নিজস্ব সংবাদদাতা • নলহাটি |
রুশদি-বিতর্ক থেকে সরছে না তৃণমূল। বরং রাজ্যের তিন বিধানসভায় উপ-নির্বাচনের আগে (পঞ্চায়েত ভোটও আসন্ন) তারা সুর চড়াচ্ছে। বাড়াচ্ছে তীব্রতা। দিনকয়েক আগে তৃণমূল সাংসদ সুলতান আমেদ বলেছিলেন, “রুশদি কোনও লেখক নন, তিনি এক জন শয়তান।” শনিবার ‘সেটানিক ভার্সেস’-এর বিতর্কিত লেখককে কার্যত ‘সমাজবিরোধী’, ‘সমাজের শত্রু’র আখ্যা দিলেন রাজ্য সরকারের মুখপাত্র তথা পুরমন্ত্রী ফিরহাদ (ববি) হাকিম।
কলকাতা বইমেলার ‘লিট-মিট’-এ তাঁকে আসতে দেয়নি কলকাতা পুলিশ এবং তাঁকে বলা হয়েছে, গোটা ব্যাপারটাই হয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়এই মর্মে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন রুশদি। প্রাথমিক বিস্ফোরণের পরে, সে প্রসঙ্গ যেন কিছুটা মাটিচাপা পড়ে গিয়েছিল। কিন্তু বিধানসভার আসন্ন উপনির্বাচন উপলক্ষে বীরভূমের নলহাটিতে প্রচারসভায় গিয়ে এ দিন পুরমন্ত্রী বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি না, কারও ভাবাবেগে আঘাত করলে বড় লেখক হওয়া যায়। যাঁরা এ ধরনের লেখক তাঁরা সমাজের শত্রু এবং সমাজবিরোধী। সমাজকে ভাগ করার চেষ্টা করেছেন। সেই জন্য আমরা চাইনি, সলমন রুশদির মতো লেখক এসে সংখ্যালঘু মানুষের ভাবাবেগকে নষ্ট করুন।” তাঁর সংযোজন, “না এসেছেন, ভালই হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের মানুষ ওই কলঙ্কিত মুখ দেখতে চায় না। |
নলহাটিতে ববি।—নিজস্ব চিত্র |
তাই বেশ করেছি, আমরা তাঁকে এখানে ঢুকতে দিইনি।”
এ প্রসঙ্গে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মহম্মদ সেলিমের প্রতিক্রিয়া, “পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল মৌলবাদী রাজনীতি আমদানি করতে চাইছে। তাই মৌলবাদী বিষয়কে টেনে এনেছে। পশ্চিমবঙ্গে আগে কখনও ভোটের আগে এ কাজ করা হত না।”
পক্ষান্তরে রাজ্য রাজনীতির পর্যবেক্ষকদের বক্তব্য, আসন্ন তিন বিধানসভা উপনির্বাচনে (নলহাটি, ইংরেজবাজার এবং জঙ্গিপুর) সংখ্যালঘু-ভোট তথা ধর্মভিত্তিক মেরুকরণের অঙ্ক মাথায় রাখতে হচ্ছে সব রাজনৈতিক দলকেই। কিন্তু ইতিমধ্যেই তিন কেন্দ্রের বিধানসভা উপনির্বাচনের জন্য জোট বেঁধে ফেলেছে সংখ্যালঘু-প্রধান দলগুলি। তিন কেন্দ্রেই মূলত সংখ্যালঘু ভোট একজোট করতে নিজেদের প্রতীকে প্রার্থী দিচ্ছে সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীর ‘ইউনাইটেড ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট’ (ইউডিএফ)। তাঁদের সমর্থন করবে আরও দু’টি সংখ্যালঘু-প্রধান দল ‘সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি অফ ইন্ডিয়া’ (এসডিপিআই) এবং ‘ওয়েলফেয়ার পার্টি অফ ইন্ডিয়া’ (ডব্লিউপিআই)। গত বিধানসভায় নলহাটিতে জিতেছিল কংগ্রেস। সেখানে নিজস্ব ভোটার রয়েছে ফরওয়ার্ড ব্লক এবং বিজেপি-রও। এই পরিস্থিতিতে রুশদি-বিতর্ক খুঁচিয়ে দিয়ে গ্রামীণ সংখ্যালঘু ভোট-ব্যাঙ্ক থেকে লাভের আশা করা হচ্ছে তৃণমূলের তরফে।
নলহাটি কংগ্রেসের আগে জেতা আসন বলেই হয়তো এ দিন রুশদি প্রসঙ্গে কংগ্রেসকেও বিঁধেছেন ববি। তাঁর অভিযোগ, “কংগ্রেস সরকার এ ধরনের লেখককে ভিসা দিয়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সম্প্রীতিকে ক্ষুণ্ণ করেছে।” জবাবে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্যের মন্তব্য, “মুসলিম ভাবাবেগকে কংগ্রেস শ্রদ্ধা করে, সম্মান করে।” ঘটনাচক্রে বইমেলার ‘লিট মিট’-এই রুশদি-বিতর্ক কেন হল তা নিয়ে একটা ধারণা দিয়ে গিয়েছেন অমর্ত্য সেন। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ বলেছেন, “পশ্চিমবঙ্গেও সংখ্যালঘু সম্প্রদায় অনেকটা বঞ্চিত অবস্থায় রয়েছেন। তাঁদের খারাপ থাকার সত্যিকার কারণগুলো থেকে নজর ঘোরাতে ভাবাবেগে আঘাত আনার প্রসঙ্গগুলো বড় করে দেখানো হয়।” |