|
|
|
|
বন্দিজীবনে রঙিন ক্যানভাস |
দীক্ষা ভুঁইয়া |
মাটির তৈরি ধ্যানমগ্ন বুদ্ধ। মূর্তিটির পরতে পরতে শিল্পীর মুন্সিয়ানা এতটাই যে একবার দেখেই ওই মূর্তি কিনে নিয়েছিলেন বিড়লা অ্যাকাডেমি কর্তৃপক্ষ। শিল্পীর নাম সজল বারুই। সমাজের চোখে নৃশংস খুনি। কিন্তু তিনিই সৃষ্টির আনন্দে মাতলে একেবারে অন্যরকম হয়ে যান, বলছেন জেলের কর্মীরা।
ক্যানভাস জুড়ে ফুল, উড়ন্ত পাখি। কোথাও আবার নারকেল গাছের সারি। চোখ জুড়িয়ে যাওয়া প্রাকৃতিক দৃশ্য। শিল্পী রশিদ খান। বৌবাজার বিস্ফোরণ মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত।
ক্যানভাসে একটি মেয়ের মুখ। তার পিছনে পাখির মতো ডানা। কার সৃষ্টি? হরপ্রীত সিংহ ওরফে হ্যাপি। খাদিম কর্তা পার্থ রায়বর্মণ অপহরণ কাণ্ডে জড়িত এবং আফতাব আনসারির ঘনিষ্ঠ। রং আর ক্যানভাস শেষ হয়ে গেলেই তিনি ‘পাগল’ করে দেন জেল কর্তৃপক্ষকে।
শুধু এই তিন জনই নন। নানা অপরাধে সাজা পাওয়া প্রায় ৩৫-৩৬ জন বন্দির শিল্পসৃষ্টি নিয়ে ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আলিপুর জেলে হয়েছে আর্ট গ্যালারি। নাম ‘সৃষ্টিকলা ভবন’। তাতে স্থান পেয়েছে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত অ্যাঞ্জালাস খালকো, ৮৫ বছর বয়সী শ্রীকান্ত হালদার, মঞ্জুর মণ্ডল, নন্দিতা সাহা, পল্টু বিশ্বাস, দেবাশিস চক্রবর্তী, মিঠুন কুমার হালদার-সহ একাধিক বন্দির ছবি এবং ভাস্কর্য।
কারা দফতর সূত্রে খবর, রাজ্যের বিভিন্ন সংশোধনাগারের বন্দিদের নিয়ে নাচ, গান, নাটক, আবৃত্তির অনুষ্ঠান করে সাফল্য মিলেছে। নাইজেল আকারাকে নিয়ে ‘বাল্মীকি প্রতিভা’ তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তাই ঠিক হয়, আলিপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে আঁকার স্কুল খোলা হবে। ২০০৭-এ রাজ্যের ৬টি কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার (দমদম, আলিপুর, প্রেসিডেন্সি, মেদিনীপুর, বহরমপুর এবং জলপাইগুড়ি) থেকে বাছাই করে বন্দিদের আলিপুরে আনা হয়। সেখানে শিক্ষকেরা শেখান আঁকার ব্যাকরণ। কাজে লাগানো হয় বন্দিদের ভাবনাকে। |
বন্দিদের আঁকা ছবি, ভাস্কর্যে সেজেছে গ্যালারি। |
তা দেখে কারা বিভাগের কর্তারা ঠিক করেন, বন্দিদের তৈরি ছবি-ভাস্কর্য নিয়ে গ্যালারি তৈরি করবেন। তৎকালীন আইজি (কারা) বংশীধর শর্মা বলেন, “এঁদের কাজ ভাল হচ্ছে দেখে গ্যালারি করার সিদ্ধান্ত হয়। এখানে অসাধারণ সব ছবি আর ভাস্কর্য আছে। কিন্তু বাইরের জগতের কাছে খবর নেই। তাই মাঝেমধ্যে গ্যালারি বাইরের দর্শকদের জন্য খোলার প্রয়োজন।” আইজি (কারা) রণবীর কুমার বলেন, “তাতে বন্দিরা নিজেদের কাজের মূল্যায়ন দেখে অনুপ্রাণিত হবেন। তাঁদের আত্মমর্যাদাও বাড়বে।”
প্রশিক্ষক চিত্ত দে জানান, এখনও পর্যন্ত গ্যালারির ৩৬টি ছবি এবং তিনটি ভাস্কর্য বিক্রি হয়েছে। এই গ্যালারি দেখতে এসে ছবি এঁকে গিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। |
|
|
|
|
|