|
|
|
|
বিজিবি-এর গুলি, চাষি হত ভারতে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • রায়গঞ্জ |
কাঁটা তারের ও পারে ভারতীয় ভূখণ্ডে নিজের জমিতে সার দিতে গিয়ে বর্ডার গার্ড অব বাংলাদেশ (বিজিবি) জওয়ানদের গুলিতে এক ভারতীয় চাষির মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ওই ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়েছে নিহতের ভাইপো বারো বছরের সুর আলম। সোমবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটে উত্তর দিনাজপুরের হেমতাবাদ ব্লকের মকরহাট এলাকার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া এলাকায়। পুলিশ জানায়, নিহতের নাম আবদুল ফরিদ (৩২)। বাড়ি মুসলিমপাড়া এলাকায়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় সুরকে রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। মহাকরণ সূত্রে জানা যায়, ওই চাষি ভারতীয় ভূখণ্ডে চাষ করছিলেন। ও পার থেকে করা গুলি তাঁর গায়ে লাগে।
এই ঘটনার পরে এলাকায় যান ইটাহারের বিধায়ক রাজ্যের পরিষদীয় সচিব অমল আচার্য, রাজ্যের জনস্বাস্থ্য ও গ্রন্থাগার মন্ত্রী আবদুল করিম চৌধুরী, জেলা পরিষদের সভাধিপতি মোক্তার আলি সর্দার, জেলা কংগ্রেস সভাপতি মোহিত সেনগুপ্ত, পুলিশ প্রশাসনের কর্তারা। তাঁরা বিএসএফ ও নিহতের পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন। বিকালে ফ্ল্যাগ মিটিংয়ে বসেন বিএসএফ ও বিজিবির অফিসারেরা। জেলাশাসক পাসাং নরবু ভুটিয়া বলেন, “বিজিবির গুলিতে এক চাষি মারা গিয়েছেন। এক বালক জখম হয়। জেলা প্রশাসন ও পুলিশের তরফে রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট পাঠানো হচ্ছে।” জেলা পুলিশ সুপার অখিলেশ চর্তুবেদী বলেন, “পরিস্থিতি বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এলাকায় পুলিশের নজরদারি রয়েছে।” গ্রামবাসী জানান, এ দিন বিএসএফ সীমান্তের গেট খুলে দেওয়ার পর আবদুল ভাইপো সুর ও বাবা মহম্মদ হাফিজুলকে নিয়ে তাঁর দেড়বিঘা গমের জমিতে সার দিতে যান। অভিযোগ, বিজিবির তিন জওয়ান ভারতীয় ভূখন্ডে ঢুকে তাঁদের সারের বস্তা কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। আবদুল বাঁধা দেওয়ায় বিজিবি জওয়ানরা তাঁদের লক্ষ করে তিন রাউন্ড গুলি চালায় বলে অভিযোগ। আবদুলের মুখে গুলি লেগে মাথার পিছন দিয়ে বেরিয়ে যায়। ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান। সুরের ডান পায়ে গুলি লাগে। হাফিজুলবাবুর চিত্কারে চাষিরা এসে সুরকে রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালে ভর্তি করান।
পেশায় চাষি আবদুলের স্ত্রী এবং তিনটি ছেলে রয়েছে। স্বামীর মৃত্যুর খবরে কান্নায় ভেঙে পড়েন স্ত্রী সরিফুল বিবি। তিনি বলেন, “তিন ছেলেকে নিয়ে কী ভাবে সংসার চালাব তা বুঝতে পারছি না। সরকারি ক্ষতিপূরণ না পেলে রাস্তায় বসে যাব।” হেমতাবাদ ব্লক এলাকায় মোট ২৫ কিমি এলাকা জুড়ে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত রয়েছে মকরহাট এলাকায় ভারতীয় ভূখন্ডের হাজার বিঘা জমি রয়েছে। দেড় হাজার চাষি ওই জমিতে চাষাবাদ করেন। এই জমির পর একটি নদী রয়েছে। তার ও পারে বাংলাদেশ। প্রতিদিন তিনবার বিএসএফ গেট খুললে চাষিরা গিয়ে চাষাবাদের কাজ করে ফিরে আসেন। নিহতের বাবা হাফিজুলবাবু বলেন, “সার দেওয়ার কাজ শুরু করতেই বিজিবি-র তিন জওয়ান নদী টপকে ভারতীয় ভূখন্ডে ঢুকে সারের বস্তা ছিনতাই করার চেষ্টা করে। আবদুল বাঁধা দেওয়ায় বিজিবির জওয়ানরা গুলি চালায়। চোখের সামনে ছেলেটা মরে গেল।” এ দিন অমল আচার্য বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে এই বিষয়ে কথা হয়েছে। উনি হতের পরিবারকে ২ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের ঘোষণা করেছেন। জখম বালকের চিকিত্সাও রাজ্য সরকার করবে।” নিহতের পরিবারে এক জনের চাকরি, সরকারি ক্ষতিপূরণ, বিএসএফের নজরদারির দাবিতে আজ, মঙ্গলবার ১২ ঘণ্টার ব্লক বনধের ডাক দিয়েছে এসইউসি। |
|
|
|
|
|