নির্বাচনপর্ব মিটে যাওয়ার পরদিনও রাভা-হাসোং এলাকা এবং কাছাড়ে শান্তি ফেরেনি। কাল রাতে নতুন করে হিংসা ছড়ায় গোয়ালপাড়ার পাঁচটি গ্রামে। চলে গুলি। সরকারি হিসাবে এখন অবধি সেখানে নিহতের সংখ্যা ১৯। বেসরকারি সুত্রে অবশ্য সংখ্যাটি কমপক্ষে ২১ বলে দাবি। কাছাড়ে, কাল রাতের সংঘর্ষে এক বিজেপি কর্মীর মৃত্যু হয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা দফয় দফায় চলে পথ অবরোধ। বিকেলে ফের কংগ্রেস-বিজেপি সংঘর্ষের পরে গুলি চলে। সিআরপি লাঠি চালায়। জখম হন ১৩ জন। সাংসদ কবীন্দ্র পুরকায়স্থের হাত ভেঙেছে বলে অ্ভিযোগ। তৃতীয় পর্যায়ের নির্বাচনে মাত্রাছাড়া হিংসায় লাগাম টানতে প্রশাসন ও পুলিশ ব্যর্থ হয়েছে মেনে নিয়ে আজপুরো ঘটনার সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ। গোয়ালপাড়া এলাকায় ৪০ কোম্পানি নিরাপত্তা বাহিনী রয়েছে। নেমেছে সেনা। এ দিন বিভিন্ন এলাকায় ফ্ল্যাগ করে সেনা জওয়ানরা। হাঙ্গামাকারীদের দেখা মাত্র গুলির আদেশ দেওয়া হয়েছে।
কাল দিনভর সন্ত্রাসের পরে বিকাল থেকে সেনা টহল শুরু হওয়ার পরে গোয়ালপাড়া সহ নামনি অসমে খানিকটা শান্তি ফিরেছিল। কিন্তু, রাতে ফের, রাভা বনাম অ-রাভা সংঘর্ষ শুরু হয়। কার্ফুর মধ্যেই দুষ্কৃতীরা গোবিন্দপুর, কৃষ্ণাইপাইকান, পাহাড়সিংহপাড়া, রাঙাগোড়া, বেকিপুলসহ কয়েকটি গ্রামে আগুন লাগিয়ে দেয়। দুষ্কৃতীদের গুলিতে সাতজন জখম হন। দলে দলে মানুষ গ্রাম ছেড়ে পালান। কয়েকটি স্থানে সেনাবাহিনী গুলি চালায়। আজ সকালে, ঘরপোড়া মানুষদের জন্য বেশ কয়েকটি আশ্রয় শিবির খোলা হয়। উদ্ধার হয়েছে চারটি মৃতদেহ। পাশাপাশি, গতকাল জখমদের মধ্যে ছয় জন হাসপাতালে মারা গিয়েছেন। |
রাতেই কাছাড়ের ধলাইতে, বিজেপি প্রার্থী শশাঙ্ক পালের বাড়িতে চড়াও হয় দুষ্কৃতীরা। তাদের মারে, বিজেপি কর্মী স্বপন পাল ঘটনাস্থলেই মারা যান। শশাঙ্কবাবু- সহ তিনজন জখম হন। বিজেপির পক্ষ থেকে স্থানীয় যুব কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক রাজেন পালিতকে মুখ্য অভিযুক্ত করে এফআইআর করা হলেও কাউকে গ্রেফতার করেনি। প্রতিবাদে সকাল থেকে শিলচর-আইজল জাতীয় সড়কে শুরু হয় অবরোধ। বিধায়ক গিরীন্দ্র মল্লিক গেলে দু’পক্ষে হাতাহাতি হয়। ময়না তদন্তের পরে স্বপনবাবুর দেহ এলে গিরীন্দ্রবাবুর বাড়ি চড়াও হয় বিজেপি সমর্থকেরা। বাড়ির রক্ষী গুলি চালালে আট জন জখম হন। গুলি চলার পরেই সিআরপি লাঠি চালাতে থাকে। সাংসদ কবীন্দ্র পুরকায়স্থ, অতিরিক্ত জেলাশাসক অরুণাভ দে-ও লাঠির ঘায়ে জখম হন। অবরোধ নতুন করে শুরু হয়। লাঠি ও গুলিতে জখম ১৩ জন হাসপাতালে ভর্তি। দু’জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। সরকারি ভাবে নিহতের সংখ্যা ২১ বলে জানালেও, অসরকারি সূত্রে সংখ্যাটি ২৫। গত বছর যে ভাবে, কোকরাঝাড়ের সংঘর্ষ আঁচ করতে ও থামাতে ব্যর্থ হয়েছিল রাজ্য সরকার, একই ভাবে ব্যর্থ হয় প্রশাসন। আজ, সাংবাদিক সম্মেলন গগৈ বলেন, “মেনে নিচ্ছি নিরাপত্তা ও আইন-শৃঙ্খলা মোকাবিলায় ত্রুটি ছিল। যেখানে পর্যাপ্ত নিরাপত্তাবাহিনী ছিল না, সেখানে সুযোগ নিয়েছে দুষ্কৃতীরা।” হিংসার ঘটনাটি আগে থেকে পরিকল্পনা করা হয়েছিল। না হলে, এক সশস্ত্র মানুষ দলে দলে কী ভাবে বেরিয়ে আসে? ‘গগৈ জানান, গোয়ালপাড়ার ঘটনার পিছনে ‘আসলে’ কারা রয়েছে, তা জানতে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হবে। |