এক বছর পরে আসানসোল হাসপাতালে এসে হারিয়ে যাওয়া ছেলেকে ফিরে পেলেন মা।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার নরেন্দ্রপুরের বাসিন্দা ভাগ্যদেবী মিশ্র। বছর খানেক আগে হঠাৎই বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিল তাঁর ছোট ছেলে। তাকে ফিরে পাওয়ার আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলেন পেশায় পরিচারিকা ভাগ্যদেবী। কিন্তু মঙ্গলবার সকালে আসানসোল মহকুমা হাসপাতালের নার্স দিদিমণির একটা ফোনই বদলে দিল জীবনটা। তাঁদের কাছেই রয়েছে তাঁর ছেলে। বুধবার সকালেই চলে আসেন হাসপাতালে। এক বছর পর ছেলেকে ফিরে পেয়ে বুকে জড়িয়ে কেঁদে ফেললেন তিনি। |
মায়ের সঙ্গে বাদল।—নিজস্ব চিত্র। |
এ দিন সকালে আসানসোল হাসপাতালে ভাগ্যদেবী জানান, প্রায় এক বছর আগে ছোট ছেলে বাদলকে ঘুম পাড়িয়ে বড় দুই ছেলের দায়িত্বে রেখে কাজে বেরিয়েছিলেন তিনি। দুপুরে ফিরে এসে তাদের কাছে জানতে পারেন, ঘুম থেকে উঠেই বেরিয়ে গিয়েছে বাদল। ফেরেনি। এর পর আশপাশের এলাকা, প্রতিবেশীদের বাড়ি, সব জায়গায় খোঁজ করেও তার সন্ধান পাওয়া যায়নি। ভাগ্যদেবী বলেন, “কোনও ভাবেই খোঁজ পাইনি। ভেবেছিলাম, আর বেঁচে নেই হয়তো।” কিন্তু জীবনের মোড় বদলে দিল মঙ্গলবার সকালের ফোনটা।
আসানসোল মহকুমা হাসপাতালের সুপার নিখিলচন্দ্র দাস জানান, বছর খানেক আগে আসানসোল জিআরপি বছর এগারোর একটি বাদলকে জখম অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসে। ওকে কালিপাহাড়ি রেল লাইনের কাছে পাওয়া গিয়েছিল বলে জানায় পুলিশ। মাথায় একটা চোট ছিল। মাস দুয়েকে সুস্থ হয়ে ওঠে সে। কিন্তু ঠিকানা, বাড়ির লোকের নাম কিছুই জানাতে পারছিল না। হাসপাতালের লোকজনও তাই তাকে বেশি কিছু প্রশ্ন করেনি। নার্সদের তত্ত্বাবধানেই এত দিন রয়ে গিয়েছে সে। নিখিলবাবু বলেন, “দিন কয়েক আগে ওই কিশোরের কাছ থেকে আমরা ওর মায়ের মোবাইল নম্বর জানতে পারি। তার পরই ওই নম্বরে ফোন করেন নার্সিং সুপার।”
বুধবার সকালে হাসপাতালে মাকে দেখেই তাঁর কোলে ঝাঁপিয়ে পড়ে বাদল। ভাগ্যদেবী জানান, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হারিয়ে যাওয়া ছেলেকে ভুলতেই বসেছিলেন তিনি। কিন্তু ‘নার্স দিদিমণি’র ফোন পেয়েই আশায় বুক বেঁধে ছুটে এসেছেন আসানসোলে। মা আর সন্তানের মিলনে খুশি হাসপাতালের নার্স দিদিমণিরাও। নার্সিং সুপার মনিকা ঘোষ বলেন, “বছর খানেক ধরে আমরা বাদলের দেখভাল করছি। বাড়ি ফিরে যাবে, মন খারাপ হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু মায়ের কাছে ছেলে ফিরবে। তার জন্য আনন্দ হচ্ছে।” |