ফুল-বাঁধার ভাল ফলনে বিপদে কপিচাষি
ফুলকপি-বাঁধাকপি ভাল উৎপাদন করে এ বার ফালাকাটা ও ধুপগুড়ির চাষিরা বিপাকে পড়লেন। বিপণন ও সংরক্ষণ ব্যবস্থা না থাকায় ফড়েদের কারসাজিতে রাস্তায় গড়াগড়ি খেতে শুরু করেছে ওই সবজি। পাইকারি বাজারে দাম নেমে দাঁড়িয়েছে ১ টাকা ২৫ পয়সা কেজি। যদিও খোলা বাজারে একই সময় ফুলকপি ও বাঁধাকপি কিনতে হচ্ছে ৫ টাকা কেজি দামে। চাষিরা বুঝতে পারছেন না কী করবেন। এ দিকে সরকারের তরফে দেওয়া হচ্ছে হিমঘর ও বিপণন ব্যবস্থা গড়ে তোলার সেই পুরনো আশ্বাস।
যেমন, কৃষি বিপণন মন্ত্রী অরূপ রায় বলেন, “কৃষি বাজারগুলির পরিকাঠামোগত সমস্যা আছে। সমস্যার সমাধানের চেষ্টা চলছে। চাষিরা যেন ফসলের দাম পায় সে জন্য উত্তরবঙ্গে ১১টি বহুমুখী হিমঘর তৈরি করা হবে।” কিন্তু মন্ত্রী আশ্বাস দিলে কী হবে কেউ মাথা ঘামাতে রাজি নয়। চাষিরা ভরসা রাখবেন কেমন করে! ধরা যাক ফালাকাটা লাগোয়া কোচবিহার জেলার রুহিডাঙা গ্রামের নীরেণ বর্মনের কথা। তিনি এ বার চার বিঘা জমিতে ফুলকপি ও বাঁধাকপি বুনেছিলেন। খরচ হয়েছে ৪০ হাজার টাকা। দু’সপ্তাহ ধরে ফসল উঠতে শুরু করে। ওই চাষির আশা ছিল উৎপাদন খরচ উঠে ভাল লাভ হবে। কিন্তু বাজারে গিয়ে মাথায় হাত পড়ে। গত সপ্তাহে ২০ কুইন্টাল ফুলকপি ২ টাকা ২৫ পয়সা কেজি দরে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন। শুক্রবার আট কুইন্টাল ফুলকপি বিক্রি করেছেন ১ টাকা ২৫ পয়সা দামে। তিনি বলেন, “বেশি দামের আশা করলে সবজি বাড়িতে ফিরিয়ে আনতে হত। তাই লোকসান জেনেও ছেড়ে দিতে হয়েছে।”
রাজকুমার মোদকের তোলা ছবি।
ফালাকাটার দক্ষিণ পারঙ্গেরপাড় গ্রামের কৃষক হরিশ বর্মন এক বিঘা জমিতে ফুলকপি বুনেছিলেন। বাজারে তিনশো কেজি ফুলকপি আনতে ভ্যান ভাড়া গুনতে হয়েছে ২০০ টাকা। কিন্তু বিক্রি করে হাতে পেয়েছেন আড়াইশো টাকা। লাভ পরের কথা। উৎপাদন খরচ তুলতে না পেরে ভেঙে পড়েছেন ওই চাষি। আগামী বছর আর ফুলকপির চাষ করবেন না জানয়ে তিনি বলেন, “জমিতে বাকি যতটুকু কপি রয়েছে সেটা গরুকে খাওয়াব। বাজারে এসে ভ্যান ভাড়া মেটাতে পারি না। লোকসান কেমন করে সামাল দেব সেটাই ভেবে পাচ্ছি না।”
শুধু ওই দুই চাষি নয়। শুক্রবার ফালাকাটা ও ধূপগুড়ি বাজারে হাজির কয়েকশো চাষি ফুলকপি ও বাঁধাকপির দাম না পেয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন। অনেক চেষ্টার পরে কেউ দেড় টাকায় আবার কেউ এক টাকা কেজি দরে দুই জাতের কপি বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছে। অনেক চাষি খদ্দের না পেয়ে শহরের রাস্তায় ফেরি করে জলের দরে তা বিক্রি করেছেন। ওই দৃশ্য ফালাকাটা ও ধূপগুড়িতে বিরল।


বাঁধাকপি-ব্রাসিকা অ্যালবা
ফুলকপি-ব্রাসিকা ওলেরেসিয়া
• এক বিঘা জমিতে ৩ হাজার চারা বোনা হয়
• একটি ফুলকপি ও বাঁধা কপির উৎপাদন খরচ আনুমানিক ৩ টাকা ৩৩ পয়সা
• এক বিঘা জমিতে উৎপাদিত কপি বাজারে পৌঁছনোর পরিবহণ খরচ-১ হাজার টাকা
• এ বার ফালাকাটা ব্লকে ৪০০ হেক্টর এবং ধূপগুড়ি ব্লকে ৩০০ হেক্টর জমিতে দুই জাতের কপি চাষ হয়েছে
• গতবার এই সময় পাইকারি বাজারে কিলো প্রতি ফুলকপি ও বাঁধা কপি ৪- ৫ টাকা দামে বিক্রি হয়েছে।

চাষিরা জানান, এক সপ্তাহে পাইকারি বাজারে কপির দাম ২ টাকা থেকে নামতে শুরু করেছে। এখন পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে খেত থেকে বাজারে ফসল পৌঁছে দেওয়ার খরচ উঠছে না। অনেকে নিরুপায় হয়ে খেতে গরু ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাবতে শুরু করেছেন। কেন এভাবে দাম কমছে? ব্যবসায়ীদের একাংশ মনে করছেন চাহিদার তুলনায় বেশি কপি বাজারে পৌঁছে যাওয়ায় ওই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। একই মত ধূপগুড়ি ব্লক কৃষি আধিকারিক দেবাশিস সরকারের। যদিও চাষিরা ওই যুক্তি মানতে না-রাজা। তাঁদের অভিযোগ, ফড়েরা জলের দরে কপি কিনে বেশি লাভ করছে। ফালাকাটার খুচরো বাজারে শুক্রবারেও ৪ টাকা থেকে ৫ টাকা কেজি দরে কপি বিক্রি হয়েছে। শিলিগুড়ি ও কোচবিহার শহরে আরও বেশি দাম ছিল। চাষিদের প্রশ্ন, এক সঙ্গে জোট বেঁধে ফড়েরা দাম বেঁধে না রাখলে এমন পরিস্থিতি হয় কেমন করে! ধূপগুড়ি বাজারে এক চাষি বলেন, “বিপণন ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকার সুযোগ নিয়ে ফড়েরা নিজেদের ইচ্ছে মতো ঠকাচ্ছে।”
সিপিএমের জলপাইগুড়ি জেলা সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য বনমালী রায় অবশ্য বলেন, “রাজ্য সরকারের দিশাহীন কাজকর্মের জন্য বাজারের ওই হাল হয়েছে। ফড়েদের দৌড়াত্ম্য বেড়েছে।” বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ অভিযোগ করেন, উত্তরবঙ্গে দাম না পেয়ে টম্যাটো, লঙ্কা, কপি রাস্তায় ফেলে দেওয়ার ঘটনা আজকের নতুন কিছু নয়। বানফ্রন্ট সরকার বিপণন পরিকাঠামো নিয়ে ভাবেনি। নতুন সরকারও ভাবছে না। তাই দুর্দশা কাটছে না।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.