নিজস্ব সংবাদদাতা • জলপাইগুড়ি |
পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে জলপাইগুড়ি জেলা বামফ্রন্টের অন্দরেও। পঞ্চায়েতে আসন বন্টনের ক্ষেত্রে চিরাচরিত আগের প্রথা সরিয়ে রেখে আলোচনার মাধ্যমে শরিকি জোট অটুট রাখতে চাইছে জেলা বামফ্রন্ট। শরিকি জোট অক্ষুণ্ণ না থাকলে ক্ষমতাসীন তৃণমূলের মোকাবিলা করা সমস্যা বহুল ধরে নিয়েই আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনে গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে জেলা পরিষদ সব স্তরেই বামফ্রন্টগতভাবে ভোটে লড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য বামফ্রন্ট। সেই সিদ্ধান্ত মেনে জলপাইগুড়িতেও শুরু হয়েছে শরিকি আলোচনা। আরএসপি, ফরওয়ার্ড ব্লকের মত শরিকদের দাবি, ক্ষমতা হারিয়ে আসন বণ্টন নিয়ে সিপিএমের সুর অনেকটাই নরম। অন্যত্র জোট হলেও জলপাইগুড়িতে মূলত সিপিএম এবং আরএসপির বিবাদের কারণে কখনওই পঞ্চায়েতে বামফ্রন্ট ঐক্য তৈরি হয়নি।
রাজনৈতিক মহল সূত্রের খবর, ১৯৭৮ সালে জেলায় আলোচনায় ফল না মেলায় সিপিএমের তত্কালীন জেলা সম্পাদক সুবোধ সেন এবং আরএসপির জেলা সম্পাদক গোবিন্দ দে’কে বামফ্রন্ট নেতারা কলকাতায় বৈঠকে ডেকে পাঠান। বৈঠকেও পরেও দুই দলই সব আসনে প্রার্থী দিয়ে দেয়। তার পর থেকে কোনওবারই গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলা পরিষদ স্তরে সার্বিক বামফ্রন্ট ঐক্য হয়নি। ২০০৮ সালে বামফ্রন্ট ঐক্য তো দূরের কথা, জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদ গঠনেও সিপিএমের সঙ্গে অংশ নেননি আরএসপির নির্বাচিত জেলা পরিষদ সদস্যরা। এ বার আসন পুর্নবিন্যাসে জেলায় গ্রাম পঞ্চায়েতের ৬৬২টি আসন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৩৪৬টি। ৩৯৬টি পঞ্চায়েত সমিতি আসন ভেঙে নতুন ৪২২টি আসন হয়েছে। জেলা পরিষদের আসন হয়েছে ৩৭টি। সে কারণেই এতগুলি আসনে পারষ্পরিক বোঝাপড়া তৈরি করতে ব্লক স্তরে নিজেদের মধ্যে বৈঠকে শুরু করেছেন বাম শরিকদলগুলি।
বামফ্রন্ট সূত্রের খবর, কুমারগ্রাম ব্লকে ২টি গ্রাম পঞ্চায়েত ছাড়া সর্বত্র জোট হয়েছে। মালবাজার এবং কালচিনি ব্লকেও ইতিমধ্যে বামফ্রন্টের শরিকি ঐক্য হয়েছে। রাজগঞ্জে ব্লক বামফ্রন্ট কমিটি গঠন করে ফেলাকেও সাফল্য হিসেবে বর্ণনা করছে জেলা বামফ্রন্ট। বাকি আসন এবং ব্লকগুলির ক্ষেত্রে আলাপ আলোচনা চালিয়ে যাওয়া হবে বলে জেলা বামফ্রন্ট সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
জয়ী আসন ছাড়া পরাজয়ের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় স্থানে থাকা দল অথবা যাদের দখলে সেই এলাকার বিধানসভা বা লোকসভা রয়েছে, এই সূত্রেই আসন বন্টন করত সিপিএম। এবার সূত্রের পরিবর্তে বাস্তব পরিস্থিতি এবং এলাকার কর্মী সমর্থকদের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। প্রতিবারের মত জেলা নেতারা বৈঠকে বসে আসন বন্টন না করে সেই ভার ব্লক নেতাদের এবার দিয়েছেন। আলোচনাতে সমস্যা না মিটলে এলাকার কোনও বাম মনোভাবাপন্ন ব্যাক্তিকে বাম সমর্থিত নির্দল প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দিয়ে ঐক্য বজায় রাখা হবে বলেও ঠিক হয়েছে। সিপিএমের জেলা সম্পাদক কৃষ্ণ বন্দোপাধ্যায় বলেন, “নতুন করেই এবছর আলাপ আলোচনা শুরু হয়েছে। এতদিন যে সূত্রে আসন বন্টন হত, তাকেই চূড়ান্ত শর্ত বলে ধরা হচ্ছে না। বাস্তব পরিস্থিতি সহ সব দিকই আলোচনায় রাখা হচ্ছে।” আসএসপির জেলা সম্রাদকমণ্ডলীর সদস্য প্রকাশ রায় বলেন, “এত দিন যে সমীকরণে আলোচনা হত তাই যদি এবারেও বজায় রাখা হত, তবে তো এবারও ঐক্য হত না। একতরফা ভাবে কোনও শর্ত চাপানো হয়নি। খোলা মনেই আলোনা হচ্ছে।” ফরওয়ার্ড ব্লকের জেলা সম্পাদক প্রবাল রাহা বলেন, “দলের সন্মান ও সমর্থকদের মনোবল ভেঙে কোথাও জোট হবে না। প্রয়োজনে একাধিকবার আলোচনা হচ্ছে। ব্লক স্তরেই সব কিছু আলোচনা করা হচ্ছে।” |