|
|
|
|
লক্ষ্য স্বচ্ছতা, সব থানায় ক্যামেরা পশ্চিমে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর ও ঘাটাল |
পুলিশ সম্পর্কে অভিযোগের শেষ নেই। থানায় গেলে অভিযোগ না নেওয়া, অভিযোগকারীকে নানা ভাবে হেনস্থা করা, ঘুষ চাওয়া থেকে লক আপে পিটিয়ে মারার অভিযোগও ওঠে পুলিশের বিরুদ্ধে। আবার উল্টোদিকও রয়েছে। হঠাৎ থানায় এসে ক্ষিপ্ত জনতার ভাঙচুর থেকে জঙ্গি হামলার ভয়ও। এ সমস্ত বিষয়েই নজরদারি চালাতে থানায় থানায় ক্যামেরা লাগানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল পুলিশ। ক্যামেরা লাগানোর কাজ শেষ করে ফেলল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পুলিশ। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরী বলেন, “পুলিশ সাধারণ মানুষের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করছে কিনা, লক-আপে বন্দিদের সঙ্গে কেমন ব্যবহার করা হচ্ছে বা থানার নিরাপত্তা বিষয়ে নজরদারি চালাতেই ক্যামেরা বসানোর সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কাজে স্বচ্ছতা ও গতি আনতেই এটা করা। আমরা তা শেষ করেছি।”
|
|
মেদিনীপুর কোতয়ালি থানায় বসানো হয়েছে ক্যামেরা। |
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, চারটি করে ক্যামেরা লাগানো হয়েছে প্রতিটি থানায়। একটি থাকবে ওসি-র ঘরে, একটি লক আপে, একটি ডিউটি অফিসারের সামনে, অন্যটি থানার প্রবেশ পথে। মনিটরটি থাকবে ওসি-র ঘরে। তিনি প্রতিটি বিষয়ে নজরদারি চালাতে পারবেন। আর ওসি যদি খারাপ কিছু করেন তাও ধরা পড়বে তাঁর ঘরে থাকা ক্যামেরায়। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, যাবতীয় কাজকর্মের রেকর্ড থাকবে ১৫ দিন। জেলা পুলিশের পদস্থ কর্তারা তদন্তে গিয়ে দেখতেও পাবেন সংশ্লিষ্ট থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকেরা কেমন কাজ করছেন। ওসি বা কর্তব্যরত অফিসারের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ উঠলে জিজ্ঞাসাবাদ, প্রশ্নের পর প্রশ্ন, উত্তর নিয়ে সংশয়, তারপর সিদ্ধান্তে পৌঁছনোর দুশ্চিন্তাও থাকবে না। ক্যামেরার ‘ফুটেজ’ থেকেই জলের মতো পরিষ্কার হয়ে যাবে কর্তব্যরত অফিসার অভিযোগকারীদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছেন কিনা, অভিযোগ নিতে অস্বীকার করেছেন কিনা, কিংবা কাউকে দীর্ঘক্ষণ থানায় বসিয়ে রেখে নিজেরা খোসগপ্পে মত্ত কিনা।
কথায় বলে পুলিশে ছুঁলে আঠারো ঘা। এখনও বহু মানুষের মনেই এই ধারণা বদ্ধমূল। তাই পারতপক্ষে অনেকেই থানা এড়িয়ে চলেন। যাঁরা বা যান তাঁদেরও অনেক সময়ই অভিজ্ঞতা খুব একটা সুখকর হয় না। যদিও দফতরের পদস্থ আধিকারিকেরা পুলিশ ও সাধারণ মানুষের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার কথা বলেন, তার জন্য নানা অনুষ্ঠান, ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, স্বাস্থ্য শিবিরেরও আয়োজন করা হয়। কিন্তু তবু পুলিশের বিরুদ্ধে খারাপ ব্যবহারের, হেনস্থা করার, থানায় বসিয়ে ঘুষ চাওয়ার অভিযোগও ওঠে ভুরি ভুরি। লক আপে নির্যাতনের অভিযোগও ওঠে। এ সব খতিয়ে দেখার জন্য পদস্থ আধিকারিকদের থানা পরিদর্শনের নির্দেশও রয়েছে। পদস্থ আধিকারিকদের পরিদর্শনের সময় সব কিছু আঁটোসাটো থাকলেও আধিকারিকের চলে যাওয়ার পর পুরনো পরিস্থিতি ফিরে আসে বলে অভিযোগ। এ ছাড়াও কেউ থানা আক্রমণের লক্ষ্যে আসছে কিনা তাও দেখা যাবে থানার প্রবেশ পথের ক্যামেরা দিয়ে। সজ্জন সেজে থানায় ঢুকে অঘটন ঘটিয়ে গেলেও ধরা পড়ে যাবে ক্যামেরায়। তাই ক্যামেরায় নজরদারির সিদ্ধান্ত। |
|
ভেতরে নজরদারি পুলিশকর্মীর। |
ক্যামেরা বসানোয় অবশ্য কিছুটা ইতস্তত বোধ করছেন পুলিশকর্মী ও অফিসারেরা। বিশেষত, ডিউটি অফিসারদের কাছে ক্যামেরা আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে। পুলিশ সূত্রে খবর, এতদিন তাঁরা দারোগা মেজাজে অভিযোগকারীর সঙ্গে কথা বলতেন। অনেক অপ্রিয় প্রশ্ন করে হেনস্থা করা হত। বিশেষত, মহিলাদের ক্ষেত্রে এমন ভুরি ভুরি অভিযোগ রয়েছে। যদি ক্যামেরার সামনেও সেই মেজাজেই কথাবর্তা চলে! তখন তো হেনস্থা হতে হবে কর্তব্যরত আধিকারিককেই। ডিউটি অফিসারদের প্রায়ই টেবিলে পাওয়া যায় না বলেও অভিযোগ। চা খেতে গিয়েছেন বলে অন্যরা দায়িত্ব সারেন। সমস্যায় পড়ে থানার সাহায্য চাইতে আসা সাধারণ মানুষকে দীর্ঘ অপেক্ষা করতে হয়। এ বার সে উপায়ও থাকবে না। সারাক্ষণ নিয়ম মেনেই কাজ করতে হবে। না হলে ক্যামেরায় ধরা পড়বে সব।
|
—নিজস্ব চিত্র। |
|
|
|
|
|