|
|
|
|
আক্রমণে রাহুল, দলের বাম-দরজা কিন্তু খোলাই |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
ত্রিপুরায় ভোট প্রচারে গিয়ে রাহুল গাঁধী সিপিএমকে আক্রমণ করেছেন ঠিকই, কিন্তু ভবিষ্যতে জাতীয় স্তরে বামেদের সঙ্গে সমঝোতার দরজা খোলাই রাখতে চাইছেন কংগ্রেস হাইকম্যান্ড। কংগ্রেসের শীর্ষ নেতারা বলছেন, অতীতে প্রথম ইউপিএ-র মতো বামেদের সমর্থন নিয়ে ২০১৪ সালে তৃতীয় ইউপিএ গঠনের সম্ভাবনা থাকছেই। রাহুল যে ভাবে সিপিএমকে আক্রমণ করেছেন সেটাকে রাজ্য রাজনীতির প্রেক্ষাপটেই দেখা ভাল।
ত্রিপুরায় কংগ্রেসের ভোট প্রচারে সনিয়া-মনমোহনের যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে তাঁরা সেই সফর বাতিল করেন। তার পর গত সোমবার ও মঙ্গলবার ত্রিপুরায় ভোট প্রচারে যান রাহুল গাঁধী। প্রচারে রাহুল বলেন, “সিপিএমকে পশ্চিমবঙ্গ ও কেরলের মানুষ ছুড়ে ফেলে দিয়েছেন। এ বার ত্রিপুরার মানুষও সিপিএমকে ছুড়ে ফেলে দিন।” আজ এই প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে কংগ্রেস মুখপাত্র তথা কেরল কংগ্রেসের নেতা পি সি চাকো বলেন, “রাহুল যা বলেছেন, তা ত্রিপুরার রাজনীতির পরিপ্রেক্ষিতে একেবারেই ঠিক। আবার এটাও ঘটনা যে অতীতে বামেদের সমর্থন নিয়েই কংগ্রেস কেন্দ্রে সরকার গড়েছিল।”
রাজনীতির কারবারিদের মতে, কংগ্রেস বরাবরই এই দ্বিমুখী কৌশল নিয়েই রাজনীতি করে। ২০০৪ সালে নির্বাচনে কেরল, পশ্চিমবঙ্গ এবং ত্রিপুরা ভোটে বামেদের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানিয়েছিলেন সনিয়া গাঁধী। কিন্তু ভোটের পর সেই সনিয়াই ধর্মনিরপেক্ষ জোট গড়ার প্রশ্নে হরকিষেণ সিংহ সুরজিতের সঙ্গে সমঝোতা করেন। আর্থিক বৃদ্ধির হার যখন ক্রমশই নিম্নগামী এবং যখন আর্থিক বৃদ্ধি বা উন্নয়নের সাফল্য তুলে ধরে কংগ্রেসের ভোটে যাওয়ার সুযোগ কমছে, তখন এ বারও সেই প্রেক্ষাপট রচনার চেষ্টা করছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। নরেন্দ্র মোদীকে যখন জাতীয় রাজনীতিতে তুলে ধরছেন বিজেপি নেতারা, তখন কংগ্রেস ফের ধর্মনিরপেক্ষতার বিতর্ক উস্কে দিতে চাইছে। বামেদের সঙ্গে সমঝোতার সম্ভাবনা খোলা রাখতে চাইছে। হয়তো সেই কারণেই ত্রিপুরায় ভোট প্রচারে যাননি মনমোহন বা সনিয়া।
কংগ্রেসের এক নেতা বলেন, ত্রিপুরার ভোটে তাঁদের প্রধান প্রতিপক্ষ বামেরা তথা সিপিএম। ফলে রাজ্যের ভোটে রাহুলকে সিপিএমের বিরুদ্ধে আক্রমণে যেতেই হত। কিন্তু দলকে ভবিষ্যৎ কেন্দ্রীয় রাজনীতির কথাও মাথায় রাখতে হচ্ছে। প্রকাশ্য চাপানউতোরের বাইরেও একটা রাজনীতি রয়েছে। যেখানে বৃহত্তর স্বার্থের কথা তুলে এক জোট হওয়ার সুযোগ থেকেই যায়। যে কারণে হেলিকপ্টার কেলেঙ্কারি নিয়ে সিপিএমের প্রকাশ কারাট যখন সরব, তারই মধ্যে কংগ্রেসের নেতা পি সি চাকো কিন্তু ভবিষ্যতের সম্ভাবনার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন বামেদের। চাকোর কথায়, “সিপিএমকে বুঝতে হবে বিজেপির সঙ্গে তারা কোনও মতেই যেতে পারবে না কিন্তু অনেক প্রশ্নেই কংগ্রেসের সঙ্গে সহমত হয়ে চলতে পারে। ফলে কংগ্রেস-বিরোধী অবস্থান নেওয়ার সময় বাম নেতারা যেন মনে রাখেন, বিজেপি তাদের আরও বড় শত্রু। তা ছাড়া অনেক দশক পেরিয়ে যাওয়ার পরেও বামেরা কিন্তু দেশের রাজনীতিতে নির্ণায়ক ভূমিকায় উঠে আসতে পারেনি।” চাকোর ইঙ্গিতটা, স্পষ্ট ত্রিপুরায় তারা প্রতিদ্বন্দ্বী হলেও কংগ্রেসের মতো বামেরাও যেন এমন অবস্থান না নেন, যা ভবিষ্যতে কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে কাছাকাছি আসার পথে তা অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়।
বামেদের সঙ্গে সম্ভাব্য সেই সখ্যের আরও ইঙ্গিত মিলেছে এ দিন। আগামী সপ্তাহে পশ্চিমবঙ্গে যাচ্ছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল কুমার শিন্দে। এক অনুষ্ঠানে তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে একই মঞ্চে থাকবেন। কংগ্রেস সূত্রে বলা হচ্ছে, তার আগে শিন্দেকে বার্তা দেওয়া হয়েছে, তিনি যেন মমতা বা তাঁর সরকারের প্রশংসায় এমন কিছু না বলেন যাতে রাজ্য স্তরে কংগ্রেস অস্বস্তিতে পড়ে। কিংবা উল্টো ভাবে দেখলে, তৃণমূলের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বামেরা আরও বেশি বিমুখ হয়। |
|
|
|
|
|