পূর্ব কলকাতা: লেকটাউন, বারাসত
লেকটাউন কেন্দ্র
এ ভাবেই শিশুবিকাশ
কোথাও পানীয় জল আছে, স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগার নেই। কোথাও শৌচাগার থাকলেও পানীয় জলের ব্যবস্থা নেই। কোথাও আবার কোনওটাই নেই।
নিজস্ব বাড়ি না থাকায় এ ভাবেই ভুগছে মধ্যমগ্রাম ও নিউ ব্যারাকপুর পুরসভা এলাকার সুসংহত শিশুবিকাশ সেবা প্রকল্প বা আইসিডিএস কেন্দ্রগুলি। আর উপযুক্ত ব্যবস্থা না নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে পুরসভার বিরুদ্ধে। ওই এলাকায় মোট ১৪৭টি সুসংহত শিশুবিকাশ সেবা প্রকল্প কেন্দ্র রয়েছে। কিন্তু কোনওটিরই নিজস্ব ভবন নেই। এ দিকে, বাড়িভাড়ার জন্য বরাদ্দ ৫০০ টাকা। ওই টাকায় এলাকায় কেউই বাড়ি ভাড়া দিতে চান না। তাই শিশুবিকাশ সেবা প্রকল্প কেন্দ্রের কর্মীরা নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে স্থানীয় ক্লাব সংগঠনের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। কিন্তু সর্বত্র ক্লাবঘর না মেলায় অগত্যা বেড়ার ঘর বা কারও বাড়ির বারান্দা ভাড়া নিতে হয়েছে।
সেই একফালি বারান্দায় রান্না ও পড়াশোনা একসঙ্গে চলে। কোথাও বেড়ার ঘরে গাদাগাদি করে বসতে হয় পড়ুয়াদের। ঘরের অভাবে একটি বাড়ি ভাড়া করে একসঙ্গে দু’টি কেন্দ্রও চালানো হয়। কোনও কোনও ক্ষেত্রে ঘরে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস না ঢোকায় শিক্ষিকারা উঠোনেই পড়ান। রোদ-বৃষ্টিতে দুর্ভোগের শেষ থাকে না।
অধিকাংশ কেন্দ্রে স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগার ও পানীয় জলের সমস্যা আছে। শিশুবিকাশ সেবা প্রকল্প কেন্দ্রগুলি পরিচালনা করেন মহিলারা। শৌচাগারের জন্য তাঁদের অন্যত্র যেতে হয়। কোথাও কোথাও বাইরে থেকে পানীয় জল টেনে আনতে হয়। শৌচাগার ও পানীয় জলের সমস্যার জন্য অভিভাবকেরা ছেলেমেয়েদের এই সব কেন্দ্রে পাঠাতে চান না। আবার বর্ষার মরসুমে বারান্দায়, বেড়ার ঘরের কেন্দ্রগুলিতে ভোগান্তি বাড়ে। বৃষ্টি নামলে বইপত্র ও রান্না গুটিয়ে রাখতে হয়। জল-কাদায় বন্ধ রাখতে হয় কেন্দ্রগুলি।
ওই এলাকার সুসংহত শিশুবিকাশ সেবা প্রকল্প কেন্দ্রের সুপারভাইজার অঞ্জলি দেববর্মনের অভিযোগ, “বহু বার পুরসভা দু’টিকে লিখিত ভাবে সাহায্যের জন্য জানানো হয়েছে। তবে সাত বছর ধরে চলা এই প্রকল্পে আজ পর্যন্ত পুর সহযোগিতা পাইনি। সক্রিয় ওয়ার্ড কমিটি না থাকায় সব রকম সমস্যা কেন্দ্রের কর্মীদেরই পোহাতে হয়।”
আরও অভিযোগ, কেন্দ্রগুলির ভবন তৈরির জন্য জমি খুঁজে দেওয়া, স্বাস্থ্যকর পরিবেশে বাড়ি ভাড়ার বন্দোবস্ত করা এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে কেন্দ্রগুলির প্রয়োজনীয়তা বোঝানোর কোনও দায়িত্বই পালন করেনি স্থানীয় পুরসভা। কেন্দ্রগুলির অবস্থা নিয়ে অভিযোগ রয়েছে অভিভাবক ও বাসিন্দাদের। অভিভাবক মিঠু রায় জানান, প্রতি দিন তিন-চার বার করে ছেলেকে দেখতে যেতে হয়। কারণ কেন্দ্রে জল ও শৌচাগার নেই। শিল্পী দাসের কথায়: “ছোট্ট বেড়ার ঘর। বসার বা দাঁড়ানোর জায়গা নেই। তাই মাসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা বৈঠকে এলাকার সব মেয়ে আসেন না। আবার বসার জায়গা না পেয়ে অনেকেই ফিরে যান।”
নিউ ব্যারাকপুর পুরসভার চেয়ারম্যান তৃণমূলের নির্মিকা বাগচী অবশ্য বলেন, “নিউ ব্যারাকপুর পুর অঞ্চলের সুসংহত শিশুবিকাশ সেবা প্রকল্পের কোনও কেন্দ্রে পানীয় জল বা শৌচাগারের সমস্যা নেই। আসলে পুরসভার প্রতিটি ওয়ার্ডভিত্তিক নিজস্ব জমি নেই যেখানে প্রকল্পের জন্য বাড়ি তৈরির জমি দেব।” পাশাপাশি, মধ্যমগ্রাম পুরসভার চেয়ারম্যান তৃণমূলের রথীন ঘোষের কথায়: “পুরসভা সাধ্যমতো এই প্রকল্পের কেন্দ্রগুলির জন্য সাহায্য করে। পুর এলাকায় সরকারি জমি না থাকায় ভবন তৈরির জন্য জমি দিতে পারিনি। আর বাড়িভাড়া বাবদ যে টাকা দেওয়া হয় তা এতই কম যে কেউ বাড়িভাড়া দিতে চায় না। তবে রাজ্য সরকার এই প্রকল্পের জন্য কিছু পরিকল্পনা গ্রহণ করতে চলেছে। আশা করছি, তখন সমস্যাগুলি থাকবে না।”
উত্তর ২৪ পরগনার অতিরিক্ত জেলাশাসক (ট্রেজারি) পার্থ ঘোষ বলেন, “সুসংহত শিশুবিকাশ সেবা প্রকল্পে বাড়ি বাবদ যে পরিমাণ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে সেই টাকায় শহরাঞ্চলে বাড়ি ভাড়া পাওয়া যায় না। মূলত সেই কারণেই কেন্দ্রগুলিতে পানীয় জল ও শৌচাগারের সমস্যা থাকে। তবে চলতি বছরে বাড়ি ভাড়া বাবদ টাকার পরিমাণ বাড়ানো হবে। তখন আমরা পুরসভাগুলির সঙ্গে বৈঠক করে স্বাস্থ্যসম্মত বাড়ি ভাড়ার ব্যবস্থা করে দিতে বলব।”

ছবি: সুদীপ ঘোষ




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.