চিকিৎসার গাফিলতিতে রোগী মৃত্যুর অভিযোগ আকছার ওঠে। এ বার যথাযথ নজরদারির অভাবে হাসপাতালে ভর্তি গুরুতর রোগিণীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠল রাজ্যের সেরা সরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে।
অভিযোগ, কিডনি প্রতিস্থাপন হওয়া সঙ্কটজনক অবস্থার রোগিণীর শয্যায় রাতে রেলিং দিতে ভুলে গিয়েছিলেন কর্তব্যরত নার্স। বুধবার মধ্যরাতে শয্যা থেকে পড়ে যান বর্ণালী পাত্র (৩৩) নামে ওই রোগিণী। শুক্রবার মৃত্যু হয় তাঁর।
বর্ণালীদেবীর পরিবারের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে হাসপাতাল কতৃর্পক্ষ তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করলেও কর্তব্যরত নার্সের ভুলের বিষয়টিকে তাঁরা গোড়া থেকেই বিশেষ আমল দিতে চাননি। এসএসকেএম হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, অস্ত্রোপচারের পর থেকেই তাঁর অবস্থা খুবই সঙ্কটজনক ছিল। সুপার তমালকান্তি ঘোষ বলেন, “মৃত্যু নানা কারণে হতে পারে। খাট থেকে পড়ে গিয়েই মৃত্যু হয়েছে কি না, অটোপসি করা হলে তা জানা যেত। কিন্তু পরিবারের লোকেরা তাতে রাজি হননি। তাই তদন্ত কমিটির রিপোর্টে শুধু এ টুকুই জানা যেতে পারে যে, কী ভাবে তিনি খাট থেকে পড়ে গিয়েছিলেন। কারও গাফিলতি প্রমাণ হলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
যে বিভাগে বর্ণালীদেবী ভর্তি ছিলেন, সেই ইউরোলজি বিভাগের প্রধান অনুপ কুণ্ডু বলেন, “রোগিণীর থ্রম্বোসিস হয়েছিল। তাই শয্যা থেকে পড়ে না গেলেও ওঁর বাঁচার আশা কমই ছিল।”
এমন সঙ্কটজনক অবস্থার রোগিণীর শয্যায় রাতে রেলিং দেওয়া হয়নি কেন? অনুপবাবুর জবাব, “সম্ভবত নার্সের তরফে ভুল হয়ে গিয়েছে। বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখব।”
পূর্ব মেদিনীপুরের রামনগরের বাসিন্দা বর্ণালীর কিডনি প্রতিস্থাপন হয়েছিল গত মঙ্গলবার। চিকিৎসকেরা মেনে নিয়েছেন, তাঁকে সব সময়ে পর্যবেক্ষণে রাখার কথা। তা হলে এমন এক জন রোগিণী পড়ে গেলেন কী ভাবে? ঘটনাটি যখন ঘটে, ওয়ার্ডের নার্সেরা তখন কোথায় ছিলেন? বর্ণালীদেবীর পরিবারের অভিযোগ, ওয়ার্ডের অন্য রোগিণীরা তাঁদের জানিয়েছেন, ওই সময়ে কোনও নার্স ওয়ার্ডে ছিলেন না। তাঁরা পাশের ঘরে ঘুমোচ্ছিলেন। তাই পড়ে যাওয়ার পরেও বহুক্ষণ বর্ণালীদেবীকে তোলার কোনও ব্যবস্থা হয়নি।
ওয়ার্ডের নার্সরা এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। অনুপবাবু অবশ্য বলেছেন, “নার্স ওই ঘরেই ছিলেন। হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। পড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ওয়ার্ডের দরজা বন্ধ করে রোগিণীকে তোলার চেষ্টা হয়। ততক্ষণে অন্যদের চিৎকারে আশপাশের ওয়ার্ড থেকেও সকলে ছুটে এসেছিলেন।” |