জমি ফিরে পেতে সুর চড়াচ্ছে মোর্চা
পাহাড়ে এসে ক্ষমা চান মুখ্যমন্ত্রী: গুরুঙ্গ
ক্রমশ ‘কোণঠাসা’ হয়ে পড়ায় রাজ্য সরকার এবং তৃণমূলের বিরুদ্ধে ক্রমাগত সুর চড়াচ্ছেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সভাপতি বিমল গুরুঙ্গ। শনিবার জিটিএ এলাকায় ১২ ঘণ্টার বন্ধের পরে গুরুঙ্গ আরও এক বার সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণ করলেন। এ বার তাঁর বক্তব্য, “আমরা গোর্খাল্যান্ডের দাবি তোলায় নিজেকে ‘রাফ অ্যান্ড টাফ’ বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি পাহাড়ে এসে সে জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন। তা না হলে মোর্চা-তৃণমূল সম্পর্ক আর স্বাভাবিক হবে না।”
জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উত্তরবঙ্গ সফরের পর থেকে মোর্চার সঙ্গে তৃণমূলের সম্পর্কের অবনতি হয়েছে দ্রুত। কিন্তু এই সময়ে তৃণমূলের কোনও নেতাই মোর্চার নেতাদের সম্পর্কে প্রকাশ্যে কোনও সমালোচনা করেননি। এ দিনও সেই সুরই বজায় রেখে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব দার্জিলিংয়ে বলেছেন, “আমি পাহাড়ে এসেছি শান্তির জন্য। আলোচনা করে দূরত্ব কমানোর জন্য। ধৈর্য হারাব না।”
মোর্চার অন্দরের খবর, প্রকাশ্যে তৃণমূল নেতারা যাই বলুন, রাজ্য সরকার কিন্তু হাবেভাবে বুঝিয়ে দিচ্ছে, মোর্চাকে তারা কোণঠাসাই করে ফেলতে চায়।
প্রথমত, মোর্চার দাবিকে একরকম উপেক্ষাই করে লেপচা পর্ষদ গঠন করেছে রাজ্য।
দ্বিতীয়ত, প্রকাশ্য সভায় জিটিএ-র প্রধান সচিবের পদ থেকে দার্জিলিংয়ের জেলাশাসক সৌমিত্র মোহনকে সরাতে বললেও সে কথা এখনও মানেনি রাজ্য।
সিংমারির দলীয় কার্যালয় থেকে বন্ধের তদারকি
বিমল গুরুঙ্গের। শনিবার। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক
তৃতীয়ত, একই দিনে মহাকরণে প্রথমে গোর্খা লিগের প্রয়াত নেতা মদন তামাংয়ের স্ত্রী ভারতী তামাং এবং তারপরে মোর্চা ঘনিষ্ঠ আদিবাসী নেতা জন বার্লা ও তাঁর অনুগামীদের সঙ্গে দেখা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। গুরুঙ্গ ঘনিষ্ঠ নেতাদের বক্তব্য, এর ফলে পাহাড়ে মোর্চা সভাপতির প্রভাব ধাক্কা খেয়েছে। মোর্চা বিরোধী শক্তিগুলিও সে ক্ষেত্রে জোট বাঁধার সাহস পাচ্ছে। সেই জন্যই মাটি কতটা শক্ত তা পরীক্ষা করতে বন্ধ ডেকেছিলেন গুরুঙ্গ।
এই দিন তাই গৌতমবাবু বারবার আলোচনায় বসার আহ্বান জানালেও তা সরাসরি প্রত্যাখ্যান করলেন গুরুঙ্গ। গৌতমবাবু ছিলেন রিচমন্ড হিলে, গুরুঙ্গ মোর্চার সিংমারির সদর দফতরে। দূরত্ব বড় জোর ৫ কিলোমিটার। তবু দেখা হল না তাঁদের মধ্যে। বরং গুরুঙ্গ এই দিন বলেন, “গণ্ডগোল ছড়াতেই পাহাড়ে এসেছেন গৌতম দেব। আমি কেন তাঁর সঙ্গে দেখা করব?” গুরুঙ্গ বলেন, “আমাদের কোণঠাসা করার চেষ্টা হচ্ছে। কিন্তু পাহাড়ে যে আমরাই শেষ কথা বলি, তা এ দিনের বন্ধ থেকে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।”
তবে মোর্চা বিরোধী আদিবাসী বিকাশ পরিষদ এবং জিএনএলএফের দাবি, বন্ধ সফল হয়েছে কেবল পাহাড়ে। সমতল লাগোয়া জিটিএ এলাকায় বন্ধ বিরোধী মিছিল হয়েছে। জনজীবনও স্বাভাবিক ছিল। আদিবাসী বিকাশ পরিষদের দাবি, পাহাড়ে মোর্চার পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গিয়েছে বলেই মুখ্যমন্ত্রীকে বারংবার আক্রমণ করে যাচ্ছে। এই অবস্থায় গোর্খাল্যান্ডের দাবি তুলেই ফের পাহাড়ে জমি ফিরে পেতে চাইছে মোর্চা। একই সঙ্গে কেন্দ্রের উপরে চাপ রাখতে কয়েকজন শীর্ষ নেতা দিল্লিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্না চালিয়ে যাচ্ছেন।
গুরুঙ্গ বারবার এই পর্বে সিপিএমের প্রশংসা করেছেন। শনিবার কোচবিহার জেলা সম্মেলনে সিটুর সাধারণ সম্পাদক শ্যামল চক্রবর্তী অবশ্য বলেন, “বিমল গুরুঙ্গের সব কথা আমরা সমর্থন করি না। তাঁর কিছু দাবি সমর্থন করি, কিন্তু কিছু বিরোধিতাও রয়েছে।” প্রাক্তন পুরমন্ত্রী সিপিএম নেতা অশোক ভট্টাচার্যেরও বক্তব্য, “বরাবরই বলছি, মোর্চা-তৃণমূলের মধ্যে কোনও বোঝাপড়া রয়েছে। তা কোনও নাটকীয় মোড় নেয় কি না, সেটাই দেখার।”
লেপচা উন্নয়ন পর্ষদ গঠনের বিরোধিতা করেই এই দিন বন্ধ ডেকেছিল মোর্চা। কিন্তু রাজ্য ও কেন্দ্রের উপরে চাপ ধরে রাখার পাশাপাশি পাহাড়েও ঘর গোছাতে চাইছে তারাা। তাই লেপচাদের তরফে পাহাড়ে শান্তি ও স্বাভাবিক পরিস্থিতি বজায় রাখার দাবিতে বুধবার থেকে কালিম্পঙে যে অনশন শুরু হয়েছে, বিধায়ক হরকাবাহাদুর ছেত্রীকে সেই অনশন তুলতে পাঠানো হয়েছিল। তবে অনশন ওঠেনি। উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রীও এই দিন সন্ধ্যায় তাঁদের একই অনুরোধ করে সফল হননি।
এ দিন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী পাহাড়ের পরিস্থিতি নিয়ে প্রশাসনিক বৈঠক করেন। দার্জিলিঙের জেলাশাসক, আইজি, পুলিশ সুপার ছিলেন। তবে বৈঠক চলাকালীন খবর যায়, দার্জিলিঙের জেলাশাসক তথা জিটিএ-এর প্রধান সচিব সৌমিত্র মোহনের মা প্রয়াত হয়েছেন। সন্ধ্যায় দার্জিলিং থেকে বাড়ি রওনা হন জেলাশাসক।
এ দিনের বন্ধে পাহাড়ের দোকানপাট সমস্ত বন্ধ ছিল। টয়ট্রেন চলাচল করেনি। ম্যালে ব্যাডমিন্টন খেলছিলেন দক্ষিণ কোরিয়ার বাসিন্দা উইল্ড কিম। বললেন, “বন্ধের জন্য গাড়ি না মেলায় কোথাও যেতে পারছেন না। অগত্যা ব্যাজমিন্টন।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.