মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি তাঁর ‘মোহভঙ্গ হয়েছে’ জানিয়ে দিয়ে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সভাপতি বিমল গুরুঙ্গ এ বার তাঁকে সরাসরি ব্যক্তিগত আক্রমণই করলেন।
শুক্রবার ডুয়ার্সের নাগরাকাটার শিপচুতে দলের ‘শহিদ দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত এক সভায় গুরুঙ্গ বলেন, “নাম মমতা হলেও ওঁর মধ্যে বিন্দুমাত্র মমতা রয়েছে বলে মনে হচ্ছে না।” তৃণমূল নেতা গৌতম দেব অবশ্য পরিস্থিতি সামলাতে শুক্রবার সন্ধ্যায় দার্জিলিং গিয়েছেন।
জানুয়ারির শেষে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উত্তরবঙ্গ সফরের পর থেকেই রাজ্য সরকারের সঙ্গে জিটিএ-র সম্পর্কের দ্রুত অবনতি শুরু হয়। মোর্চা নেতারা প্রতিদিনই মমতা এবং তাঁর সরকারের সমালোচনায় সুর চড়ান। রাজ্য সরকারও সেই সবে আমল না দিয়ে লেপচা উন্নয়ন পর্ষদ গঠন করে দেয়। তার প্রতিবাদেই মোর্চা শনিবার জিটিএ এলাকায় ১২ ঘণ্টার বনধ ডেকেছে। তার আগের দিন গুরুঙ্গ বলে দিলেন, “আমরা ভেবেছিলাম, তিনি মমতাময়ী। সে জন্য মায়ের মতো স্নেহ আশা করেছিলাম। কিন্তু পরপর পাহাড় নিয়ে যে সব পদক্ষেপ করছেন, তাতে আমাদের মোহভঙ্গ হয়েছে। মনে হচ্ছে, সিপিএম এর থেকে অনেক ভাল ও সুশৃঙ্খল দল ছিল।” |
নাগরাকাটার সভায় গুরুঙ্গ। —নিজস্ব চিত্র |
উত্তরবঙ্গ সফরে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী দার্জিলিংয়ের ম্যালের সভায় নিজেকে ‘রাফ অ্যান্ড টাফ’ বলার পর থেকেই বিবাদের সূত্রপাত। গুরুঙ্গ বলেন, “আপনিও তো সরকারি মঞ্চে রাজনীতির কথা বলে থাকেন। পাহাড়ে মানুষ আবেগ থেকেই ম্যালের সভায় আলাদা গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে স্লোগান দিয়েছিলেন। তাতে আপনি নিজেকে ‘রাফ অ্যান্ড টাফ’ বলায় পাহাড়ের মানুষ ভীষণ ক্ষুব্ধ। কোনও মতে শান্ত রেখেছি।” এর পরেই গুরুঙ্গের হুঁশিয়ারি, “মনে রাখবেন, নন্দীগ্রামে ওই ধরনের কথা বলে সাফল্য আসতে পারে। পাহাড় কিন্তু আলাদা ব্যাপার। এখানে আমি ও আমার মতো গোর্খাল্যান্ডপ্রেমীরা গুলি খেয়ে মরতে রাজি। কিন্তু, আপনার বিভাজনের রাজনীতি পাহাড়ে সফল হতে দেব না।” অবিলম্বে লেপচা উন্নয়ন পর্ষদকে জিটিএ-এর আওতায় রাখার কথা রাজ্য সরকারকে ঘোষণা করতে হবে বলেও তিনি দাবি করেন। গুরুঙ্গের দাবি, তাঁরা বিষয়টি রাষ্ট্রপতি ভবনেও জানিয়ে দিয়েছেন।
শুধু তাই নয়, জনসভার পরে সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে মুখ্যমন্ত্রীর আচরণের সমালোচনা করেন গুরুঙ্গ। তাঁর কটাক্ষ, “একবার শুনলাম ‘প্রধানমন্ত্রীকে মারতে যাব নাকি’ বললেন। ক’দিন আগে বইমেলায় পুলিশকে চাবুক মারার কথা বললেন। এটা হচ্ছেটা কি? ওঁর মাথাটা মনে হয় ঘুরে গিয়েছে।” এই প্রসঙ্গে ওই সভা থেকেই মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি গুরুঙ্গের বার্তা, “আপনিও তো সরকারি মঞ্চে রাজনীতির কথা বলে থাকেন। পাহাড়ে মানুষ আবেগ থেকেই দার্জিলিঙের ম্যালে আলাদা গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে স্লোগান দিয়েছে। তাতে আপনি ‘রাফ অ্যান্ড টাফ’ বলায় পাহাড়ের মানুষ ভীষণ ক্ষুব্ধ। কোনমতে শান্ত রেখেছি।” এর পরেই গুরুঙ্গের হুঁশিয়ারি, “মনে রাখবেন, নন্দীগ্রামে ওই ধরনের কথা বলে সাফল্য আসতে পারে। পাহাড় কিন্তু আলাদা ব্যাপার। এখানে আমি ও আমার মতো গোর্খাল্যান্ডপ্রেমীরা গুলি খেয়ে মরতে রাজি। কিন্তু, আপনার বিভাজনের রাজনীতি পাহাড়ে সফল হতে দেব না।”
জিটিএ-র প্রধান সচিব পদ থেকে দার্জিলিংয়ের জেলাশাসক সৌমিত্র মোহনকে সরানোর দাবি তুলেছে মোর্চা। রাজ্য সরকার অবশ্য প্রধান সচিবকে সরায়নি। এমনকী পাহাড়ের মোর্চা বিরোধী দল গোর্খা লিগের সভানেত্রী তথা নিহত মদন তামাংয়ের স্ত্রী ভারতী দেবীর সঙ্গে দু’দিন আগে মহাকরণে কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। ওই দিনই মোর্চা ঘনিষ্ঠ আদিবাসী নেতা জন বার্লাকেও সময় দেন মুখ্যমন্ত্রী। |
এতেও পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠেছে। গুরুঙ্গের অভিযোগ, “নিম্ন মানের রাজনীতি করা হচ্ছে।” পাহাড়ে শান্তি ও স্বাভাবিক পরিস্থিতি বজায় রাখার জন্য কালিম্পংয়ে লেপচাদের একটি সংগঠন বুধবার থেকে অনশনে বসেছে। এ দিন সেখানে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা বেড়েছে।
তৃণমূল বনধ বিরোধিতায় বৃহস্পতিবার কার্শিয়াংয়ের পানিহাটায় সভা করে। এই দিন সন্ধ্যায় উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব গুরুঙ্গের সমালোচনা কিংবা কটাক্ষের কোনও জবাব তিনি দিতে চাননি। গৌতমবাবুর কথায়, “পাহাড়ে যাচ্ছি। শনিবার থাকব। মোর্চার নেতা-কর্মীরা রাগ করুন, কালো পতাকা দেখান, তবুও আমরা তাঁদের পাশে রয়েছি। দু’পক্ষের সম্পর্কে কোনও ‘জটিল দূরত্ব’ তৈরি হলেও তা কমানোই আমাদের কাজ। আমাদের সেই অধিকার রয়েছে। আমরা দূরত্ব বাড়াতে চাই না। তাঁদের পাশে থেকে সমস্যা সমাধানে দায়িত্ব, কর্তব্য দায়বদ্ধতা পালন করতে চাই।” প্রাক্তন পুরমন্ত্রী সিপিএম নেতা অশোক ভট্টাচার্য বলেন, “পাহাড়ে আমরা শান্তি চাই। আপাতত অন্য কোনও বিষয়ে কিছু বলব না।” গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সঙ্গে তৃণমূল সম্পর্কে দূরত্ব আগেই হয়েছে, তিক্ততা বাড়ছে, এই অবস্থায় বন্ধের দিনে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীর দার্জিলিংয়ে থাকা তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন পাহাড়বাসীদের অনেকেই। তবে তিনি মোর্চার সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্গঠনে কতটা সফল হবেন সে দিকেই তাকিয়ে সকলে। |