ফের যেন ছেলেরই ফাঁসি হল, বললেন মকবুলের মা
চার ছেলের মৃত্যু হয়েছে ‘স্বাধীনতা’র লড়াই করতে। এক জনের তো ফাঁসিই হয়েছে। তবুও নিজের অবস্থান থেকে এক চুল সরতে রাজি নন শাহমালা বেগম। বরং সংসদে জঙ্গি হামলার ঘটনায় মূল চক্রী আফজল গুরুর ফাঁসি ও তিহাড় জেলের ভিতরেই তাঁর দেহ কবর দেওয়ার কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছেন শাহমালা। তিনি জম্মু ও কাশ্মীর ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট (জেকেএনএলএফ)-র অন্যতম সদস্য, নিহত মকবুল বাটের মা।
এক সিআইডি ইনস্পেক্টরকে খুন, পাকিস্তানে বিমান অপহরণ করা, ব্রিটেনে কর্মরত এক ভারতীয় দূতকে অপহরণ ও খুনের ষড়যন্ত্র-সহ নানা অভিযোগে অনেক বার গ্রেফতার হয় মকবুল। জেলও হয়। এক বার জেল থেকে পালিয়ে পাকিস্তান চলে যান মকবুল। পরে ভারতে ফেরার সময় ফের গ্রেফতার হন তিনি। ১৯৮৪-এর ১১ ফেব্রুয়ারি মকবুলের ফাঁসি হয়। তিহাড় জেলের ভিতরেই কবর দেওয়া হয় তাঁকে। এক সাক্ষাৎকারে শাহমালা বলেন, “যে দিন আফজলের ফাঁসি হল সে দিন মনে হল মকবুলকে যেন ফের ফাঁসিতে ঝোলানো হয়েছে। ঠিক একই রকম অনুভূতি।” কান্নায় গলা বুজে আসে তাঁর। কিন্তু পরক্ষণেই দৃঢ় কণ্ঠে জানালেন, মকবুল, আফজলদের ত্যাগ বিফলে যাবে না। তাঁর কথায়, “গত দু’দশক ধরে ‘স্বাধীন কাশ্মীরের’ জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে তরুণ কাশ্মীরিরা। এই কাজের জন্য পরিবার ছাড়তে হয়েছে। ধরা পড়ার ভয়ে লুকিয়ে থাকতে হয়েছে। তা সত্ত্বেও ভারতীয় সেনাদের অকথ্য অত্যাচারের সামনে এরা কেউ মাথা নত করেনি।” মকবুল, আফজলদের ফাঁসিতে তাই কাশ্মীরিদের গর্বিত হওয়াই উচিত বলে মনে করেন শাহমালা।
মকবুল বাটের দেহ ফেরত পাওয়ার দাবিতে প্রতিবাদীদের বিক্ষোভ।
শ্রীনগরে, ফেব্রুয়ারিতে। ছবি: রয়টার্স (ফাইল চিত্র)।
এই লড়াইয়ে একে একে চার ছেলেকে হারিয়েছেন শাহমালা। কারণে অকারণে আজও সেনারা বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায় ছোট ছেলে জহৌর আহমেদ বাটকে। চলে তল্লাশি। তবুও আজও স্বপ্ন দেখেন। বলেন, “দেখেছেন, আফজলের ফাঁসির প্রতিবাদে ফের জেগে উঠেছে কাশ্মীর। এটাই ঠিক সময়। সেনার অত্যাচার এ বার বন্ধ হবে। স্বাধীন হবে কাশ্মীর।”
আবার বলে ওঠেন, “ছেলেকে মুক্ত দেখার আশা মনে রেখেই মারা গিয়েছেন আফজলের মা। এ যে কী কষ্ট, আমি বুঝি। আর সরকারের সঠিক বিচারের আশায় থাকি না।” বরং যে ঝড় উঠেছে তাতেই ভারতের সব প্রতিরোধ ভেঙে গুঁড়িয়ে যাবে আশায় দিন গুনছেন শাহমালা।
প্রতি বছর মকবুলের ফাঁসির দিনটা শোক দিবস হিসেবে পালন করে জেকেএনএলএফ। এ বার ২৯তম মৃত্যুবার্ষিকীতে মকবুলের দেহ ফেরানোর দাবিতে কাশ্মীরের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ দেখানো হয়। এ দিন মকবুলের ভাই জহৌরও বলেন, “মকবুলের দেহাবশেষ পরিবারের কাছে ফেরানোর জন্য ভারত সরকারের কাছে শীঘ্রই আবেদন জানাব।” তবে শুধু মকবুল কেন, আফজলের দেহও পরিবারের কাছে ফেরানোর দাবি জানান জহৌর। “ওরা যে এখন পাশাপাশি শুয়ে স্বাধীন কাশ্মীরের স্বপ্ন দেখছে। এত মিল ওদের। তাই চাই ওদের দেহ একই সঙ্গে আসুক পরিবারের কাছে”, একটা ছোট্ট দীর্ঘশ্বাস ফেললেন জহৌর।

ফাঁসির খবর দিতে দেরি, ক্ষুব্ধ প্রধানমন্ত্রী
আফজল গুরুর ফাঁসির খবর তার পরিবারকে জানাতে বিলম্ব হওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করলেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। তাঁর সচিবালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কাল রাষ্ট্রপতি ভবনে রাজ্যপাল সম্মেলনের ফাঁকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল শিন্দেকে এ বিষয়ে তাঁর অসন্তোষের কথা জানান মনমোহন। শিন্দেকে তিনি বলেন, সরকার সন্ত্রাস দমনে কঠোর বার্তা দিতে চায় ঠিকই। কিন্তু আফজল গুরুর পরিবারকে ফাঁসির খবর ঠিক সময়ে দেওয়া প্রশাসনিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। সে ক্ষেত্রে দেরি হওয়া উচিত ছিল না। সরকারের দাবি ছিল ফাঁসির খবর পরিবারকে স্পিডপোস্ট করে জানানো হয়েছে। কিন্তু সেই চিঠি কাশ্মীরের সোপরে তার পরিবারের হাতে পৌঁছয় ফাঁসির ৫১ ঘন্টা পর। আফজলের পরিবার তো বটেই, উপত্যকার বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন, বিরোধী নেতৃত্ব এবং খোদ মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা এ নিয়ে ক্ষোভ জানান।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.