না জিত্! না দেব! সিনেমা ‘হিট’ করাতে পারলেন না তাঁদের কেউই। রবিবার সন্ধ্যায় কাঞ্চনজঙ্ঘায় ২০ হাজার দর্শক যে ছবিটা দেখলেন সেটার বক্স অফিস ‘হিরো’ আদিত্য অগ্রবাল। তেলেগু ছবির নায়ক। হিট করালেন ‘তেলেগু ওয়ারিয়র্স’-কে। মনামি, সায়ন্তিকা, রাইমা, কনীনিকাদের মেজাজ হারানোই স্বাভাবিক। তাঁদের হিরোরা পর্দায় যতই ‘লে ছক্কা’, ‘চ্যালেঞ্জ’, ‘টার্গেট’ ছবি করে হইচই ফেলুন বাইশ গজে ব্যাট হাতে ‘নৌকাডুবি’ হল তাঁদের। নৌকা ডুবির অভিনেতা যিশু অবশ্য তরী ঘাটে ভেড়ানোর জন্য অনেক চেষ্টা করেছিলেন। তবে সেই চেষ্টা মাঠেই মারা গিয়েছে শেষ পর্যন্ত।
|
মাঠের রেজাল্ট যাই হোক ছুটির দিন গোটা শিলিগুড়ি ভিড় করেছিল তারকাদের ক্রিকেট দেখতে। মাঠে উপস্থিত শ্রীদেবী থেকে টলিউডের দেব, জিত্, রাইমারা। সাম্প্রতিক ‘মাক্ষি’ ছবির অভিনেতা সুদীপ, মারাঠি ছবির নায়ক ঋতেশ দেশমুখদের একসঙ্গে দেখার এমন সুযোগ হাত ছাড়া করতে চাননি অনেকেই। সে ক্রিকেট নাই বুঝুক মাঠে হাজির হওয়াটাই ছিল বড় ব্যাপার। শিলিগুড়িতে সেলিব্রেটি ক্রিকেট হচ্ছে সেটাও জানাজানি হয়েছে অনেক দেরিতে। কলকাতায় ইডেনে ম্যাচ করার কথা প্রথমে ভেবেছিলেন উদ্যোক্তারা। কলকাতায় তা না হওয়ায় শেষ বেলায় শিলিগুড়িতে খেলা করাতে হয়েছে। মাঠে ভিড় টানতে উদ্যোক্তারা তাই টিকিটের দামও রাখেননি। তবে টিকিট থাকাটা বাধ্যতামূলক ছিল। তাই কাউন্টারের সামনে লাইনে দাঁড়িয়ে বা চেনাপরিচিতদের মাধ্যমে চট জলদি যাঁরা টিকিট সংগ্রহ পেতে তত্পর হয়েছিলেন তাঁরাই লাভবান হয়েছেন। ভিআইপি গ্যালারির দিকে যাঁরা বসেছিলেন তাঁরা অনেকেই সুযোগ বুঝে মাঝে ঢুকে তারকাদের পাশে দাঁড়িয়ে-বসে একসঙ্গে ছবিও তুলেছেন। |
বিকেল ৫টার বেঙ্গল টাইগার্সদের ম্যাচ শুরুর সময় মাঠের বাইরে তখনও প্রচুর লোক ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করছেন। পুলিশকে তাই ভিড় সামাল দিতে বেগ পেতে হয়েছে। লাঠিও চালাতে হয়েছে। কাঞ্চনজঙ্ঘায় সাম্প্রতিক কালে ফেডারেশন কাপের মতো ফুটবল ম্যাচ দেখতে ভিড় আর অতীতে নেহেরু কাপের মতো খেলা নিয়ে উন্মাদনা দেখেছে শিলিগুড়ি। কিন্তু ক্রিকেটে এই ভিড় এটাই প্রথম। যা দেখে উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব আবেগে বলেই ফেলেছেন, “শিলিগুড়িতে ফুটবল নিয়ে উত্সাহ আমরা আগে দেখেছি। কিন্তু এখানে ক্রিকেট নিয়েও যে হাজার হাজার মানুষ উত্সাহী তা স্পষ্ট। আলাদা ক্রিকেট স্টেডিয়াম গড়ার চিন্তাভাবনাও আমরা করছি। যেখানে ‘ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ’ (আইপিএল)-এর মতো ক্রিকেট ম্যাচের আয়োজন করা যেতে পারে।” |
এ দিন দু’টি ম্যাচ হয়েছে কাঞ্চনজঙ্ঘায়। প্রথম ম্যাচে সুদীপের কর্ণাটক বুল্ডোজার্স ৮ উইকেটে হারিয়েছে ঋতেশ দেশমুখের বীর মরাঠিকে। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ১৪০ রান তোলে কর্ণাটক। জবাবে ৩ ওভার বাকি থাকতে প্রয়োজনীয় রান তুলে নেন সুদীপ, মঞ্চু নাথ, ধ্রুব শর্মাদের দল। ৩৮ বলে ৫২ রান করে ম্যাচের সেরা ধ্রব শর্মা। দ্বিতীয় ম্যাচ ছিল বেঙ্গল টাইগার্সদের। শুরুতেই যেভাবে পিছিয়ে পড়ে জিত্ দেবরা তাদের দর্শকরা থিতিয়ে পড়ছিল। ঘোষককে তাই মাইকে বারবার বলতে শোনা গিয়েছে ‘চুপ করে কেন শিলিগুড়ি’, ‘বেঙ্গল টাইগার্স’দের জন্য তোমাদের সাপোর্ট দরকার’। এমনি গ্যালারি থেকে চিত্কার করে সাড়া দিয়েছে তারা। এক সময় ১০ ওভারে ৩ উইকেটে মাত্র ২৪ রান ছিল। ব্যাট হাতে যিশু আপ্রাণ চেষ্টা করছিল টেনে তুলতে। |
সঞ্জয় সাহা, কল্লোল, সুনীল, পাপিয়াদের মতো সমর্থকরা উদ্যোক্তাদের নির্দিষ্ট নম্বরে টেক্সট করছেন: ‘বেস্ট অফ লাক বেঙ্গল, ‘ বাংলা গর্জন করো’। যিশুকে ৬ মারতে দেখে স্টেডিয়াম উত্তাল হয়। শেষ পর্যন্ত যিশুর ব্যক্তিগত ২৯ রানের জোরে বেঙ্গল টাইগার্সের ৬৮ রান ওঠে। স্কোর বোর্ডে দেব শূন্য, জয় ২ রান। তেলেগুদের ব্যাট করতে নামার আগে মনামি, সায়ন্তিকারা বলেন, “ম্যাচ এখনও শেষ হয়নি। আমরা আশাবাদী।” ব্যাট হাতে আদিত্য অবশ্য তাদের আশায় জল ঢেলে দিয়েছে। ৩৭ বলে ৫৬ রান করেন। তাঁর মধ্যে দু’টি ছক্কা এবং ৯ টি বাউন্ডারি রয়েছে। ম্যাচের সেরা তিনিই।
|
ছবি তুলেছেন বিশ্বরূপ বসাক। |