পূর্ব কলকাতা
বিপন্ন সবুজ
কুঠারের ঘা
লকাতার মতোই কি দশা হবে সল্টলেকের? এমনই প্রশ্ন বাসিন্দাদের মুখে মুখে ফিরছে। একেই উন্নয়নমূলক কাজের জেরে কমছে সবুজের পরিমাণ, অন্য দিকে প্রকাশ্যেই দিবালোকে চলেছে একের পর এক গাছ কাটা। উদ্বিগ্ন বাসিন্দাদের দাবি, গাছ নিয়ে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা করুক প্রশাসন। যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করে বিধাননগর পুর প্রশাসনের দাবি, ইতিমধ্যেই সৌন্দর্যায়ন প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। গাছ কাটার ঘটনা নিয়েও কড়া পদক্ষেপ করা হবে। কিছু দিন আগেই ডিএল ব্লকের একাধিক জায়গায় বৃক্ষনিধন যজ্ঞ চলে।
বাসিন্দাদের দাবি, বহু পুরনো একটি গাছও সে দিন কাটা পড়ায় প্রতিবাদ জানান তাঁরা। ওই ব্লকেরই বাসিন্দা শাসক দলের এক বিধায়ক ঘটনাস্থলে যান। যাঁরা গাছ কাটছিলেন তাঁদের কাছে পুরসভার বৈধ অনুমতিপত্র দেখতে চান। অনুমতিপত্র না থাকায় তাঁদের পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। খোদ বিধায়কও থানায় অভিযোগ জানান। বাসিন্দাদের অভিযোগ, ঘটনার সঙ্গে স্থানীয় ওয়ার্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট ও ওয়ার্ড কমিটির সম্পাদক যুক্ত বলে স্বীকার করেছে ধৃতেরা।
যদিও স্থানীয় ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সুধীর সাহা দাবি করেছিলেন, তিনি গাছ ছাঁটার নির্দেশ দিয়েছিলেন, কাটার নয়। নিজেদের অপরাধ ঢাকতে ওয়ার্ডের ওই দুই ব্যক্তির নাম করেছে ধৃতেরা। এর বাইরে প্রশাসন কিছু জানে না। ডিএল ব্লক কমিটির সম্পাদক কৃষ্ণপদ সাহা বলেন, “ব্লকে একাধিক গাছ কাটা হয়েছে। প্রশাসন যদি কিছু না-ই জানে তবে ধৃতেরা পুর প্রশাসনের কয়েক জনের নাম কেন বলেছিল? বাসিন্দারা রীতিমতো ক্ষুব্ধ।” ধৃতেরা বর্তমানে জামিনে মুক্ত।
ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই ফের গাছ কাটার ঘটনা। এ বার পুরসভার চেয়ারপার্সন কৃষ্ণা চক্রবর্তীর ওয়ার্ডে। এ ক্ষেত্রে থানায় অভিযোগ জানায় পুরসভা। শুধু এই দু’টি ঘটনাই নয়, এক ও দুই নম্বর সেক্টরের বিভিন্ন জায়গায় এমন ঘটনা ঘটেই চলেছে। পুর প্রশাসনের দাবি, অনুমতি ছাড়া গাছ কাটার বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। থানায় অভিযোগও দায়ের করা হয়েছে। আইন অনুযায়ী অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কাউন্সিলর সুধীরবাবুর ‘গাছ ছাঁটা’র নির্দেশ নিয়ে তৈরি হয় নতুন বিতর্ক। প্রশ্ন ওঠে, এক জন কাউন্সিলর কি এই নির্দেশ দিতে পারেন? কারণ, গাছ সংক্রান্ত বিষয়টি সার্বিক ভাবে পুরসভা দেখে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান পারিষদ দেবাশিস জানা বলেন, “বর্ষা এবং পুজোর মরসুমেই এই কাজ করে পুরসভা। কখনও বাসিন্দাদের দাবি মেনেও অনেক ক্ষেত্রে এই কাজ করা হয়। সে ক্ষেত্রে বন দফতরের অনুমতিসাপেক্ষে গাছ কাটা হয়। প্রতিটি গাছের জন্য আলাদা করে তথ্য সংরক্ষিত থাকে। এ জন্য পুরসভার নিজস্ব বিভাগ রয়েছে। তারাই গাছ ছাঁটা বা কাটার কাজ করে।”
সম্প্রতি পুরসভার চেয়ারম্যান পারিষদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে কোনও কাউন্সিলর আলাদা করে গাছ সম্পর্কিত নির্দেশ দেবেন না। তাঁদের আবেদনের ভিত্তিতে পুরসভা সিদ্ধান্ত নেবে। বাসিন্দাদের সংগঠন বিধাননগর ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কুমারশঙ্কর সাধু বলেন, “সল্টলেকে সবুজের পরিমাণ কমছে। উপরন্তু এই ধরনের অপরাধও হচ্ছে। অবিলম্বে প্রশাসন ব্যবস্থা নিক। পাশাপাশি, পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে পরিকল্পনা কার্যকরী করা হোক।” জবাবে চেয়ারম্যান পারিষদ দেবাশিসবাবু বলেন, “নির্দিষ্ট পরিকল্পনা মেনেই সৌন্দর্যায়নের কাজ শুরু হয়েছে। উন্নয়নমূলক কাজের জন্য গাছ কাটা হলে তার চার গুণ গাছ লাগানো হচ্ছে।”
ছবি: শৌভিক দে




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.