটবল খেললেন যে, আর কোনও ফুটবলারের দিকে চোখ বোলানোর সময়ই পাওয়া গেল না। স্বয়ং ইস্টবেঙ্গলের ব্রিটিশ কোচ বলছিলেন, “পেন খুব বড় মাপের ফুটবলার। কিন্তু ইদানীং ওর মধ্যে একটু আত্মবিশ্বাসের অভাব হচ্ছিল। আশা করি, এই ম্যাচের পরে ওকে আবার পুরোনো মেজাজেই পাওয়া যাবে।”
পেনের ‘ক্লাস’ লুকিয়ে আছে তাঁর দু’টো গোলের মধ্যেই। প্রথমটার সময় তাঁকে ঘিরে লম্বা লম্বা পায়ের জঙ্গল। কিন্তু সব বাঁধা-বিপত্তি কাটিয়ে গোল-সন্ধানী পেন যেন তাঁর লক্ষ্যে অটুট! প্রায় পঁচিশ গজ দূর থেকে নেওয়া বাঁ পায়ের ইনস্টেপে বাঁক খাওয়ানো শট নিমেষের মধ্যে জড়িয়ে যায় জালে। গ্যালারির দিকে দু’হাত তুলে সেই ‘হলুদ গোলাপ’ সমর্থকদের উৎসর্গ করলেন তিনি। আর ফ্রি কিক থেকে আমদানি করলেন মর্গ্যানের ‘লাল গোলাপ’। বিশ্বমানের গোল। হালকা একটা চিপ ঢেউয়ের মতো আছড়ে পড়ল কালীঘাটের গোলে। মজার ব্যাপার হল, পেনের ‘জোড়া গোলাপ’-এর আড়ালে বরিসিচ আর সঞ্জু প্রধানের গোল যেন ফিকে হয়ে গেল! ম্যাচ শুরুর আট মিনিটের মধ্যেই সুবোধের থ্রু থেকে ইস্টবেঙ্গলের হয়ে প্রথম খাতা খোলেন বরিসিচ। একটা করলেন, নষ্ট করলেন আরও তিনটে। গতি তো নেই-ই। সত্তর মিনিট যেতে না যেতেই হাঁপাচ্ছেন। আর সঞ্জু প্রধান? তাঁর গোলে কালীঘাটের গোলকিপার শুভম সেনের ‘অবদান’ অনস্বীকার্য। সঞ্জুর পঁয়ত্রিশ গজ দূর থেকে নেওয়া গড়ানো শট পায়ের তলা দিয়ে যে ভাবে গলালেন, তা দেখে ফের সন্দীপ নন্দীকে মনে পড়ে গেল। গত বছর কলকাতা লিগের ডার্বিতে এ ভাবেই ওডাফার শট গলিয়েছিলেন বতর্মান চার্চিল গোলকিপার।
‘প্রথম গোলাপ’

যুবভারতীতে পেনের গোল। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস
পেনের প্রত্যাবর্তনে মর্গ্যান তো বটেই, নাইজিরিয়ান মিডিও নিজেও স্বস্তিতে দম ফেলতে পারবেন। আই লিগের মাঝপথে ইস্টবেঙ্গলের ছন্দ পতনের জন্য সমালোচকদের একাংশ পেনকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছিলেন। পেন অবশ্য বললেন, “ঈশ্বর চাইছিলেন না বলে খেলতে পারছিলাম না। আজকে ঈশ্বর চাইলেন তাই একটা নয়, দু’টো গোল করলাম। আমার যে আত্মবিশ্বাস হারিয়ে গিয়েছিল, এই ম্যাচের পরে আবার সেটা ফিরে পেলাম। এখন অনেক হালকা বোধ করছি।” পেনের হালকা লাগলেও, ইস্টবেঙ্গলের ভারে দম ফেলতে পারল না কালীঘাট মিলন সঙ্ঘ! শুরুতে জোদিনলিয়ানার একটা শট পোস্টের গা ঘেঁসে বেরিয়ে যাওয়া ছাড়া আর কোনও প্রাপ্তি নেই। বাকি সময়টুকু যে পেন-সঞ্জুদের আক্রমণ সামলাতেই কেটে গেল। ডিফেন্সে কখনও সাত জন। কখনও আট। কিন্তু তা দিয়ে লাল-হলুদ ব্রিগেডকে থামানো যায়নি। উলটে বরিসিচ-মননদীপরা গোল নষ্ট না করলে আরও লজ্জা নিয়ে মাঠ ছাড়তে হত অরুণ ঘোষের দলকে।

ইস্টবেঙ্গল: গুরপ্রীত, সুনীল, নওবা, ওপারা, রবার্ট (সৌমিক), পেন, সঞ্জু, কেভিন (লালরিন্দিকা), সুবোধ, মননদীপ (বলজিৎ), বরিসিচ।

পয়েন্ট পেলেও বাজি হারলেন মর্গ্যান
কথায় বলে না কারও পৌষ মাস, তো কারও সর্বনাশ। পেনের উপহারের আড়ালে ক্ষতি হয়ে গেল ট্রেভর জেমস মর্গ্যানের। ম্যাচের শেষ মুহূর্তে যখন ফ্রি কিকের জন্য তৈরি হচ্ছেন নাইজিরিয়ান মিডিও, তখন রিজার্ভ বেঞ্চের ফুটবলারদের সঙ্গে পাঁচশো টাকার বাজি ধরে বসেন মর্গ্যান। পেন গোল করতে পারলে, প্লেয়ার্স ফান্ডে পাঁচশো টাকা জমা করবেন ইস্টবেঙ্গলের ব্রিটিশ কোচ। পেন না পারলে, ফুটবলাররা পাঁচশো টাকা দেবেন তাঁকে। কিন্তু পেনের চোখ-ধাঁধানো গোল ভ্যালেনটাইন্স ডে-র আগে পকেট হালকা করে দিল মর্গ্যানের। “হ্যাঁ মর্গ্যান একটা বাজি ধরেছিলেন শুনলাম। তবে মাত্র পাঁচশো টাকার? আমার ফ্রি কিকের জন্য অন্তত পাঁচ হাজার টাকা বাজি ধরা উচিত ছিল।” হাসতে হাসতে বলছিলেন পেন।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.