ব্যাগ গুছিয়ে... |
চির বসন্তের শহর
বিশাল এলাকা জুড়ে এক অদ্ভুত পাথুরে জঙ্গল। অদূরেই এক ঐতিহ্য-গ্রাম।
কলকাতা থেকে বিমানে মাত্র ঘণ্টা দুইয়ের দূরত্ব। দেখে আসুন
কুনমিংয়ের দুই বিস্ময়। লিখছেন অশোক সেনগুপ্ত
|
|
|
জিয়াংজং পাহাড়ের কোলে প্রায় চারশো কিলোমিটার জায়গা জুড়ে সত্যিই একটা অনন্য পর্যটনকেন্দ্র। যাতায়াতের সড়কপথে চারটি সুড়ঙ্গ। টোল গেট পেরোতে টিকিট লাগবে পাঁচ ইউয়ান করে। তিনটে গাড়ি একসঙ্গে যেতে পারে একটি সুড়ঙ্গ দিয়ে। প্রতিটির দৈর্ঘ্য প্রায় দেড় কিলোমিটার। পাশেই ইয়াং সাং লেক। সারা বছর জল থাকে। সবুজ পাহাড়ের কোলে স্বচ্ছ জল। বোট-রাইডিংয়ের এর সুবিধা আছে।
কুনমিংকে কখনও বলা হয় ‘ওরিয়েন্ট অব জেনিভা’, কখনও ‘স্প্রিং সিটি’। এ রকম নাতিশীতোষ্ণ শহর চিনে খুব বেশি নেই। নিম্ন অক্ষাংশের পাহাড়ি বর্ষা শহরটাকে সত্যিই যেন চিরবসন্তময় করে রেখেছে। কুনমিংয়ে আবহাওয়া থেকে যায় ফেব্রুয়ারি-মার্চের মতো। কিন্তু ফুল ফোটে বছরভর। বেজিং, সাংহাই, সেনজেনের মত চোখধাঁধানো চিনা শহরগুলিতে ঘোরার পরেও বোদ্ধা পর্যটকেরা অনেকেই কুনমিং যেতে চান একটাই কারণে। পর্যটন আর প্রকৃতির অমোঘ আকর্ষণ। |
|
ছবিটি ‘গেটি ইমেজেস’-এর সৌজন্যে |
চিনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ইউনান প্রদেশের রাজধানী কুনমিং। দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ২০ শতাংশ থাকে এই অঞ্চলে। শহরে বিশাল চওড়া রাস্তা। ফুটপাথও যথেষ্ট প্রশস্ত। বেশির ভাগ ফুটপাথের পাশে সাইকেল চালানোর পৃথক পথ। ভিখারি, হকার চোখে পড়েছে সামান্য। স্টোন ফরেস্টের প্রবেশপথের পাশেই সুন্দর, রঙবেরঙের পোশাক পরা মহিলা গাইডের দল। ভিতরে আলো আর ফোয়ারায় সাজানো সুন্দর হ্রদ। হ্রদের জলে রঙিন মাছের ঝাঁক।
আশপাশে প্রায় চার তলা বাড়ির সমান উঁচু পাথরের চাঁই। গাছের মতো উঠে গিয়েছে। কয়েক হাজার বছর আগে এখানে ছিল সমুদ্র। হয়তো ভৌগোলিক অবস্থানের জন্য জলের স্রোতে প্রস্তরখণ্ড ক্ষয়ে গিয়ে ও রকম রূপ নেয়। কয়েক দশক আগে মৈত্রেয়ী দেবী তাঁর ‘অচেনা চিন’ বইয়ে লিখেছিলেন, “কুনমিনে আমরা যে সব আশ্চর্য দ্রষ্টব্য দেখলাম, তার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য স্টোন ফরেস্ট। কুনমিন থেকে একশো ত্রিশ মাইল দূরে সবুজ শষ্যক্ষেত্রের মধ্য দিয়ে আমরা চললাম। এই পার্বত্য প্রদেশে ‘ই’ উপজাতির বাস। আমরা শুনলাম, সাতাশ লক্ষ মিলিয়ন বছর আগে এখানে সমুদ্র ছিল। সেই সমুদ্রবক্ষ থেকে সুন্দর পর্বতশ্রেণি মাথা তুলেছে। সামুদ্রিক জীবাশ্ম পাওয়া গিয়েছে।
আর দাঁড়িয়ে আছে পাথরের অদ্ভুতদর্শন স্তম্ভগুলি।” |
|
চিনের ঐতিহ্যগ্রাম। কোথাও ‘দাই’ জনজীবন। কোথাও মিনি তিব্বত। কোথাও বা ‘হান’, ‘দিয়াং’ বা ‘জিঙপো’দের গ্রাম। চিনা ঐতিহ্যের অসাধারণ পরিচয় পাওয়া যায় কুনমিংয়ের এই ‘ন্যাশনালিটি ভিলেজে’। পাহাড়ের কোলে কয়েক একর জায়গায় চিনের বিভিন্ন অঞ্চলের জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের আলেখ্য তুলে ধরা হয়েছে। ভিলেজে বেশ ক’টি সুন্দর টিলা। চারপাশে নানা ধরনের গাছ, পাখি। ভিতরে পায়ে চলার পথ এবং এর দু’পাশে পরিচর্যার স্পষ্ট ছাপ।
পথের বাঁকে বাঁকে সুন্দর স্থাপত্য। সব মিলিয়ে সত্যিই মায়াবী পরিবেশ। শঙ্খচিলের ঝাঁকের সঙ্গে ফটো তুললাম। পর্যটকেরা অনেকে ছোট পাউরুটির টুকরোর টোপ দিয়ে নিজের মাথায়, হাতে, ঘাড়ে বসাচ্ছেন শঙ্খচিল। ভিলেজে ‘ঝুয়াংঝু’, ‘লাহু’ প্রভৃতি গ্রামে নির্দিষ্ট সময়ে বসে ওঁদের নিজস্ব রীতির বিয়ের অনুষ্ঠান। ওয়াজুদের গ্রামে বাজে ঢোল। ‘মসুও’ আর ‘দাই’দের গ্রামে বসে লোকনৃত্য ও লোকসঙ্গীতের আসর। কোন গ্রামে কবে, কখন, কোন অনুষ্ঠান হবে, তা নোটিশ বোর্ডে জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। |
|
ভিলেজে আছে ‘দাই’দের গ্রাম। ‘দাই’ কথাটির অর্থ ‘স্বাধীনতা ও শান্তি’। ওঁদের নিজস্ব ক্যালেন্ডার, ভাষা, সংস্কৃতির নানা পরিচয় শেখার সুযোগ পাওয়া যাবে এখানে। কাছেই ১.৪ হেক্টর জায়গা নিয়ে তৈরি হয়েছে তিব্বতি গ্রাম। নজর কাড়বে কাঠ ও মাটি দিয়ে তৈরি দোতলা বাড়ি। এর দেওয়ালে সুন্দর কারুকাজ। পাশে পেল্লাই প্যাগোডা। ১২টি পাথরের সিঁড়ি ডিঙিয়ে ঢুকবেন মূল মন্দিরে। ভিতরে ধ্যানমগ্ন বিশাল বুদ্ধ। চার দিকে নানা মাপের তংখা। বৃদ্ধ লামা বসে পুথি পড়ছেন। ‘ঝুয়াং ঝু’ গ্রামে দেখবেন ‘ওয়েনশানের’ জনজীবন। ওঁদের নাচ-গান, ধানচাষে দক্ষতা ছাড়াও অতিথিপরায়ণতা বিশেষ ভাবে স্বীকৃত। এ ছাড়াও ভিলেজে রয়েছে ‘ওয়া’, ‘ই’, ‘নক্সি’ প্রভৃতি জনজাতির নিজস্ব গ্রাম। |
কী ভাবে যাবেন |
কলকাতা থেকে সরাসরি উড়ানে সময় লাগবে ঘণ্টাদুই। |
সঙ্গে কী নেবেন |
শীতবস্ত্র। ডিসেম্বর থেকে তিন মাস তাপমাত্রা ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো। জুন-জুলাইয়ে ২০-র কাছাকাছি।
জুন থেকে অগাস্ট দৈনিক বৃষ্টি হয় প্রায় ২০০ মিমি। ওই সময়ে গেলে বর্ষাতি ও ছাতা রাখা দরকার। |
কোথায় থাকবেন |
নানা মানের হোটেল রয়েছে কুনমিংয়ে। |
|
|
|