ভারতে সন্ত্রাসের বীজ আসলে কোথায়, আরও এক বার তা প্রকাশ পেল তাদের কথায়, তাদের প্রতিবাদে, তাদের বদলার হুঙ্কারে। আজমল কসাবের পরে আফজল গুরুর ফাঁসি। পাক কর্তৃপক্ষের তরফে টুঁ শব্দটি শোনা না গেলেও আজ তেড়েফুঁড়ে ভারতকে আক্রমণ করেছেন জামাত-উদ-দাওয়ার নেতা মহম্মদ হাফিজ সইদ। সংসদে হামলার চক্রী আফজল গুরুর ফাঁসিকে ‘বিচারের সন্ত্রাস’ আখ্যা দিয়েছেন লস্করের এই প্রতিষ্ঠাতা। ইসলামাবাদে তাদের লোক জন পথে নেমে বিক্ষোভও দেখিয়েছে।
পাক সরকার বা প্রশাসনের তরফে আজ কেউই এ বিষয়ে মুখ খোলেননি। তবে কাশ্মীর বিষয়ক মন্ত্রী মিয়া মনজুর আহমেদ ওয়াত্তু এ দিন লাহৌরে প্রেসিডন্টে আসিফ আলি জারদারির সঙ্গে দেখা করে কাশ্মীর পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন। পাক অধিকৃত কাশ্মীরে পাকিস্তানের পুতুল প্রশাসনের মুখপাত্র ঘোষণা করেন, তিন দিন শোক পালন করা হবে। মুজাফ্ফরাবাদে এ দিন শ’চারেক মানুষ পথে নেমে বিক্ষোভও দেখান।
স্ত্রী-কন্যাকে দেখতে পাকিস্তানে এসেছেন কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা ইয়াসিন মালিক। এখানেই তিনি আজ গুরুর ফাঁসির প্রতিবাদে অনশনে বসেন। এ-তো গেল ভারত-বিরোধী চেনা মুখের কথা। কাশ্মীরে জেহাদের নামে সন্ত্রাসের যে পরিকাঠামো পাক সরকারি মদতে বহাল তবিয়তে রয়েছে, আফজলের ফাঁসি তাদের প্রতিও কড়া বার্তা ভারতের। ফলে প্রতিক্রিয়া প্রত্যাশিতই ছিল। |
আফজলের ফাঁসির খবর শুনে বিক্ষোভ ইসলামাবাদের রাস্তায়। ভারত-বিরোধী
স্লোগান শোনা গেল জামাত-উদ-দাওয়ার সমর্থকদের মুখে। শনিবার। ছবি: এ এফ পি |
সেই প্রতিক্রিয়া এসেছে ব্রিটেনের এক সংবাদমাধ্যম মারফত। লস্কর-ই-তইবা এক বিবৃতিতে তাদের বলেছে, ‘আফজল শহিদ হয়েছেন। এর বদলা নেওয়া হবে যে কোনও মুহূর্তে।’
কূটনৈতিক মহল মনে করছে, আফজলকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে ভারত পাকিস্তানকেও কড়া বার্তা দিল। কারণ এমন একটা সময়ে এই সিদ্ধান্ত, যখন পাকিস্তান ফের কাশ্মীর প্রসঙ্গকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে নিয়ে আসতে উদ্যোগী। কিছু দিন আগেই নিয়ন্ত্রণরেখায় পাক-সেনার হাতে ভারতীয় জওয়ানদের কোতল হওয়ার ঘটনাকে ঘিরে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল। সে সময় পাকিস্তান ভারতের বিরুদ্ধেই যুদ্ধবিরতি ভঙ্গের অভিযোগ তুলে রাষ্ট্রপুঞ্জের হস্তক্ষেপ দাবি করে। ভারতের তরফে তা খারিজ করে দেওয়া হয়। আবার দু’দিন আগে পাক বিদেশমন্ত্রী হিনা রব্বানি খার কায়রোয় অর্গানাইজেশন অফ ইসলামিক কোঅপারেশন (ওআইসি)-র সম্মেলনে দাবি তুলেছেন, এই সংগঠনের একটি প্রতিনিধি দল নিয়ন্ত্রণরেখায় সাম্প্রতিক ঘটনার
তদন্ত করুক।
ভারতের বিদেশ মন্ত্রক মনে করছে, কাশ্মীরকে আন্তর্জাতিক বিষয় করে তোলার জন্য পাকিস্তানের তরফে এটি আরও একটি চেষ্টা। তাই এ বারও পাকিস্তানের দাবি খারিজ করে দিয়েছে নয়াদিল্লি। বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র সৈয়দ আকবরউদ্দিনের বক্তব্য, “ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় এবং নিয়ন্ত্রণরেখার ঘটনার সঙ্গে ওআইসি-র কোনও সম্পর্ক নেই। পাক বিদেশমন্ত্রী উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বক্তব্য নতুন কিছু নয়, এতে কোনও লাভ হবে না।”
ভারতের তরফে এই বয়ান দেওয়া হলেও ওআইসি কিন্তু পাকিস্তানকেই সমর্থন করে। সংগঠনের তরফে তাদের একটি দলকে কাশ্মীরে যেতে দেওয়ার জন্যও ভারতের কাছে অনুরোধ জানানো হয়। আজ সেই অনুরোধও খারিজ করে দিয়েছে নয়াদিল্লি।
আফজলের ফাঁসির পরে ভারতের তরফেই এ বার আন্তর্জাতিক মঞ্চে বোঝানোর চেষ্টা হবে যে পাকিস্তান সন্ত্রাস দমনে কোনও পদক্ষেপই করছে না। আর তাই আমেরিকা যার মাথার দাম ১ কোটি ডলার ঘোষণা
করেছে, সেই হাফিজ সইদও পাকিস্তানে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন এবং ভারতের বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক বিবৃতি দিয়ে চলেছেন। |