|
|
|
|
বাজেট অধিবেশনে বিরোধিতার আশঙ্কা |
কপ্টার দুর্নীতিতে নতুন করে কোণঠাসা কেন্দ্র |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
লোকসভা ভোটের আগে হাতে আর মাত্র চোদ্দো মাস। তার আগে সরকার যখন খাদ্য সুরক্ষা, জমি অধিগ্রহণ, লোকপালের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিল সংসদে পাশ করাতে চাইছে, কপ্টার কেলেঙ্কারিতে ‘টুজি’-র ভূত দেখছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব।
কেন্দ্রের আশঙ্কা, দুর্নীতি-প্রশ্নে সরকারকে কোণঠাসা করার আড়ালে কৌশলে সংসদের অধিবেশন ফের ভেস্তে দিতে পারেন বিরোধীরা। আর যদি তাই হয়, তবে লোকসভা ভোটের দিকে তাকিয়ে কংগ্রেস এবং সরকারের কর্মসূচি অনেকটাই ধাক্কা খাবে।
সমস্যা আরও গভীরে। ৩৬০০ কোটি টাকার কপ্টার কেলেঙ্কারিতে অতীতের বর্ফস-কাণ্ডের ছায়া দেখছে কংগ্রেস। এই চুক্তিতেও ইতালীয় সংস্থা জড়িত। কংগ্রেস নেতাদের আশঙ্কা, দিল্লিতে বা সংসদে হয়তো বিরোধীরা গাঁধী পরিবারকে টানবেন না। কিন্তু গ্রামগঞ্জে ভোটের প্রচারে গিয়ে, দুর্নীতি প্রসঙ্গে তাঁদের বিঁধতেও ছাড়বেন না।
ক’দিন আগেই নতুন করে মাথাচাড়া দিয়েছে টুজি বিতর্ক। ওই মামলার সরকারি আইনজীবীকে দুর্নীতির অভিযোগে বরখাস্ত করেছে সিবিআই। তার পরই গত কাল কপ্টার কেলেঙ্কারির ঘটনা প্রকাশ্যে আসায় অস্বস্তিতে কেন্দ্র। অভিযোগ, ইউপিএ জমানায়, প্রায় চারশো কোটি টাকা ঘুষ দিয়ে একটি ইতালীয় সংস্থা ভারতকে ৩৬০০ কোটির এক ডজন হেলিকপ্টার বিক্রি করেছে। ইতালীয় গোয়েন্দাদের দেওয়া রিপোর্ট থেকে উঠে এসেছে প্রাক্তন বায়ুসেনা প্রধান এস পি ত্যাগীর নাম। রিপোর্টে বলা হয়েছে, তিনি বায়ুসেনা প্রধান থাকাকালীন ইতালীয় সংস্থা ফিনমেকানিকার থেকে ঘুষ নিয়ে, তাদের সঙ্গে ৩৬০০ কোটি টাকার চুক্তি করিয়ে দেন। ত্যাগী বলেন, “অভিযোগ ভিত্তিহীন। ২০১০-এ ভারতীয় বায়ুসেনার সঙ্গে চুক্তি সই হয়। আর আমি অবসর নিয়েছি ২০০৭-এ।” তবে কি তিনি অন্য কোনও ভাবে ফিনমেকানিকাকে সুবিধা করে দিয়েছিলেন? উত্তরে ত্যাগী বলেন, “আমি বায়ুসেনা প্রধানের পদে আসার বহু আগেই, ২০০৩ সালে শেষ বারের মতো ভিভিআইপি কপ্টারের গুণমান ঠিক হয়ে যায়। আর আমি দায়িত্বে থাকাকালীন এ বিষয়ে কোনও বদল আসেনি।” তবে ইতালির সংস্থার সঙ্গে যাঁরা মধ্যস্থতা করেছিলেন, এক তুতো ভাইয়ের বাড়িতে তাঁদের সঙ্গে দেখা হয়, স্বীকার করেন ত্যাগী। কিন্তু তাঁর দাবি, এর বেশি কিছুই না। তবে এ সবে চিঁড়ে ভিজছে না।
প্রাক্তন সভাপতি নিতিন গডকড়ীর বিরুদ্ধে অভিযোগের পর যে দুর্নীতি-বিরোধী আন্দোলনে বিজেপিকে বিরাম দিতে হয়েছিল, সেই আন্দোলনে পূর্ণ উদ্যমে নামতে চাইছে বিজেপি। কারণ তাঁরা ভাবছেন, আফজলকে ফাঁসি দিয়ে জাতীয়তাবাদের তাস খেলতে চাইছে কংগ্রেস। সেই সঙ্গে সাম্প্রদায়িকতার প্রশ্নে কংগ্রেস বিজেপি-কে কোণঠাসা করতে তৎপর। এই অবস্থায় কংগ্রেসকে পাল্টা কোণঠাসা করতে, দুর্নীতিই অন্যতম অস্ত্র। লোকসভায় বিরোধী দলনেতা অরুণ জেটলির প্রশ্ন, “কারা ঘুষ নিয়েছে,জানাতে কেন দেরি করছে সরকার?” বিজেপি নেতা রবিশঙ্কর প্রসাদ প্রশ্ন তোলেন, “এক বছর ধরে এই দুর্নীতি প্রকাশ্যে এলেও, সনিয়া গাঁধী, মনমোহন সিংহ তদন্ত শুরু করতে এত দেরি করলেন কেন? কাকে বাঁচাতে চাইছেন এ কে অ্যান্টনি?” তাঁর বক্তব্য, সংসদ অচল করতে চায় না বিজেপি। কিন্তু বিরোধী দল হিসাবে বিজেপি দায়িত্ব পালন করবে। তেমনই আজ সিপিএম সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাট বলেছেন, “প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ওই ইতালীয় সংস্থাকে ব্ল্যাকলিস্ট করবেন বলেছেন ঠিকই। কিন্তু যে চুক্তি হয়ে গিয়েছে, তার ভবিষ্যৎ কী হবে!”
বাম-বিজেপি-র জোড়া আক্রমণে আসন্ন সংসদ অধিবেশনে তোলপাড়ের অশনিসঙ্কেত দেখছে কংগ্রেস। অতীতেও তেমন নজির রয়েছে। টুজি-কাণ্ডে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার পর বিরোধীরা তৎকালীন টেলিকম মন্ত্রী এ রাজার ইস্তফার দাবিতে সংসদ অচল করেন। তাঁর ইস্তফার পর, তদন্তের জন্য যৌথ সংসদীয় কমিটির দাবিতে দেড় মাসেরও বেশি সংসদ অচল করে রাখেন।
অথচ সংসদের আসন্ন বাজেট অধিবেশনের প্রথমার্ধ্বেই খাদ্য সুরক্ষা বিল পাশ করাতে চাইছেন সনিয়া। সেই মতো আজ দিল্লিতে সব রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রীদের বৈঠকেও ডাকা হয়। তা ছাড়া লোকপাল বিল, জমি অধিগ্রহণ বিল, মহিলাদের নিরাপত্তা বিধানের জন্য ফৌজদারি দণ্ডবিধি সংশোধন বিল এ সব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সংসদে তড়িঘড়ি পাশ করাতে চান সনিয়া। যাতে সেই ‘সাফল্য’কে হাতিয়ার করে কংগ্রেস ভোটে যেতে পারে। কিন্তু কংগ্রেস নেতারা মনে করছেন, প্রথমত দুর্নীতির প্রশ্নে বিরোধীরা কংগ্রেসের মুখে কালি লেপতে চাইবেন। তার পর, সংসদ অচল করে সরকার এমন পরিস্থিতি তৈরি করবেন, যাতে বিল পাশ করাতে না পারে সরকার।
এখন কংগ্রেসের একটাই ভরসা, এ কে অ্যান্টনি। প্রতিরক্ষা চুক্তিটি যখন সই হয় তখন মন্ত্রকের দায়িত্বে ছিলেন তিনিই, যাঁর সততা জাতীয় রাজনীতিতে সুবিদিত। কংগ্রেস মুখপাত্র পি সি চাকো জানান, ইতালির সরকার নিজেই তদন্ত শুরু করেছে। কেন্দ্রে ইউপিএ সরকারও তদন্তের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে। অতএব, বিজেপি-কে মিথ্যা প্রচারের কোনও সুযোগই দেবে না কংগ্রেস। |
|
|
|
|
|