সুহানের ডেরা চেনালেও মুখ খুলছে না পাড়া
গাড়ি ঢোকে না। সরু এক ফালি রাস্তা এঁকেবেঁকে চলে গিয়েছে বহু দূর। রাস্তার দু’ধারে মুদিখানা, পান-সিগারেট, খাবারের দোকান আর সারি সারি ছোট ঘর। বাতিকল দু’নম্বর লেন। গার্ডেনরিচ।
গলির মুখেই দেখা এক যুবকের সঙ্গে। ঠিকানাটা জানতে চাইতেই তিনি আঙুল তুলে হিন্দিতে বললেন, “এই গলি দিয়ে সোজা চলে যান। কাউকে জিজ্ঞাসা করে নেবেন।” রাস্তার উপরে কয়েকটি শিশু খেলায় মত্ত। কয়েক পা এগিয়ে অন্য এক জনকে আবার জিজ্ঞাসা করতেই বলা হল, “এগিয়ে যান।” আরও একটু গিয়ে আবার একই প্রশ্ন এবং ফের এগিয়ে যেতে বললেন অন্য এক জন। বোঝা যাচ্ছিল, ২১ বছরের শেখ সুহান এলাকায় বেশ পরিচিত নাম। গার্ডেনরিচের হাঙ্গামায় গুলিবিদ্ধ হয়ে সাব-ইনস্পেক্টর তাপস চৌধুরীর মৃত্যুর পরে সংবাদমাধ্যমের সৌজন্যে যার মুখ এখন বহু দর্শকেরও চেনা।
শেষ পর্যন্ত একটি পানের দোকান ছাড়িয়ে কয়েক জন যুবকের জটলায় গিয়ে জানতে চাওয়ায় তাঁরাই দেখিয়ে দিলেন সবুজ একতলা বাড়িটা। বছর দশেকের একটি ছেলে এগিয়ে এল। হাতের ইশারায় জানাল সঙ্গে যেতে।

শেখ সুহানের বাড়ি। —নিজস্ব চিত্র
যার খোঁজে এসেছি, সেই সুহান এখন পুলিশের ঘেরাটোপে। পুলিশ অফিসার খুনের অভিযোগে বুধবারেই তাকে তোলা হয়েছে আদালতে। বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে তার মুখ। খবরের কাগজে শিরোনামে সে। টিভি ফুটেজে রিভলভার হাতে সুহানকে স্পষ্ট দেখা গিয়েছে। গুলি ছুড়ছে সে। লুটিয়ে পড়ছেন পুলিশ অফিসার। আশঙ্কা ছিল, তার পাড়ায় খোঁজখবর নিতে গেলে প্রতিরোধ হবে। হয়তো তেড়ে আসবে তার ইয়ার-দোস্তরা।
কোথায় প্রতিরোধ? সবুজ একতলা বাড়ির দরজা ঠেলে ঢুকে একফালি উঠোন। উঠোনের দু’পাশে পাঁচ-ছ’টি ছোট ঘর। ডান দিকের একটি ঘরই সুহানের ডেরা। তার মায়ের সঙ্গে দেখা করার জন্য উঁকি দিতেই ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন দু’জন বয়স্ক মহিলা। তাঁরা জানান, সুহানের মা বাড়িতে নেই। কথা বলার মতো কোনও বয়স্ক মানুষও বাড়িতে নেই। তাঁদের পিছনে উঁকি দিচ্ছিল দু’জন যুবতীর মুখ।
দরজা পেরিয়ে একফালি জায়গা, সম্ভবত সেখানেই রান্নাবান্না হয়। তার পরে মাত্র একটি ঘর। সেই ঘর জুড়ে বড় একটি খাট। বাইরে থেকে ঘরের একটি অংশ দেখা যাচ্ছিল। দুই যুবতীর মধ্যে যাঁর বয়স তুলনায় একটু বেশি, তিনিই এগিয়ে এলেন। হাত জোড় করে হিন্দিতেই বললেন, “আমরা খুব সমস্যার মধ্যে আছি। পরশু থেকে কাকা আর আমার ভাই বাড়ি ফেরেনি। আমাদের পক্ষে এখন আর কিছু বলা সম্ভব নয়।” তিনি সুহানের দিদি। নাম জানতে চাওয়ায় বললেন, “জেনে কী করবেন?”
সুহানের ব্যাপারে আরও কিছু জানতে চাওয়ায় দিদির উত্তর, “কী শুনবেন? সব কিছু তো টিভিতেই দেখে নিয়েছেন। ওকে আজ আদালতে তোলা হয়েছিল। ১৩ দিন পুলিশের কাছে থাকবে।” তিনি জানান, সুহানের লেখাপড়া অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত। তার পর থেকেই ‘পার্টি’র সঙ্গে আছে। মা, তিন বোন, এক ভাইয়ের সংসার। বাবা ইদু শেখ খুন হন ১৯৯০ সালে। সেই প্রসঙ্গ উঠতেই গলা ধরে এল যুবতীর। বললেন, “বাবা যখন চলে গেলেন, আমরা খুব ছোট। তখন থেকেই তো লড়াই চলছে।”
এলাকায় কান পাতলে এখনও শোনা যায় ইদু শেখের কথা। বন্দর এলাকা দখলে নাম জড়িয়ে পড়েছিল সুহানের বাবারও। আশির দশকের শেষে বিবদমান দু’দলের এক দিকে ছিলেন ইদু শেখ, অন্য দিকে কসমা নামে এক মাফিয়া। পুলিশি সূত্রের খবর, কসমার শাগরেদ ইলিয়াসের গুলিতে মৃত্যু হয় ইদু শেখের।
বাবা মারা গিয়েছেন গুলি খেয়ে। ভাই ধরা পড়েছে গুলি করে পুলিশ মেরে। দিদি ওড়নায় মুখ ঢেকে বলেন, “পরিবারে আমাদের, মেয়েদের অবস্থাটা বুঝতে পারছেন নিশ্চয়ই!”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.