বিশ্বজোড়া মন্দার ঘোর দুর্দিনেও (২০০৮-’০৯) দেশের বাজারে অন্তত যাত্রীবাহী গাড়ির বিক্রি কমেনি ভারতে। কিন্তু চলতি অর্থবর্ষের শেষে ঠিক সেটাই হওয়ার আশঙ্কা করছে গাড়ি শিল্প। এ বার যাত্রী-গাড়ির (প্যাসেঞ্জার কার) বিক্রি বাড়া তো দূরের কথা, বরং এক দশকে এই প্রথম তা সঙ্কুচিত হবে বলে মনে করছে তারা।
দেশে গাড়ি শিল্প যে ধুঁকছে, দীর্ঘ দিন ধরেই সেই অভিযোগ জানিয়ে আসছে গাড়ি নির্মাতাদের সংগঠন সিয়াম। সোমবার তারা জানায়, গত এপ্রিল থেকে জানুয়ারির হিসাব ধরলে, আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ইতিমধ্যেই যাত্রী-গাড়ির বিক্রি কমেছে ১.৮%। বাণিজ্যিক গাড়ির ২১%। এখনই বাজারে নাটকীয় পরিবর্তনের আশাও নেই। তাই বছর শেষে বিক্রি কমার সিঁদুরে মেঘ দেখছে তারা। |
সিয়ামের ডিজি বিষ্ণু মাথুর বলেন, “যা পরিস্থিতি, তাতে অর্থবর্ষের শেষে দেশে যাত্রী-গাড়ি বিক্রি বৃদ্ধির হার শূন্যের নীচে নামতে পারে। সার্বিক ভাবে দেশের আর্থিক অবস্থা খারাপ। সম্প্রতি রিজার্ভ ব্যাঙ্ক কিছুটা সুদ কমালেও, ক্রেতাদের আগ্রহের পারদ চড়েনি।” যে কারণে সঙ্কট থেকে মুক্তি পেতে বাজেটে উৎপাদন শুল্ক কমিয়ে ১০% করার দাবি জানাচ্ছেন তাঁরা। চাইছেন, জেএনএনইউআরএম প্রকল্পে বাণিজ্যিক গাড়ির জন্য বিশেষ সুবিধাও।
দেশের আর্থিক বৃদ্ধির হার চলতি অর্থবর্ষের শেষে ৫ শতাংশে নামতে পারে বলে সম্প্রতি পূবর্ভাস দিয়েছিল সিএসও। কিন্তু তাকে নস্যাৎ করে অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের দাবি, নভেম্বরের পর থেকে অর্থনীতিতে উন্নতির লক্ষণ স্পষ্ট। এর দৌলতে বৃদ্ধি এ বার ৫.৫% এবং পরের বার ৬-৭ শতাংশে পৌঁছবে বলে আশাবাদী তিনি।
এই পরিস্থিতিতে যাত্রী-গাড়ির এমন করুণ পরিসংখ্যানে তাই খটকা লাগছে অনেকের। কিন্তু সংশ্লিষ্ট মহলের ব্যাখ্যা, অর্থনীতিতে এত দিন ধরে যে ‘দৈন্য দশা’ চলছে, তার পুরোদস্তুর প্রভাব বুঝতে পারছে গাড়ি শিল্প। কারণ, যখন অর্থনীতিতে মন্দার বাতাবরণ থাকে, তখন ব্যবসায়িক ও বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড কমায় এমনিতেই হ্রাস পায় বাণিজ্যিক গাড়ি বিক্রি। প্রভাব পড়ে যাত্রী-গাড়ি বিক্রিতেও। অনেক সময়ই আবার যাত্রী-গাড়ির উপর তার সম্পূর্ণ প্রভাব বোঝা যায় সব থেকে খারাপ সময় পেরোনোর পর। কারণ, দেশে বৃ্দ্ধির হার ঢিমে থাকার মানে আয় সে ভাবে না বাড়া। দীর্ঘ দিন যা চললে, হাত খুলে খরচ করার বিষয়ে আস্থা কমে মানুষের। খারাপ সময়ের কথা ভেবে সঞ্চয় বাড়াতে গিয়ে আরও বেশি খরচে রাশ টানেন তাঁরা। যার প্রতিফলন ঘটে যাত্রী-গাড়ির বাজারে। এ ক্ষেত্রেও তা হওয়াই সঙ্কোচনের আশঙ্কা তৈরির মূল কারণ বলে মনে করছে গাড়ি শিল্প। |