অ্যালুমিনিয়াম কারখানায় কর্মীদের আটকে রেখে লুঠপাট চালাল এক দল দুষ্কৃতী। বর্ধমান-কাটোয়া রোডে জাজিগ্রামের কাছে সোমবার ভোরের ঘটনা। কারখানার অন্যতম মালিক অংশুমান দত্ত পুলিশে অভিযোগ করেন, কয়েক লক্ষ টাকার অ্যালুমিনিয়াম লুঠ হয়েছে। পুলিশ কারখানায় গিয়ে তদন্ত শুরু করেছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, রবিবার ভোরে জাজিগ্রামে একটি মালবাহী গাড়ির ৬টি চাকা চুরি যায়। গাড়ির মালিক, কলকাতার বড়বাজারের বাসিন্দা মির্জা সিংহ অভিযোগ করেন, শনিবার মুম্বই থেকে আঙুর পৌঁছতে কাটোয়া এসেছিল গাড়িটি। তার পরে রাস্তায় দাঁড়িয়েছিল সেটি। রবিবার ভোরে দুষ্কৃতীরা চালক দলজিৎ সিংহ ও আজমের সিংহের মাথায় পিস্তল ধরে চাকা খুলে নিয়ে যায়। সোমবার ভোরে একই জায়গায় অ্যালুমিনিয়াম কারখানায় ডাকাতি হওয়ায় চিন্তায় পড়েছে পুলিশ। কাটোয়া থানা এলাকায় সম্প্রতি বেশ কিছু অপরাধের ঘটনায় উদ্বিগ্ন বাসিন্দারাও।
পুলিশ জানায়, সোমবার ভোর ৩টে থেকে ৪টে নাগাদ জাজিগ্রামে ওই কারখানায় লুঠপাট হয়। প্রায় ৩০ কুইন্টাল অ্যালুমিনিয়ামের পাত, ৬টি মোবাইল, একটি মোটরচালিত ভ্যান ও দু’বস্তা অ্যালুমিনিয়ামের বড় হাঁড়ি নিয়ে মালবাহী গাড়িতে চড়ে পালায় দুষ্কৃতীরা। কারখানার পাঁচ কর্মীকে হাত-পা বেঁধে ঘরে আটকে রাখে দুষ্কৃতীরা। |
তছনছ অ্যালুমিনিয়াম কারখানা। —নিজস্ব চিত্র। |
খবর পেয়ে কারখানায় যান কাটোয়ার ওসি সনৎ দাস, সিআই শচীন্দ্রনাথ পড়িয়া, এসডিপিও (কাটোয়া) ধ্রুব দাস, জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) তরুণ হালদার।
স্থানীয় ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, লুঠপাটের সময়ে অদূরেই ছিল পুলিশের গাড়ি। পুলিশ অবশ্য জানায়, পাঁচিল ঘেরা কারখানায় কী হচ্ছে, বাইরে থেকে বোঝা সম্ভব নয়। পুলিশের ধারনা, ১০-১২ জন দুষ্কৃতী পিছনের বেড়া টপকে কারখানায় ঢোকে। কারখানার কর্মী চন্দন সাহা অভিযোগ, “ভোর ৪টে নাগাদ কাজে যোগ দিতে দেখি, কিছুটা দূরে মালবাহী গাড়ি দাঁড়িয়ে রয়েছে। গেটে ঢুকতেই দু’জন মাথায় পিস্তল ধরে। তার পরে গামছা দিয়ে মুখ-হাত বেঁধে একটি ঘরে ঢুকিয়ে দেয়।” আর এক কর্মী, বীরভূমের নলহাটির বাসিন্দা বরুণ পালেরও বক্তব্য, “চার জন দোতলার একটি ঘরে ছিলাম। আমাদের মোবাইলগুলি কেড়ে নিয়ে মুখ-হাত বেঁধে নীচের একটি ঘরে আটকে রাখে।”
পুলিশ জানায়, দুষ্কৃতীদের দাপাদাপি বন্ধ হতে কোনও রকমে বাঁধন খুলে কর্মীরা রড দিয়ে দরজা ভেঙে বাইরে আসেন। খবর দেন অংশুমানবাবুকে। অংশুমানবাবু বলেন, “এই কারখানা আগে অনেক বড় ছিল। কয়েক বছর আগে ডাকাতি হওয়ার পরে অনেক দিন কারখানা বন্ধ ছিল। নতুন করে শুরু হতেই ফের ডাকাতি হল।”
বাসিন্দাদের ক্ষোভ, কাটোয়া শহর লাগোয়া এলাকায় চুরি বাড়ছে। কয়েক দিন আগে কাটোয়ার দেবকুণ্ডুতে চোর সন্দেহে গণপ্রহারে এক জনের মৃত্যু হয়। কাটোয়া হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, প্রায়ই চোর সন্দেহে গণপ্রহারে আহতদের ভর্তি করছে পুলিশ। কাটোয়ার গৌরাঙ্গপাড়ার বাসিন্দা অমরনাথ দাস, স্টেশন এলাকার রাজীব সাহাদের দাবি, “সাইকেল বা মোটরবাইক রেখে কোথাও কাজে গেলে ফিরে এসে পাওয়ার সম্ভাবনা কম।” সিপিএমের কাটোয়া জোনাল সম্পাদক অঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “পুলিশ তার দায়িত্ব পালন না করাতেই এই পরিস্থিতি।” স্থানীয় কংগ্রেস বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ও বলেন, “পুলিশকে আরও সজাগ হতে হবে।” জেলা পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা বলেন, “তদন্ত চলছে। আরও সতর্ক হতে হবে।” |