এত দিন বয়সটাই ছিল বাধা। আজ ১৮-তে পা দিতেই দূর হল তাও। তাই আর দেরি না করে অষ্টাদশ জন্মদিনেই রক্তদান করলেন শিলচর মহিলা মহাবিদ্যালয়ের ছাত্রী দেবশ্রী পাল। তাঁর কথায়, ‘‘রক্তদানের মাধ্যমেই জন্মদিন উদযাপন!”
শিলচরে এমন ঘটনা অবশ্য নতুন নয়। বরাক ভ্যালি ভলান্টারি ব্লাড ডোনার্স ফোরামের সম্পাদক আশু পালের কন্যা এ ভাবেই রক্তদান করেছেন বছর চারেক আগে। গত বছর তাঁর ছেলেও অষ্টাদশ জন্মদিনে রক্ত দিয়েছেন শিলচর মেডিক্যাল কলেজে গিয়ে। কিন্তু এঁরা ফোরামের প্রধান কর্মকর্তার ছেলে-মেয়ে। দেবশ্রী সেখানে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তাঁর বাবা সুমন্ত্র সারথী পাল ব্যবসায়ী। জীবনে একবারই রক্ত দিয়েছেন। তাও দেবশ্রীর জন্মের বহু আগে। আর মা সীমা পাল রক্তদানের কথা কখনও ভাবেনইনি। |
রক্তদানে এত উৎসাহ কেন দেবশ্রীর? মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ মনোজকুমার পাল জানান, “গত বছর, ১ অক্টোবর কলেজের রক্তদান শিবিরে বিভিন্ন জনের বক্তৃতা শুনে এবং কলেজের দিদিদের রক্ত দিতে দেখে সেও লাইনে গিয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু ১৮ বছর না হওয়ায় সে দিন তার রক্ত নেওয়া যায়নি। দুঃখ পেয়েছিল। বলেছিলাম, চার মাস পরে জন্মদিনের দিন রক্ত দিস।” দেবশ্রী জানান, বাড়িতে গিয়ে অধ্যক্ষের কথাটি বলতেই মা-বাবা রাজি হয়ে যান। এর পর আজ সকালে সোজা ইন্ডিয়ান রেডক্রস সোসাইটি-র শিলচর শাখার ব্লাড ব্যাঙ্কে চলে আসেন দেবশ্রী। রেডক্রসের কর্তারাও খুব খুশি। নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে দেবশ্রীর জন্মদিনকে আনুষ্ঠানিক চেহারা দেন। বেলুন ও ফিতে দিয়ে সাজিয়ে তোলা হয় ব্লাড ব্যাঙ্ক। আনা হয় কেক, মোমবাতিও। রক্তদানের আগে কলেজ পরিচালন সমিতির সভাপতি সৌরীন্দ্র ভট্টাচার্য, রেডক্রস সোসাইটির কর্মকর্তা সুব্রত নন্দী, দিলীপ কর, মাধব সাহা, ব্লাডব্যাঙ্কের ইনচার্জ স্বপ্না সেনসবাই গান ধরেন, ‘‘হ্যাপি বার্থ ডে টু দেবশ্রী!” বারবার ঝলসে ওঠে ক্যামেরা। এ সব দেখে দুই কলেজছাত্রী শেহনাজ মজুমদার ও বেনজির লস্কর বলেই ফেলেন, “আমাদের খুব হিংসে হচ্ছে।” আর রেডক্রস সোসাইটির ব্লাড ব্যাঙ্ক সাব-কমিটির চেয়ারম্যান প্রশান্তকুমার বসুর কথায়, “১২ বছর ধরে এই যে রক্তদান আন্দোলনে জড়িয়ে আছিআজ মনে হচ্ছে, তা সার্থক হল।”
কলেজের উপাধ্যক্ষা তপতী ধর জানান, রক্তদানের ব্যাপারে মেয়েদের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তোলার বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছেন তাঁরা। রক্তদান শিবিরের পর ফেব্রুয়ারিতে কলেজে রক্তের গ্রুপ নির্ণয় শিবির করা হয়। সেখান থেকে পাওয়া নমুনার ভিত্তিতেই তৈরি হচ্ছে ডোনার্স লিস্ট। |