বাস ভাড়া পর্যাপ্ত না বাড়ানোর গুনাগার ফি মাসে রাজ্যের কোষাগার থেকে ১ কোটি ২৮ লক্ষ টাকা।
কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রকের কাছ থেকে ঋণে বাস কিনেছিল রাজ্য সরকার। সেই বাস তারা রাজ্যের পরিবহণ নিগম এবং বেসরকারি মালিকদের ব্যবহার করতে দিয়েছিল। শর্ত ছিল, প্রতি মাসে ঋণের টাকা মেটাবে বাস ব্যবহারকারীরা। কিন্তু তারা তা মেটাতে ব্যর্থ হলে রাজ্য সরকারকেই মেটাতে হবে কিস্তির টাকা। সেই শর্তই এ বার ফাঁস হয়ে দাঁড়িয়েছে রাজ্য সরকারের কাছে।
বাসের ভাড়া আশানুরূপ না বাড়ায় ক্ষতি হচ্ছে দাবি করে বেসরকারি বাস ব্যবহারকারীদের অধিকাংশই কিস্তির টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। আর্থিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় পরিবহণ নিগমগুলিও কিস্তি মেটাতে পারছে না। তাই কিস্তির টাকাও রাজ্যকে মেটাতে হচ্ছে। রাজ্যের বেহাল আর্থিক অবস্থার মধ্যে শুধু ঋণের কিস্তি বাবদই রাজ্যের কোষাগার থেকে প্রতি মাসে বেরিয়ে যাচ্ছে প্রায় ১ কোটি ২৮ লক্ষ টাকা।
রাজ্য পরিবহণ দফতরের হিসেব, জেএনএনইউআরএম প্রকল্পে ৮৬২টি বাস কিনেছিল রাজ্য। তার থেকে বেসরকারি মালিকেরা নিয়েছিলেন ৫১২টি বাস। পরিবহণ নিগমগুলি নিয়েছিল ৩৫০টি বাস। সেই বাস নেওয়ার শর্ত ছিল, প্রতি মাসে বাস প্রতি ১৬ হাজার টাকা করে ঋণের টাকা দিতে হবে। বেসরকারি বাস মালিক ও নিগমগুলি সেই টাকা দেবে রাজ্যকে। রাজ্য সরকার তা ব্যাঙ্কে জমা দেবে। কারণ, ওই বাস কেনার সময়ে রাজ্য সরকার ছিল গ্যারান্টার। |
কিস্তির গুনাগার |
জেএনএনইউআরএম বাস
• সরকারি নিগমে ৩৫০
• বেসরকারি মালিকের কাছে ৫১২
• বাসপিছু মাসিক কিস্তি ১৬ হাজার টাকা
• সরকারের মাসিক বোঝা ১.২৮ কোটি টাকা |
|
বর্ধিত বাস ভাড়া মালিকদের পছন্দ না হওয়ায় বিভিন্ন রুটে ইতিমধ্যেই বাস বসিয়ে দিয়েছেন মালিকেরা। তাঁদের দাবি, এই ভাড়ায় বাস চালিয়ে কিস্তির টাকাই ওঠে না, তো লাভ। যাঁদের বাস রাস্তায় চলছে, তাঁরাও অনেকে কিস্তির টাকা দিচ্ছেন না একই যুক্তি তুলে। বাস মালিকদের দেওয়া তথ্য বলছে, ৫১২টির মধ্যে অন্তত ৪৫০টি বাসের মালিক কিস্তি দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। সেই বাসগুলির কিস্তির টাকা বাবদ মাসে ৭২ লক্ষ টাকা গুণাগার দিতে হচ্ছে রাজ্য সরকারকেই। নিগমের ৩৫০টি বাসের ক্ষেত্রে কিস্তির টাকা মেটাতে হচ্ছে রাজ্যকে। যার পরিমাণ ৫৬ লক্ষ টাকা।
এই চরম আর্থিক সঙ্কটের মধ্যে মাসে এই ১ কোটি ২৮ লক্ষ টাকার ধাক্কা কত দিন সামলাতে হবে রাজ্যকে? গত সপ্তাহে পরিবহণমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে বেসরকারি বাস মালিক সংগঠন ‘জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেটস’-এর নেতারা জানিয়ে দিয়েছেন, বাস চালিয়ে যথেষ্ট লাভ না হওয়ায় কিস্তির টাকা তাঁরা দিতে অপারগ। অনেক ক্ষেত্রে, ক্ষতি সামাল দিতে বাস বসিয়ে রাখতে হচ্ছে। পরিবহণ দফতরের এক কর্তা বলেন, “এমনিতেই সরকারি ভর্তুকিতে চলে নিগমগুলি। তার উপরে এই বাড়তি টাকা সরকারকে দিতে না হলে তা পরিবহণের উন্নয়নে খরচ হত।”
এই সঙ্কট মুক্তির রাস্তা খুঁজতে পরিবহণ কর্তারা দফায় দফায় বৈঠক করেছেন বাস মালিকদের সঙ্গে। কিস্তি না মেটালে বাস মালিকদের কাছ থেকে বাস বাজেয়াপ্ত করার হুমকিও দিয়েছিলেন পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র। মালিকেরা জানিয়েছেন, লোকসানে চলা বাস সরকারকে ফিরিয়ে দিতে তাঁদের আপত্তি নেই। শেষ পর্যন্ত এখন ওই সব বাসের ঋণ শোধের দায় রাজ্য সরকারকেই নিতে হচ্ছে।
পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র বলেন, “রাজ্য পরিবহণ পরিকাঠামো উন্নয়ন নিগমের সঙ্গে বেসরকারি বাস মালিকদের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে। চেষ্টা চলছে যাতে রাস্তায় বাসও নামে, আর সরকারের ঘরে টাকাও আসে।” দক্ষিণবঙ্গ পরিবহণ উন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যান তমোনাশ ঘোষের দাবি, “এই বাস কেনার বিষয়ে সিপিএমের গোটা পরিকল্পনাটাই ছিল ভুলে ভরা। নিগমগুলির পক্ষেও কিস্তি শোধ করা সম্ভব হচ্ছে না।”
পরিবহণ দফতরের এক কর্তার কথায়, “পরিস্থিতি যা, তাতে বেসরকারি মালিকদেরও খানিকটা রেহাই দিতে হবে। আবার সরকারের কোষাগার যে খালি, তাও খেয়ালে রাখতে হবে। মাঝামাঝি কোনও পন্থা বেরোয় কি না, সেটাই দেখা হচ্ছে।”
তবে সেই পথ কবে বেরোবে, তার সদুত্তর অবশ্য নেই পরিবহণ দফতরের কাছে। |