|
|
|
|
নামল কোবরা |
জঙ্গলে অচেনা মুখ, গুঞ্জনে আতঙ্ক বেলপাহাড়িতে |
কিংশুক গুপ্ত • বেলপাহাড়ি |
জঙ্গলে কাঠ-পাতা সংগ্রহ করতে আসা মহিলাদের উত্ত্যক্ত করছে অপরিচিত কিছু যুবক। কয়েকজনের শ্লীলতাহানি করা হয়েছে। এক জন ধর্ষিতাও হয়েছেন। এমনই গুঞ্জনে জেরবার বেলপাহাড়ির বাঁশপাহাড়ি ও ভুলাভেদা অঞ্চলের গ্রামগুলি। ভয়ে মহিলারা পথে বেরোতে চাইছেন না।
কোনও ঘটনাই অবশ্য সামনে আসেনি। পুলিশে অভিযোগও দায়ের হয়নি। তবে যেহেতু বেলপাহাড়ির এই গ্রামগুলিতে এক সময় মাওবাদীদের শক্ত ঘাঁটি ছিল, তাই বিষয়টি গুজব বলে উড়িয়ে দিতে পারছে না পুলিশ। বাঁশপাহাড়ি ও ভুলাভেদার জঙ্গল এলাকায় কোবরা জওয়ানদের নামানো হয়েছে। শনিবার থেকে চিরুনি তল্লাশি শুরু করেছেন তাঁরা। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, ঝাড়খণ্ড ও পুরুলিয়া-বাঁকুড়ার সীমানাবর্তী বেলপাহাড়ির জঙ্গলঘেরা গ্রামগুলিতে ফের যাতায়াত শুরু করেছে মাওবাদীরা। পরিস্থিতি স্বচক্ষে দেখতে সম্প্রতি বেলপাহাড়ি গিয়েছিলেন ঝাড়গ্রামের পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ। বেশ কয়েকটি গ্রামে গিয়ে মহিলাদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। বাঁশপাহাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান ঝাড়খণ্ড পার্টি-র ফটিকচন্দ্র মাহাতো বলেন, “১৬টি গ্রামে এমন গুজব ছড়িয়েছে। গত ২৭ জানুয়ারি ছুরিমারার ফুটবল মাঠে ১৬টি গ্রামের বাসিন্দারা আলোচনায় বসেন। তাতে পুলিশ সুপারও ছিলেন।” এ প্রসঙ্গে পুলিশ সুপারের বক্তব্য, “এ সব গুজব না সত্যি, তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।” |
|
আতঙ্কের মুখ।— নিজস্ব চিত্র |
আপাতত এই এলাকা শান্ত। গ্রামে-গ্রামে ফুটবল, চিকিৎসা-শিবিরের মতো একাধিক জনসংযোগ কর্মসূচির মাধ্যমে পুলিশের সঙ্গে গ্রামবাসীর সুসম্পর্ক গড়ে উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে যৌথ বাহিনীর বিরুদ্ধে মানুষকে খেপিয়ে তুলতে এমন গুজব ছড়ানো হচ্ছে বলে পুলিশ ও গ্রামবাসীর একাংশের অনুমান। স্থানীয় কয়েক জন জানালেন, কয়েক বছর আগে পুলিশের বিরুদ্ধে জনরোষ গড়ে তুলতে মাওবাদীরা এমন ‘হুইসপারিং ক্যাম্পেন’ চালিয়ে সফল হয়েছিল। শাসকদলও এর পিছনে মাওবাদী ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের আঁতাতকেই দেখছে। তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা কার্যকরী সভাপতি নির্মল ঘোষ বলেন, “সিপিএম-ঝাড়খণ্ডি-মাওবাদী জোট এলাকায় আতঙ্ক ছড়াতে এ সব করছে।” বিনপুরের সিপিএম বিধায়ক দিবাকর হাঁসদার পাল্টা বক্তব্য, “পঞ্চায়েত ভোটের আগে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের মিথ্যা মামলায় জড়াতেই মাওবাদী যোগসাজশের গল্প ফেঁদে অপপ্রচার করছে শাসকদল।”
জানুয়ারির গোড়া থেকেই শোনা যাচ্ছে, ওড়লি, মাহাতোবাঁধ, ধরমপুর, কাশীজোড়া, চাকাডোবার মতো গ্রাম লাগোয়া জঙ্গলে অচেনা কিছু যুবক ঘুরে বেড়াচ্ছে। কেউ বলছেন তাদের পরনে পুলিশের পোশাক। কারও বক্তব্য, ওদের পরনে রয়েছে সাধারণ পোশাক। কয়েক জনের হাতে বন্দুক ছিল বলেও খবর। বেলপাহাড়ির কংগ্রেস নেতা সুব্রত ভট্টাচার্য বলেন, “মাস খানেক আগে গ্রামবাসীর কাছে ঘটনার কথা প্রথম জানি। তবে গ্রামে ঘুরে ঘটনার সত্যতা খুঁজে পাইনি।”
পুলিশও গ্রামের পর গ্রাম ঘুরে কোনও নিগৃহীতার খোঁজ পায়নি। ওড়লি গ্রামে পুলিশকর্মীদের শুনতে হয়েছে, মাহাতোবাঁধ গ্রামে এমন ঘটনা ঘটেছে। মাহাতোবাঁধ গ্রামের মহিলারা আবার পুলিশকে জানিয়েছেন, তাঁদের গ্রামে এমন কিছু হয়নি। তবে জামিরডিহা গ্রামের মহিলারা লাঞ্ছিত হয়েছেন বলে তাঁরা শুনেছেন। জঙ্গলে তল্লাশি চালিয়েও কোনও দুর্বৃত্তের খোঁজ পায়নি যৌথ বাহিনী। এই অবস্থায় বাসিন্দাদের রাতে গ্রাম পাহারা দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে পুলিশ। |
|
|
|
|
|