চল্লিশেও চনমনে
খুশিতে বাঁচুন
ল্লিশ পেরিয়েছেন? উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরল বা ব্লাডসুগারের মতো সমস্যায় ভুগছেন? ডাক্তারবাবু কি শরীরচর্চার পরামর্শ দিয়েছেন?
ভাবছেন হাঁটলেই হল। কিন্তু বাত থাকলে হাঁটা কঠিন। নেই জিমে যাওয়ার সময়। কী করবেন?
উপায় আছে। এ বার রইল একটি বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা। কিন্তু দরকার তীব্র ইচ্ছাশক্তির। নইলে ফল মিলবে না।
এ পরিকল্পনায় বাড়িতেই যে কোনও সময়ে ২০-২৫ মিনিট শরীরচর্চা করতে পারেন। শুধু ভারী খাওয়ার পরে শরীরচর্চা করবেন না।হাঁটা, জগিং, দৌড় ইত্যাদিকে বলে কার্ডিওভাসকুলার ট্রেনিং। ডন, বৈঠক বা ডাম্বেল ইত্যাদি নিয়ে ব্যায়ামকে বলে স্ট্রেংথ বা শক্তি বাড়ানোর ট্রেনিং। বয়স বাড়লে পেশি, সংযোগকারী কোষ, পেশি-বন্ধনী দুর্বল হতে থাকে। শুয়েবসে সময় কাটালে এই ক্ষয় বেশি হয়। তাই ওজন নিয়ে পেশি-বন্ধনীর জোর বাড়ানোর ব্যায়ামে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিন। এতে হাঁটার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি উপকার পাবেন। সাধ্যমতো ৫-৬টি ব্যায়াম করুন। একে বলে ‘সার্কিট সিস্টেম’। পর পর ব্যায়াম করলে হৃৎস্পন্দন বাড়তে থাকে। নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত হয়। তাড়াতাড়ি হাঁটলে বা জগিং করলেও হৃৎস্পন্দন বাড়ে, নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত হয়। অর্থাৎ শক্তি বাড়ানোর ব্যায়ামে কার্ডিওভাসকুলার ব্যায়ামের সুফলও পেয়ে যাচ্ছেন। একটি সার্কিটের পরে ২ মিনিট বিশ্রাম। ৩-৪টি সার্কিট সম্পূর্ণ করুন।
প্রথমে মিনিট পাঁচেক শরীর গরম করুন। একটু স্ট্রেচিং করুন। তার পরে শক্তি বাড়ানোর জন্য নীচের ব্যায়ামগুলি শুরু করুন।


প্ল্যাঙ্ক:
দুই কনুই আর দুই পায়ের পাতার উপরে ভর দিয়ে বুক আর কোমর ১০ সেকেন্ড শূন্যে
ধরে রাখুন (ছবির মতো)। মেরুদণ্ড যেন না বাঁকে। কয়েক সপ্তাহ বাদে সময় বাড়িয়ে ৩০
সেকেন্ড করুন। এতে পেটের, কোমরের গভীরের পেশির জোর বাড়ে। কোমর এবং ঘাড়ের
ব্যথা কমে। প্রথমে অসুবিধা হলে হাঁটু গেড়েও করতে পারেন। একে বলে মডিফায়েড প্ল্যাঙ্ক।

হাতে ভর রেখে স্কোয়াট: হাঁটু হল হিঞ্জ জয়েন্ট। অনেকটা কপাটের মতো। একে ভাল রাখতে স্কোয়াটের কোনও জুড়ি নেই। একটি চেয়ার বা টেবিলে হাতের ভর রেখে আপনার হাঁটুটা যতটা ভাঁজ করলে ব্যথা লাগছে না ততটা ভাঁজ করে স্কোয়াট করুন। সম্ভব হলে ৯০ ডিগ্রি অর্থাৎ মেঝের সমান্তরাল হওয়া পর্যন্ত নামুন। পিছনে টুল রাখুন। টুলে নিতম্ব স্পর্শ করলেই উঠে দাঁড়ান। টুল রাখলে স্কোয়াটের পসচার ঠিক থাকে। দশ বার করুন।

ওয়াল পুশ আপ: কাঁধের সমান উচ্চতায়, সমান দূরত্বে, দুই হাত দেওয়ালে রেখে দেওয়াল থেকে একটু সরে দাঁড়ান। এ বার বুক দেওয়ালের কাছে আনার চেষ্টা করুন। আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসুন। ১০-১২ বার করুন। পুরুষ, মহিলা সবাই করতে পারেন। এতে বুক আর কাঁধের পেশির জোর বাড়ে। কাঁধের বল অ্যান্ড সকেট জয়েন্টও ভাল থাকে।

জলের বোতল হাতে উপুড় হয়ে রোয়িং: বেঞ্চের উপর উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ুন। ডাম্বেল হলে ভাল, নইলে দু’হাতে দু’টি
এক লিটারের জলের বোতল নিন। এ বার হাত দু’টি নীচে নামান আবার টেনে বগল ঘেঁষে উপরে নিয়ে যান। অনেকটা
নৌকা বাওয়ার মতো। ১০-১২ বার করুন। এতে পিঠের উপরের অংশের পেশির জোর বাড়ে। বসার পসচার ভাল হয়।
পর পর পাঁচটি ব্যায়াম করলেই দেখবেন হাঁফিয়ে উঠেছেন। ২ মিনিটের মতো বিশ্রাম নিন। সার্কিটটা ৩-৪ বার করুন।
এতে নীচের সুফলগুলি পাবেন।

• হৃদযন্ত্র যথেষ্ট কাজ করে। ফুসফুসও ভাল থাকে।
• পেশির জোর বাড়ার পাশাপাশি হাঁটা, দৌড়ের সুফলও মেলে।
• বেশি ক্লান্তিকর নয়। অল্প সময়ে বেশি ক্যালরি ঝরায়। এইচ ডি এল অর্থাৎ বন্ধু কোলেস্টেরল বাড়ে।
পেশি বেড়ে মেদ ঝরে। রক্তে শর্করার মাত্রা কমে।
• মাঝবয়সের দুর্বল অস্থিসন্ধি চাঙ্গা হয়।
সপ্তাহে কম করে তিন দিন শক্তি বাড়ানোর ব্যায়াম করুন। এক দিন অন্তর।
বাকি দু’তিন দিন বাড়িতেই নীচের দু’টি ড্রিল করতে পারেন।

শূন্যে পাঞ্চ অ্যান্ড কিক: আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে প্রথমে আড়াআড়ি চারটে ঘুষি ছুড়ুন। দু’টি হাতই ব্যবহার করুন। একই ভাবে পর পর চারটে আড়াআড়ি লাথি। সবগুলিই শূন্যে। লাথির সময় সাধ্যমতো পা ছুড়ুন। পর্যায়ক্রমে চারটে ঘুষি আর লাথি। সব মিলিয়ে ৪৫ সেকেন্ড-১ মিনিট। কিছু ক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে ৫-৮ বার করুন।
জলভর্তি বোতল হাতে দ্রুত হাঁটা: আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দু’হাতে দু’টি বোতলে আধ লিটার করে জল নিয়ে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে দ্রুত হাঁটার অভিনয় করুন। এক মিনিট ধরে একই গতি বজায় রাখার চেষ্টা করুন। ফিটনেস ভাল থাকলে একই ভাবে দাঁড়িয়ে ৩০-৪৫ সেকেন্ড স্পট বাই-নি করুন। অনেকটা যেন দৌড়াচ্ছেন। দু’টি ড্রিলই এক মিনিট করে বিশ্রাম নিয়ে ৫-৮ বার করুন।


এক পায়ে হিপ এক্সটেনশন:
মাটিতে শুয়ে কাছে রাখা টুলে এক পা তুলে হাঁটুর ফিমার বোন আর সিন বোনের
মধ্যে ৯০ ডিগ্রি কোণ তৈরি করুন। অন্য পা শূন্যে তুলে রাখুন। এ বার টুলে রাখা পায়ে জোর দিয়ে কোমর
উপরে তুলুন আর নামান। মোট ১০-১২ বার। হাঁটুর পিছনের হ্যামস্ট্রিং আর নিতম্বের গ্লুটিয়াস পেশির
জোর বাড়ে। হাঁটু ভাল থাকে। সিঁড়ি ভাঙতে বা বেশি ক্ষণ হাঁটতে চাইলে এই ব্যায়ামটি অবশ্যই করবেন।

প্রতি দিনই ব্যায়ামের শেষে পাঁচ মিনিট স্ট্যাটিক স্ট্রেচিং করে কুলডাউন করুন। কুলডাউন মানে হল শরীরকে ঠান্ডা করে হৃদ্যন্ত্রের গতি কমিয়ে আনা। পাশাপাশি পেশির দৈর্ঘ্য স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে আসা।

ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য

 



অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.