বিদ্যুতে দুর্ঘটনা, ক্ষতিপূরণের বহরে প্রশ্ন
বিদ্যুতের লাইন রক্ষণাবেক্ষণ ও কর্মীদের নিরাপত্তার পিছনে বছরে খরচ কুড়ি-পঁচিশ কোটি টাকা। তবু বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে দুর্ঘটনার ক্ষতিপূরণ বাবদ ফি বছর এক থেকে দেড় কোটি টাকা বেরিয়ে যাচ্ছে রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার তহবিল থেকে! এই ‘অপচয়ের’ কড়া সমালোচনা করেছে রাজ্যের অ্যাকাউন্ট্যান্ট জেনারেল (এজি)-এর অফিস।
২০১০-১২ অর্থবর্ষে বণ্টন সংস্থার আর্থিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে এজি-র দেওয়া সাম্প্রতিক রিপোর্টে অভিযোগ: বণ্টন সংস্থা কর্তৃপক্ষ বিদ্যুৎ-কর্মীদের সুরক্ষার স্বার্থে নানা ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বললেও কাজের কাজ কিছু হয়নি। দুর্ঘটনা তো কমেইনি, বরং পরিস্থিতি উত্তরোত্তর খারাপ হয়েছে। বিদ্যুৎ-দুর্ঘটনার ক্ষতিপূরণ বাবদ বিগত পাঁচ বছরে সংস্থাকে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা গুনাগার দিতে হয়েছে। বহু ঘটনার তদন্ত এখনও বাকি। সেগুলিতেও ক্ষতিপূরণ দিতে হলে অঙ্কটা বিস্তর বাড়বে। নিরাপত্তা-ক্ষেত্রে ঠিকঠাক নজরদারি থাকলে এই বিপুল অর্থ বাঁচানো যেত বলে এজি-র আক্ষেপ।
এবং এই সূত্রে সুরক্ষা-বিধি উপেক্ষার প্রবণতার দিকেও আঙুল তুলেছে রিপোর্ট। বলা হয়েছে, লাইনে কাজের সময়ে হামেশাই নিরাপত্তা-বিধির তোয়াক্কা করা হচ্ছে না। পাশাপাশি বিদুৎ-কর্মীরা মান্ধাতা আমলের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করছেন। ফলে আকছার দুর্ঘটনা ঘটছে। কিছু ক্ষেত্রে প্রাণহানিও। যেমন, বিদ্যুৎ-কর্মী ঘনশ্যাম মজুমদার উঁচু স্তম্ভ থেকে পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত পেয়েছিলেন। রক্তপাতে তাঁর মৃত্যু হয়। তদন্তে দেখা যায়, ওঁর হেলমেটটি চোট পেয়ে ভেঙে গিয়েছে। অর্থাৎ সঠিক মানের হেলমেট ব্যবহার করা হয়নি। শুধু তা-ই নয়, এজি-র রিপোর্টে এক শিশু শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনারও উল্লেখ আছে।
কেন বিপর্যয়
• পরিদর্শনে ঢিলেমি
• দক্ষ কর্মী বাড়ন্ত
• আর্থিং-বিভ্রাট
• বোঝাপড়ার অভাব
• প্রশিক্ষণে ঘাটতি
• সাবেক সরঞ্জাম
• সুরক্ষা-বিধি উপেক্ষা
কত অঘটন
বছর সংখ্যা
• ২০১০-১১— ২৮৪
• ২০১১-১২— ২৫৯
• ২০১২-১৩— ২০১*

*
নভেম্বর পর্যন্ত

নদিয়া-মুর্শিদাবাদ গ্রামীণ বিদ্যুদয়ন প্রকল্পের কাজে সুশান্ত প্রামাণিক নামে ওই নাবালককে নিযুক্ত করার পিছনে সংস্থার নজরদারির ঘাটতিকেই দায়ী করেছে এজি-র রিপোর্ট। রিপোর্ট মোতাবেক, ২০০৭-এর এপ্রিল থেকে ২০১২-র অক্টোবর পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে বিদ্যুৎ-সম্পর্কিত মোট ১,৮৫৫টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। তার মধ্যে তিন শতাধিক ঘটনায় বণ্টন সংস্থা তদন্ত শুরুই করতে পারেনি।
সংস্থা-কর্তৃপক্ষের কী বক্তব্য?
দুর্ঘটনার ‘ঘনঘটা’র জন্য বণ্টন কর্তৃপক্ষ মূলত দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদারদের একাংশের দিকে আঙুল তুলছেন। পাশাপাশি দুষছেন কর্মীদের একাংশের মধ্যে সুরক্ষা-সচেতনতার অভাবকে। “কিছু ঠিকাদার সংস্থার গাফিলতির কারণেই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার ঘটনা ঘটছে। কর্মীদের অনেকেও লাইনে কাজ করার সময়ে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী হয়ে পড়ছেন, নিরাপত্তা-বিধি মানছেন না।” মন্তব্য এক বণ্টন-কর্তার। তাঁর দাবি, শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েও কর্মীদের বা ঠিকাদার সংস্থার হুঁশ ফেরানো যাচ্ছে না।
বণ্টন সংস্থা সূত্রের খবর: বিদ্যুৎ লাইনে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের নিরাপত্তার দিকটি যাচাই করতে ২০০৮-এর মে মাসে পুরোদস্তুর একটি বিভাগ গড়া হয়েছে, যার দায়িত্বে রয়েছেন এক জন অতিরিক্ত চিফ ইঞ্জিনিয়ার, চিফ সেফটি অফিসার ও বেশ ক’জন ইঞ্জিনিয়ার। উপরন্তু রাজ্যে নতুন সরকার আসার পরে ওই বিভাগে এক জন অবসরপ্রাপ্ত অফিসারকে নিয়োগ করা হয়েছে ‘পরামর্শদাতা’ হিসেবে। কিন্তু অভিযোগ, এতে কাজের কাজ কিছু হয়নি। কেন?
সংস্থা সূত্রের ইঙ্গিত, বিভিন্ন ডিভিশন বা সাব-স্টেশন পরিদর্শন করেই সুরক্ষা-বন্দোবস্ত তদারকির কাজ সারা হয়। কাজ চলছে এমন জায়গায় আধিকারিকেরা খুব কমই পরিদর্শনে যান। ফলে বিধি উপেক্ষার প্রবণতা সে ভাবে আটকানো যায় না।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.