প্রবন্ধ ২...
একটি চুম্বন, তিনটি পেঙ্গুইন, ১৯৬টি দেশ
মার‌্সেই চুম্বন’ জানেন কি? মাত্র চার সেকেন্ডের জন্য দুই নারীর ঠোঁটে ঠোঁট মিলে যাওয়া, ভরা জনসভায় সেই ঘনিষ্ঠ চুম্বনদৃশ্য জেরার জুলিয়ঁ নামের এক চিত্রগ্রাহক চটজলদি ফ্রেমবন্দি করে ফেলেন। ন’টি ছবিতে তোলা হয়ে থাকে সেই অন্তরঙ্গ মুহূর্ত, ফ্রান্সের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মার্সেইতে, গত অক্টোবরে। চকিতে সাড়া ফেলে দেয় সেই ছবি। আলোচনা শুরু হয়। কেন?
দীর্ঘ সতেরো বছর পর বাম উদারপন্থী দখলে ফ্রান্স। ৫২% নাগরিকের সমর্থন নিয়ে সোশ্যালিস্ট পার্টির ওঁলোদঁ গত বছর ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট হলেন, নির্বাচনী প্রচারে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সমকামীদের বিবাহের অধিকার এবং তাঁদের সন্তান দত্তক নেওয়াকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়া হবে। ক্ষমতায় আসার পরে তিনি কথা রাখতে উদ্যোগী হতেই দেশ জুড়ে শুরু হয় বিক্ষোভ। সমকাম এবং গর্ভপাত-বিরোধী আন্দোলনে যথেষ্ট সক্রিয় ফ্রান্সের এক সংগঠন আলিয়ঁজ ভিতা। গত অক্টোবরের এক দিনে গোটা ফ্রান্স জুড়ে তারা বিক্ষোভ দেখায় নতুন প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে। শ’দুয়েক মানুষ জড়ো হয়েছিলেন মার্সেই শহরেও।
‘মার্সেই চুম্বন’। প্রেম ও প্রতিবাদের প্রবল প্রতীক। দর্শকদের বিস্ময়, বিরক্তির তাৎপর্যও কম নয়! ছবি: এ এফ পি
এক দিকে নারী, আর এক দিকে পুরুষ, এই ভাবে বসেছিলেন তাঁরা, আর এক জন লোক দেবদূতের পোশাকে সভা জুড়ে ঘুরছিলেন, তাঁর শরীরে দু’টি ডানা লাগানো। একটি ডানায় লেখা ‘বাবা’, অন্যটিতে লেখা ‘মা’। বড়সড় এক ঝান্ডায় গর্বিত ঘোষণা ‘এক জন বাবা, এক জন মা। আমরা আমাদের বাচ্চাদের মিথ্যে বলি না।’ এ হেন গদগদ পারিবারিক পরিবেশেই গেরিলা কায়দায় দু’টি মেয়ের প্রবেশ। আলিঙ্গন, প্রগাঢ় চুম্বন এবং প্রস্থান। এমন আবহাওয়ায় ঘটনাটি এতই আকস্মিক, বেমক্কা এবং প্রতীকী যে আক্ষরিক অর্থেই উপস্থিত জনগণের চোয়াল ঝুলে পড়ে এবং জুলিয়ঁর ছবিটি বিখ্যাত হয়ে যায় ‘মার্সেই চুম্বন’ নামে।
ফ্রান্সে ৫৫-৬০% মানুষের সমকামীদের বিয়ের অধিকার নিয়ে কোনও সমস্যা নেই, ৫০% মানুষের সমকামীদের সন্তান দত্তক নেওয়া নিয়ে আপত্তি নেই, কিন্তু অধিকাংশ নাগরিক বিরোধিতা করছেন কোনও সমকামীর কৃত্রিম প্রজননের দ্বারা সন্তান গ্রহণের ইচ্ছেকে। বিশেষত প্যারিসের গলিপথ থেকে রাজপথ তোলপাড় পক্ষ-বিপক্ষ মিছিলে, জমায়েতে। জগতের এমন গভীর সংকটে, এই আইন প্রণয়নের বিরুদ্ধে লড়াই জারি রাখার জন্য পোপ নাকি জনা তিরিশেক ফরাসি যাজককে জরুরি এত্তেলা দিয়ে ডেকে পাঠিয়েছিলেন। তাঁর মতে, দেশ যে দিকে যাচ্ছে, তাতে এর পরে অজাচার ও বহুগামিতাকেও আইন সবুজ সংকেত দেবে। সমকামীরা বিয়ে করতে শুরু করলে গোটা সমাজব্যবস্থাটাই হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়তে বেশি সময় নেবে না। দক্ষিণপন্থী এক সেনেটর বলেছেন, ‘সমকামীদের দেশ হয়ে উঠবে ফ্রান্স, আর আগামী দশ বছরে দেশটা জনশূন্য হয়ে যাবে।’ গত জানুয়ারি মাসে লক্ষ লক্ষ মানুষ সমকামীদের বিয়ে এবং দত্তক নেওয়ার প্রস্তাবিত আইনের বিরুদ্ধে প্যারিসের রাস্তায় নেমেছেন। মূলত ক্যাথলিক চার্চ এবং দক্ষিণপন্থীদের প্রভাবে এই বিক্ষোভ। ‘আমরা কাজ চাই, সমকামীদের বিয়ে নয়’, ‘আমরা সবাই শুধুমাত্র বাবা এবং মায়ের থেকেই জন্ম নিতে পারি’, বড় বড় ব্যানারে ছেয়ে গেছে শহর। প্রশ্ন জাগে, ছবির দেশ কবিতার দেশ প্রেমের দেশও তা হলে চিরাচরিত নারী-পুরুষ প্রেমের ম্যাপের বাইরে অন্য কিছু ভাবতে গেলে এখনও কঠিন হোঁচট খায়?
আর পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাধর রাষ্ট্র? রয়, সিলো আর ট্যাংগো-র গল্প জানেন? আসলে গল্প নয়, সত্যি। নিউ ইয়র্কের সেন্ট্রাল পার্ক চিড়িয়াখানার দুই পুরুষ-পেঙ্গুইন রয় আর সিলো। তাদের প্রেম এবং যৌথতা এমন পর্যায়ে গেল, এক সময় দেখা গেল তারা একটি পাথরকে তা দিতে শুরু করেছে, অবাক কর্তৃপক্ষ একটি ডিম রাখলেন তাদের কাছে, রয় আর সিলো পালা করে তা’ দিয়ে ডিম ফোটাল। জন্ম হল এক মেয়ে-পেঙ্গুইনের, নাম রাখা হল ট্যাংগো। রয় আর সিলো-ই ট্যাংগোকে বড় করে তুলল। আর এই কাহিনি নিয়েই ২০০৫-এ ছোটদের বই লিখে ফেললেন জাস্টিন রিচার্ডসন ও পিটার পারনেল, ‘অ্যান্ড ট্যাংগো মেক্স থ্রি’। সঙ্গে সঙ্গে বইটি তুমুল বিতর্কের মুখোমুখি। ছোটদের মধ্যে ইতিবাচক ভঙ্গিতে সমকামিতার প্রসঙ্গ আনার চরম বিরোধিতা করেন রক্ষণশীল মহল। বই নিষিদ্ধ হয় বেশ কয়েকটি স্কুল লাইব্রেরিতে। ছোটদের বইটি বড়দের দুনিয়ায় বেমক্কা ঢুকে পড়ে পরিবার, তার ‘পবিত্র’ কাঠামোয় সমকামীদের বিয়ে, দত্তক নেওয়া বিষয়ে বেআন্দাজি গোল পাকিয়ে তোলে। এমনিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি রাজ্যে সমকামীদের নানাবিধ অধিকার প্রসঙ্গ বেশ হেঁয়ালির মতো। রাজ্যভেদে নীতির হেরফের হয়ে যায়। মাত্র ৯টি রাজ্য, যেমন নিউ ইয়র্ক, আইওয়া, মেরিল্যান্ড বা ওয়াশিংটনে সমলিঙ্গ-বিবাহ আইনি স্বীকৃতি পায়। ৩১টি রাজ্যে কোনও না কোনও ভাবে সমকামীদের বিয়ে বা যৌথ জীবনের অধিকার খর্ব করা হয়। এমতাবস্থায় খুবই তাৎপর্যপূর্ণ দেশের চুয়াল্লিশতম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয় বার নির্বাচিত হয়ে ওবামা-র শপথগ্রহণ বক্তৃতা। এই প্রথম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোনও প্রেসিডেন্ট শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের বক্তৃতায় সমকামীদের অধিকার রক্ষার কথা বললেন।
আর আমরা যদি চোখ ফেরাই পৃথিবীর অন্যান্য প্রান্তে? তথ্য অনুযায়ী এই সময়ে পৃথিবীর দেশের সংখ্যা ১৯৬, অথচ এত বছরের প্রতিবাদ-আন্দোলন-লড়াইয়ের পর মাত্র ৯টি রাষ্ট্রে যে-কোনও ধরনের বৈষম্যমূলক আচরণ থেকে সমকামীরা মুক্ত! অর্থাৎ, তাঁদের বিয়ের অধিকার আছে, দত্তক নিতে পারবেন, সমলিঙ্গের মানুষের প্রেমে পড়লে আইন কোনও ভাবেই ফাঁসি দেবে না, আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করাবে না অথবা এই ‘অপরাধে’ অন্য কোনও হয়রানির মুখোমুখি হতে হবে না। এই দেশগুলি হল আর্জেন্তিনা, বেলজিয়াম, কানাডা, আইসল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, সুইডেন, সাউথ আফ্রিকা এবং স্পেন। কিন্তু সত্যিই কি রাষ্ট্র তার ভঙ্গি বদলালেও সমাজ বদলে যায়? এই তালিকায় জায়গা করে নেওয়া সাউথ আফ্রিকার অভিজ্ঞতাই কিন্তু ভিন্ন কথা বলে। সে দেশে মূলত নারী-সমকামীদের অবিরাম লড়াই করে যেতে হয় সামাজিক-পারিবারিক হিংসা, ধর্ষণ, গণধর্ষণ, খুনের বিরুদ্ধে। এই দেশেই উদ্ভব হয় সেই নৃশংস পরিভাষার, corrective rape, নারীর সমকামিতা ‘সারিয়ে দিতে’ পুরুষের সংশোধনমূলক ধর্ষণ! বহু কাল ধরেই রাষ্ট্রপুঞ্জ নানা ভাবে সমকামীদের মানবাধিকার লঙ্ঘিত হওয়ার বিষয়টি নিয়ে আলাপ-আলোচনা-কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। এবং সাম্প্রতিক এক রিপোর্টে রাষ্ট্রপুঞ্জ স্বীকার করে নিচ্ছে, আজ অবধি তোয়াক্কাহীন অন্তত ৭৬টি দেশ, যেখানে সমকামীদের প্রতি সমাজ তো বটেই, রাষ্ট্রও বৈষম্যমূলক আচরণ করে। এই দেশগুলির মধ্যে আছে আলজিরিয়া, ক্যামেরুন, মিশর, ঘানা, কেনিয়া, মরিশাস, সেনেগাল, জিম্বাবোয়ে, বাংলাদেশ, ভুটান, ইরাক, মালয়েশিয়া, শ্রীলঙ্কা, বার্বাডোজ কিংবা জামাইকা। বাছতে গেলে গাঁ উজাড় হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। তবে এর মধ্যে বৈষম্যের মাত্রার রকমফেরও অবশ্যই আছে। কেউ জেলে পুরে দেয় তো কেউ জরিমানা করার সঙ্গে চাবুক মারে বা পাথর ছোড়ে, কেউ মিলিটারিতে প্রকাশ্যে আসা সমকামীকে জায়গা দিলেও, বিয়ে, দত্তক নেওয়া বা যৌথ জীবনকে কোনও স্বীকৃতি দেয় না। এই ৭৬টি দেশের মধ্যে অন্তত ৫ থেকে ৭টি দেশ শুধুমাত্র গ্রেফতার, জেলবন্দি এবং নানাবিধ শাস্তি দিয়েই রেহাই দেয় না, সমকামিতার ‘অপরাধে’ এমনকী মৃত্যুদণ্ডও দেয়। এই দেশগুলি হল ইরান, মরিতানিয়া, সৌদি আরব, সুদান, ইয়েমেন, আফগানিস্তান এবং নাইজিরিয়া। আর তথাকথিত উন্নত দেশগুলিতে? সেখানেও কিন্তু পথ খুব মসৃণ নয়। যেমন ইংল্যান্ডে ১৯৬৭ সাল থেকেই সমকামিতা বেআইনি নয়, কিন্তু সমকামী বিয়ের সমর্থনে হাউস অব কমন্স-এ বিল পাশ করা হয়েছে এই তো সপ্তাহখানেক আগে (প্রয়োগের আগে আর কিছু তর্কাতর্কি বাকি আছে)। জার্মানিতে ১৯৬৮ সাল থেকে সমকামিতা স্বীকৃত, কিন্তু বিয়ে অথবা দত্তক নেওয়া সম্পূর্ণ ভাবে মানা হয়নি। জাপানে আইনি অসুবিধা না থাকলেও সম্পর্কের কোনও স্বীকৃতি নেই, যেমন বিয়ে বা দত্তক নেওয়া বিষয়ে রাষ্ট্র নীরব। চিনেরও প্রায় একই অবস্থান। অস্ট্রেলিয়ার লেবার পার্টির সদস্য এবং মন্ত্রী পেনিলোপে ওয়ং, সংসদে থাকাকালীন প্রকাশ্যে আসা প্রথম নারী-সমকামী। ২০১১ সালে তাঁর সঙ্গিনী সোফি কৃত্রিম প্রজননের সাহায্যে তাঁদের সন্তান আলেক্সান্দ্রার জন্ম দেন। সেই নিয়ে মোটেই কোনও জলঘোলা হয়নি, গেল-গেল রব ওঠেনি। যদিও অস্ট্রেলিয়া সমকামিতাকে পুরোপুরি স্বীকৃতি দেয়নি। তবু বলা যায়, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, আইল অফ মান বা পোর্তুগালের মতো দেশের পরিবেশ মোটেই অন্যান্য দেশের মতো নিষ্ঠুর বা প্রতিকূল নয়। আবার রাশিয়াতে খাতায়-কলমে সমকামিতার স্বীকৃতি সত্ত্বেও গত বছরেও মস্কোর এক ‘গে ক্লাব’-এ হামলা হওয়ার পর এক যাজক বলেছেন: যা ঘটেছে, তা তিনি পুরোপুরি সমর্থন করেন, কারণ ধর্মমতে এদের পাথর ছোড়াই উচিত। এবং তিনি দুঃখিত যে, যাজক হওয়ার কারণে তিনি নিজে গিয়ে এই সব নোংরা মানুষদের দু’ঘা দিয়ে আসতে পারছেন না। ‘শিশুদের মধ্যে সমকামিতা বিষয়ে আলোচনা/ প্রচার’ বন্ধ করতে সরকার থেকে এক নিষেধাজ্ঞা জারির উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। গত বছর রাশিয়ার শীর্ষ আদালত দেশের রাজধানীতে গে প্রাইড মার্চের উপর এমন এক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে, যা চাইলে পরবর্তী একশো বছরের জন্যও বলবৎ থাকতে পারে! এই সমস্ত সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রাশিয়ার সাম্প্রতিক সময় সাক্ষী থাকছে প্রতিরোধ-প্রতিবাদ-মিছিল-গ্রেফতারের।
আর আমাদের দেশ? সমলিঙ্গের দু’টি মানুষের যৌনসম্পর্ক অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে না জানিয়ে দিল্লি হাইকোর্ট সমকামীদের পক্ষে ২০০৯ সালে ঐতিহাসিক রায় দিয়েছে। ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারা কিন্তু এখনও বাতিল হয়ে যায়নি। দিল্লি হাইকোর্টের রায়-কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যে আবেদন করা হয়েছে, তার শুনানি সম্পূর্ণ হয়েছে। এখন মহামান্য আদালতের রায়দানের অপেক্ষা।
এই লেখা যখন লিখছি, ফ্রান্সের জাতীয় পরিষদ তখন বিবাহের সংজ্ঞার সীমানাচিহ্ন পাল্টে ফেলছে। বিয়ে শুধুমাত্র দু’টি নারী-পুরুষের মধ্যেই নয়, যে কোনও দু’জন মানুষের মধ্যে সংঘটিত হতে পারে। সমলিঙ্গের মানুষের বিবাহ অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এই মর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুচ্ছেদ ২৪৯-৯৭ ভোটে জয়ী হয়েছে। কিন্তু সত্যিই কি রাষ্ট্র-আইন-রাজনীতি-চিকিৎসাশাস্ত্রের কেতাবি কথা সামাজিক ঘৃণা-অস্বীকৃতি-হিংসা দূর করতে পারে? পারে কি ‘অ্যান্ড ট্যাংগো মেক্স থ্রি’-কে দ্বিধাহীন ভাবে নিজ সন্তানের হাতে তুলে দিতে?


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.