আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কায় সিপিএম এবং কৃষকসভাকে দলীয় কর্মসূচির অনুমতি দিল না পুলিশ। কেতুগ্রাম ১ ব্লক অফিসে স্মারকলিপি দেওয়ার অনুমতি না মেলায় ক্ষুব্ধ সিপিএম। তাদের অভিযোগ, হামলা চালিয়েও কর্মসূচি বন্ধ করা যাচ্ছে না দেখে এ বার প্রশাসনকে কাজে লাগাচ্ছে শাসক দল তৃণমূল। পুলিশ অবশ্য এ কথা উড়িয়ে দিয়েছে। পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা বলেন, “ওই এলাকায় আইনশৃঙ্খলার সমস্যা রয়েছে। উত্তেজনাও রয়েছে। এই অবস্থায় কোনও রাজনৈতিক দলকে সভা করার অনুমতি দিলে সমস্যা বাড়বে। আমরা বলেছি, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার পরে কর্মসূচি নেওয়া হোক।”
কেতুগ্রাম ১ ব্লকে নিয়মিত অশান্তি লেগেই রয়েছে। ব্লকের কান্দরা-সহ বেশ কয়েকটি জনবহুল এলাকায় গত লোকসভা ভোটের পর থেকে কোনও সভা করতে পারেনি সিপিএম। তিন বছর ধরে বন্ধ পড়ে রয়েছে দু’টি লোকাল কমিটি-সহ চারটি দলীয় কার্যালয়। সিপিএম সূত্রে জানা গিয়েছে, জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে মালদহে কৃষকসভার রাজ্য সম্মেলন হয়। সেখানে ঠিক হয়, তৃণমূলের ‘অত্যাচারের’ প্রতিবাদ-সহ নানা দাবিতে রাস্তায় নেমে আন্দোলন করতে হবে। আর এই আন্দোলনের জন্য এখনই উপযুক্ত সময় বলে দাবি কৃষকসভার।
সিপিএম সূত্রে খবর, সেই অনুযায়ী আগামী মঙ্গলবার দুপুরে বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে কেতুগ্রাম ১ বিডিও-কে স্মারকলিপি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কান্দরার পীরতলায় সমাবেশেরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এক সিপিএম নেতার কথায়, “লোকসভা নির্বাচনের পরে কান্দরায় এই প্রথম আমাদের কোনও গণ সংগঠন জনসভা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এই সভা সফল হলেই আমরা দলীয় কার্যালয়গুলি খোলার জন্য উদ্যোগী হতাম।” ২৯ জানুয়ারি বিডিও এবং কেতুগ্রাম থানায় স্মারকলিপি দেওয়া ও জনসভার জন্য অনুমতি চেয়ে আবেদন জানিয়েছিল কৃষকসভা। বিডিও স্মারকলিপি জমার অনুমতি দিলেও রবিবার সকালে কেতুগ্রাম থানার পুলিশ সিপিএম নেতাদের জানিয়ে দেয়, আইনশৃঙ্খলা ‘বিঘ্নিত’ হতে পারে, তাই তাঁরা অনুমতি দিতে পারছেন না।
সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর অন্যতম সদস্য অচিন্ত্য মল্লিকের অভিযোগ, “৬ ফেব্রুয়ারি থেকে তৃণমূল আমাদের উপরে সন্ত্রাস চালাচ্ছে। আমাদের নেতা-কর্মীদের নামে মিথ্যা অভিযোগ করছে। তা সত্ত্বেও মঙ্গলবারের কর্মসূচির ব্যাপারে কৃষকসভা অটল ছিল। আমাদের আটকানো যাচ্ছে না দেখে পুলিশকে সামনে রেখে আন্দোলনের রাস্তা বন্ধ করে দিল তৃণমূল।” সিপিএমের অভিযোগ, ৬ ফেব্রুয়ারি সকালে তাদের পোস্টার ছিঁড়ে দেয় তৃণমূলের লোকজন। তার পরে কেতুগ্রাম ১ (দক্ষিণ) লোকাল কমিটির সম্পাদক আনসারুল হক ও ওই কমিটির সদস্য সৈয়দ আবুল কাদেরের বাড়ি ভাঙচুর করা হয়। এর পরে পালটিয়া ও বাঁশড়া গ্রামে সিপিএম কর্মীদের মারধর, বাড়ি ও দোকানে লুঠপাটের অভিযোগও রয়েছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। সিপিএমের ওই লোকাল কমিটির সদস্য সৈয়দ আবুল কাদেরের অভিযোগ, “প্রতি দিন সকাল থেকে রাত অবধি আমাদের কর্মী-সমর্থকদের বাড়ি গিয়ে হুমকি দিচ্ছে তৃণমূলের মোটরবাইক বাহিনী। যেখানে আমাদের প্রভাব রয়েছে, সেখানেও গিয়ে ধমক দিচ্ছে তারা। বারবার পুলিশকে জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি।”
তৃণমূলের কেতুগ্রাম ১ ব্লক সভাপতি রত্নাকর দে-র অবশ্য পাল্টা অভিযোগ, “কর্মসূচির নাম করে সিপিএম এলাকায় গণ্ডগোল পাকাচ্ছে। আমাদের লোকেদের উপরে আক্রমণ করছে। আমরা কেতুগ্রাম থানায় অভিযোগ করেছি।” তাঁর আরও বক্তব্য, “এলাকা শান্ত রাখার জন্য সিপিএমের উচিত পুলিশকে সাহায্য করা।” |