অবরোধ না করার জন্য দলগুলিকে বারবার ‘হুমকি’ দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অথচ মনোনয়ন জমা দেওয়া নিয়ে গণ্ডগোলের জেরে প্রায় ৫ ঘণ্টা জাতীয় সড়ক অবরোধ করল তাঁরই দল।
সোমবার বিকেল পৌনে ৪টে থেকে বেথুয়াডহরি তৃণমূল কার্যালয়ের সামনে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ চলে। ব্যস্ত সময়ে ওই গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় যানজটে নাকাল হন সাধারণ মানুষ। আটকে যায় বহু দূরপাল্লার গাড়ি।। খবর পেয়ে মন্ত্রী, স্থানীয় বিধায়কেরা ঘটনাস্থলে গেলেও অবরোধ তুলতে রাত সওয়া ৮টা বেজে যায়। জনস্বাস্থ্য কারিগরী প্রতিমন্ত্রী পুণ্ডরীকাক্ষ সাহা বলেন, “দলগত ভাবে আমরা অবরোধের বিরোধী। তবে কলেজে পুলিশের মার খেয়ে ছেলেরা এটা করে ফেলেছিল। বুঝিয়ে তুলে দিয়েছি।” কিন্তু অবরোধ তুলতে এত সময় লাগল কেন? এর কোনও সদুত্তর মেলেনি। সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য এসএম সাদি বলেন, “এক দিকে নেত্রী হুমকি দিচ্ছেন অবরোধ করা যাবে না। অন্য দিকে, তারই দলের কর্মীরা দীর্ঘক্ষণ জাতীয় সড়ক অবরোধ করে রাখল। এর থেকে বোঝা যায় কি নৈরাজ্যের মধ্যে দিয়ে চলছে এই রাজ্য।” সোমবার বেলা ১১টা থেকে বেথুয়াডহরি কলেজে মনোনয়নপত্র জমা নেওয়া শুরু হয়। প্রথম থেকে কলেজে মোতায়েন ছিল পুলিশ। অভিযোগ, তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (টিএমসিপি) এবং এসএফআইয়ের কয়েকশো কর্মী-সমর্থক বাঁশ-লাঠি নিয়ে জড়ো হয়। পুলিশের সামনেই দু’পক্ষে ইট ছোড়াছুড়ি হয়। তবে তা সামাল দেয় পুলিশ। এ দিকে, পরিস্থিতি আঁচ করে কলেজে যান কৃষ্ণনগর সদর মহকুমাশাসক সব্যসাচী সরকার। |
কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথম দিকে টিএমসিপি প্রার্থীরা মনোনয়ন জমা দিতে ভিতরে যায়। তাঁরা বেরিয়ে না আসায় এসএফআই প্রার্থীরা কলেজে ঢুকতে পারছিলেন না। শেষে বেলা ১টা নাগাদ এসএফআই প্রার্থীরা জোর করে কলেজে ঢোকেন। তাঁদের একটি ঘরে বসিয়ে রেখে মনোনয়ন জমা নেন কলেজ কর্তৃপক্ষ।
ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন মণ্ডল বলেন, “যারা পরে ঢুকেছিল, তাঁদের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া নিয়ে অন্য পক্ষ বিরোধিতা করে। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যারা লাইনে দাঁড়িয়েছেন তাঁদের মনোনয়ন জমা নিতে আমরা বাধ্য। কিন্তু অন্য পক্ষ সেটা না মেনে আচমকাই ঘরে ভাঙচুর শুরু করেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশকে ঢুকতে বলি।” কলেজ সূত্রের খবর, টিএমসিপির সদস্যরা অধ্যক্ষের পাশাপাশি অধ্যাপকদের বসার ঘরেও ভাঙচুর চালায়। তৃণমূলের অভিযোগ, পুলিশ বিনা প্ররোচনায় তাঁদের ছাত্রদের উপর লাঠি চালিয়েছে। গণ্ডগোলে আহত দুই টিএমসিপির সদস্য বেথুয়াডহরি গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি।এসএফআইয়ের জেলা কমিটির সভাপতি কৌশিক দত্ত বলেন, “তৃণমূল চাইছিল না যে আমরা মনোনয়নপত্র জমা দিই। সে জন্য নানা ভাবে বাধা দিচ্ছিল। তারপরেও আমরা মনোনয়ন জমা দেওয়ায় ওরা ভাঙচুর চালায়।” টিএমসিপির জেলা সভাপতি জয়ন্ত পাল বলেন, “এসএফআইয়ের গুণ্ডাবাহিনী কলেজে ঢুকে ভাঙচুর চালিয়েছে। আমাদের বেশ কয়েকজন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র ছিঁড়ে দিয়েছে। অথচ পুলিশ আমাদের কর্মীদের উপর লাঠি চালাল।” ওই দুপুরেই টিএমসিপির সদস্যরা এলাকায় ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। |
তৃণমূল বিধায়ক কল্লোল খাঁর সাফাই, “নেত্রী অবরোধ করতে বারন করেছেন ঠিকই। কিন্তু ছাত্রদের ভাবাবেগকে অস্বীকার করি কী করে! এসএফআইকে সুবিধা করে দিতে পুলিশ আমাদের কর্মী-সমর্থকদের উপর নির্বিচারে লাঠি চালিয়েছে।” পুণ্ডরীকাক্ষ সাহারও অভিযোগ, “ছেলেদের মনোনয়নপত্র ও পরিচয়পত্র ছিঁড়ে দেয় এসএফআই। সেই সময় কলেজ কর্তৃপক্ষ এবং পুলিশ কোনও পদক্ষেপ করেননি। আমাদের ছেলেরা প্রতিবাদ করায় তাঁদের উপর লাঠি চালানো হয়। বিষয়টি রাজ্য নেতৃত্বকে জানিয়েছি। তাঁরা তদন্ত করে দোষী পুলিশকর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।” যদিও জেলার পুলিশ সুপার সব্যসাচী রমন মিশ্র বলেন, “লাঠি চালানোর কোনও ঘটনাই ঘটেনি। ভিডিও ক্যামেরায় গোটা ঘটনার ছবি তুলে রাখা হয়েছে। সেটা ভাল করে দেখে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।” ওই ঘটনার পরেই নাকাশিপাড়া থানার ওসির বদলির দাবিতে ফের জাতীয় সড়ক অবরোধ করে টিএমসিপি। সেই সঙ্গে একদল নেতা-কর্মী নাকাশিপাড়া থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান পুণ্ডরীকাক্ষবাবু, কৃষ্ণনগর উত্তরের বিধায়ক অবনী জোয়ারদার, রানাঘাট উত্তর-পূর্ব কেন্দ্রের পার্থ চট্টোপাধ্যায়, রাজ্য কমিটির সাধারণ সম্পাদক গৌরীশঙ্কর দত্ত, স্থানীয় বিধায়ক কল্লোল খাঁ অন্য নেতৃত্ব। তাঁরা দলীয় কার্যালয়ে দীর্ঘক্ষণ বৈঠক করে আহতদের সঙ্গে দেখা করতে হাসপাতালে যান। পরে থানায় গিয়ে ঘেরাও তোলেন। তারপরে তোলা হয় পথ অবরোধ।
|