নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
ফের বদলি করা হল দময়ন্তী সেনকে। এ বার তিনি পাহাড়ে। তাঁকে দার্জিলিঙের ডিআইজি করে পাঠানো হচ্ছে। শুক্রবার এই বদলির নির্দেশে সই করেন মুখ্যমন্ত্রী।
রাজ্যে পালাবদলের পরে দময়ন্তীর এটি দ্বিতীয় বদলি। বর্তমানে তিনি রাজ্য পুলিশের ডিআইজি (প্রশিক্ষণ) পদে ব্যারাকপুরে কর্তব্যরত। তার আগে ছিলেন কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ)।
পার্ক স্ট্রিট মামলার তদন্তের সূত্রে সংবাদমাধ্যমের শিরোনামে উঠে এসেছিলেন দময়ন্তী। মুখ্যমন্ত্রী পার্ক স্ট্রিটের ঘটনাকে ‘সাজানো ঘটনা’ বলে অভিহিত করেছিলেন। লালবাজারে সাংবাদিকদের ডেকে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যেরই প্রতিধ্বনি করেছিলেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার রঞ্জিতকুমার পচনন্দা। কিন্তু সেই বক্তব্যের উল্টো পথে হেঁটে ধর্ষণ হয়েছে বলে সংবাদমাধ্যমে স্বীকার করেন দময়ন্তী। তাঁর উদ্যোগেই ধরা পড়ে তিন অভিযুক্ত। এর পরেই কার্যত নজিরবিহীন ভাবে দময়ন্তীকে মহাকরণে ডেকে পাঠান মুখ্যমন্ত্রী। তাঁকে রীতিমতো বকাবকি করেন বলেও খবর। এর কিছু দিন পরেই বদলি হয়ে যান কলকাতা পুলিশের প্রথম মহিলা গোয়েন্দা-প্রধান।
এ বার দময়ন্তীকে পাঠানো হচ্ছে অশান্ত পাহাড়ে। প্রাথমিক ভাবে বদলি তালিকায় তাঁর নাম ছিল না বলেই মহাকরণ সূত্রে খবর। মুখ্যমন্ত্রী দময়ন্তীকে দার্জিলিঙের ডিআইজি পদে বসিয়ে নতুন করে তালিকা তৈরির নির্দেশ দেন বলে খবর। পুলিশ-কর্তাদের একাংশ আবার বলছেন, বাধ্যতামূলক না-হলেও সমস্যাসঙ্কুল এলাকায় বদলির আগে সাধারণ ভাবে সংশ্লিষ্ট অফিসারের মতামত চাওয়া হয়। এ ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী ক’দিন আগেই মহাকরণে ডেকে পাঠিয়েছিলেন দময়ন্তীকে।
পুলিশ মহলের মধ্যে দময়ন্তীর এই নতুন বদলিকে কেন্দ্র করে দু’রকম গুঞ্জনই শোনা যাচ্ছে। একাংশের বক্তব্য, পার্ক স্ট্রিটের ঘটনার পরে এমনিতেই ব্যারাকপুরে অপেক্ষাকৃত গুরুত্বহীন পদে ঠেলে দেওয়া হয়েছিল দময়ন্তীকে। এ বার পাহাড়ে পাঠিয়ে তাঁকে কার্যত আরও কঠিন সাজার মুখে ফেলল সরকার। কারণ, গুরুঙ্গরা বেঁকে বসায় পাহাড় ক্রমশ অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠার আশঙ্কা রয়েছে। সেই পরিস্থিতিতে সেখানকার ডিআইজি-র ভূমিকাই সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। চাকরি-জীবনে কখনও দার্জিলিঙে কাজ না-করা দময়ন্তীর পক্ষে এই দায়িত্ব সামলানো কঠিন বলেই ওই পুলিশ মহলের মত। তাদের আশঙ্কা, পাহাড়ের কঠিন পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য মহাকরণ থেকে দময়ন্তীর উপর নিরন্তর চাপ দেওয়া হবে। কোনও রকম বিচ্যুতি হলেও তিনি শাস্তির মুখে পড়বেন।
পুলিশের অন্য একটি অংশ আবার বলছে, দার্জিলিঙের ডিআইজি পদটি অনেক দিন ধরেই ফাঁকা। পাহাড়ের বর্তমান পরিস্থিতিতে এক দক্ষ অফিসারের প্রয়োজন ছিল। দময়ন্তীকে বেছে তাঁর উপরে সরকারের আস্থাই প্রকাশ করা হল। এ দিন দময়ন্তীর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে মন্তব্য করতে চাননি।
উত্তাল সময়ে দার্জিলিঙের ডিআইজি-র দায়িত্ব যে যথেষ্ট বিপজ্জনক এবং চ্যালেঞ্জের সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। গোর্খাল্যান্ড আন্দোলনের সময় এই পদে ছিলেন আর কে হান্ডা। বিজনবাড়ি এলাকায় গুলি চালিয়ে তাঁর প্রাণনাশের চেষ্টা হয়েছিল। এর পরে কালিম্পঙে কুকরি নিয়ে আক্রমণ হয়েছিল ডিআইজি (আইবি) কমলকুমার মজুমদারের উপর। |