খুঁটি বসাই সার, সেতু হয়নি ছ’বছরেও
দেড় কিলোমিটার দূরে স্বাস্থ্যকেন্দ্র। দুই কিলোমিটার দূরে হাইস্কুল। কিন্তু সেই স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও স্কুলে পৌঁছতেই পার হতে হয় ১২ কিলোমিটার রাস্তা। কারণ, ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও স্কুলের সঙ্গে বাসিন্দাদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি করে দিয়েছে একটি নদী।
চাকা নদীর উপর সেতু তৈরি না হওয়ায় এমনই দুর্ভোগে পড়েছেন মানবাজারের কেশরগড়িয়া গ্রামের বাসিন্দারা। শুধু কেশরগড়িয়াই নয়, লাগোয়া মানগোবিন্দপুর, কুঁয়োরডি, মারাগোড়া, ধাদকিগোড়া-সহ ২০টি গ্রামের প্রায় ১৫ হাজার মানুষ প্রতিদিন এই সমস্যায় রয়েছেন। তাঁদের আক্ষেপ, দীর্ঘ তিন দশক ধরে বিভিন্ন স্তরে আবেদন জানিয়েও কোন সুরাহা হয়নি। সেতু দূর অস্ৎ, এত দিনে তাঁদের প্রাপ্তি শুধু সেতুর চারটি স্তম্ভ।
বর্ষার পর চাকা নদীতে শীত পর্যন্ত জল থাকে। তখন ওই নদীর জল পার হয়ে যাতায়াত করতে দুর্ভোগে পড়েন বাসিন্দারা। আবার জল শুকালেও নদীর বালির চর দিয়ে গাড়ি পার করানো যায় না। অথচ নদীর অন্য পাড়ে রয়েছে বিজয়ডি হাইস্কুল ও কুদা স্বাস্থ্যকেন্দ্র। কেশরগড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা দেবজিত পণ্ডা, কাজল মহাপাত্র, মানগোবিন্দপুরের বাসিন্দা শুকদেব মাহান্তীর অভিযোগ, “যোগাযোগের অভাবে আমরা সামান্যতম পরিষেবাও পাই না। কাঁচা রাস্তা দিয়ে হেঁটে কিংবা সাইকেল বা মোটরবাইকে ১২ কিলোমিটার দূরের গোপালনগরে যেতে হয়। সেখান থেকে বাস ধরে আরও প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে মানবাজারে যেতে হয়। সেখানেই তাঁরা চিকিৎসা করাতে যান।” কারণ গোপালনগর থেকে কুদা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দূরত্ব আরও বেশি।
আজও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে সেতুস্তম্ভ। —নিজস্ব চিত্র।
বিজয়ডি হাইস্কুলে এই গ্রামগুলি থেকে বেশকিছু ছেলেমেয়ে পড়তে যায়। তাদের সমস্যাও কম নয়। দশম শ্রেণির চায়না পণ্ডা, নয়নমণি পণ্ডা, সপ্তম শ্রেণির মৌসুমী মহাপাত্ররা বলে, “হেঁটেই আমরা স্কুলে যাতায়াত করি। কিন্তু এমন অনেকদিন হয়েছে স্কুল গিয়েছি হেঁটে নদী পেরিয়ে। ফেরার সময় দেখি নদীতে জল বইছে। তখন স্কুলে ফিরে গিয়ে শিক্ষকদের অনুরোধ করে হস্টেলে রাত কাটানোর ব্যবস্থা করতে হয়।” বাসিন্দারা জানান, সামান্য জ্বর হলেও আতঙ্কে থাকতে হয়। কারণ কাছে স্বাস্থ্যকেন্দ্র থাকলেও নদীর জল কেমন থাকে তার উপরেই নির্ভর করে, কোথায় গেলে চিকিৎসা পাওয়া যাবে।
কেশরগড়িয়ায় নদীর পাড় থেকে দেখা যায় সেতুর জন্য চারটি কংক্রিটের খুঁটি রয়েছে। মানগোবিন্দপুরের বাসিন্দা গোপালনগর পঞ্চায়েতের সিপিএম সদস্য বাসুদেব মাহান্তী বলেন, “২০০৬ সালে বিধানসভা নির্বাচনের সময় মানবাজার পঞ্চায়েত সমিতি ও বিধায়ক তহবিল থেকে সেতু নির্মাণের জন্য কয়েক লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছিল। ওই টাকায় চারটি স্তম্ভ নির্মাণ হয়। টাকার অভাবে কাজ আর এগোয়নি।” গোপালনগর পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের কৃত্তিবাস মাহাতোর অভিযোগ, “ওই সময় বরাদ্দ টাকার যথাযথ খরচ হয়নি বলেই সেতুর কাজ বিশেষ এগোয়নি। ওই সেতু নির্মাণ হয়ে গেলে গোপালনগর ও কামতা জাঙ্গীদিরি পঞ্চায়েত এলাকার মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল হবে। রাজ্য সরকারের কাছে আমরা অসমাপ্ত সেতুর কাজ শেষ করার আবেদন জানিয়েছি।”
মানবাজারের বিডিও সায়ক দেব বলেন, “বেশ কয়েক বছর আগে ওই সেতু নির্মাণের কাজে হাত দেওয়া হয়েছিল। তবে কোন খাতে কত টাকা বরাদ্দ হয়েছিল, এখনই তা বলা সম্ভব নয়।” তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা রাজ্যের মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো বলেন, “ওই এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটাতে সেতুর প্রয়োজন। কোন খাতে কী ভাবে তা করা যায়, আমরা পরিকল্পনা করব।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.