দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় • কলকাতা |
মাঝমাঠ যার বড় ম্যাচ তার। ডার্বির চব্বিশ ঘণ্টা আগে এটাই উপলব্ধি দুই প্রধানের দুই কোচের। দু’জনের ফুটবল-দর্শনে তফাত যদিও এক সমুদ্র। কিন্তু শুক্রবার করিম এবং মর্গ্যানের প্রায় এক কথা, “কাল লড়াইটা মাঝমাঠে। জিততে হলে ওই জায়গাটা আগেভাগে দখল করা চাই।”
দু’জনের মগজই ফুটবল-বুদ্ধিতে ভরা। মরক্কান কোচ করিম ভারতে কোচিং করছেন সাড়ে ছ’বছর। ব্রিটিশ কোচ মর্গ্যান সেখানে এ দেশে আড়াই বছরের ইনিংসে করিমের বিরুদ্ধে এগিয়ে ৪-৩। মোহন কোচ এই প্রসঙ্গের ধার-কাছ দিয়ে না গেলেও মর্গ্যানের সৌজন্য মাখা প্রতিক্রিয়া, “করিম তো আর খেলবে না! খেলবে ওর টিম। অহেতুক বিতর্ক খুঁজছেন কেন?” মোহনবাগান লিগের লাস্ট বয়, ইস্টবেঙ্গল ফাস্ট বয়। এটাই কি মনের জোশ বাড়াচ্ছে? মর্গ্যান বলছেন, “আগের ম্যাচ অতীত। প্রেক্ষাপটও আলাদা।” আর করিমের উত্তর, “ডার্বির লড়াইয়ে ফার্স্ট বয়, লাস্ট বয় থাকে না।”
৯ ডিসেম্বরের কলঙ্কিত ডার্বিতে মোহনবাগান রক্ষণকে দাঁড় করিয়ে হেডে অনবদ্য গোল করে গিয়েছিলেন মর্গ্যানের দলের হরমনজিৎ খাবরা। সেই ভুল যাতে না হয়, তার জন্য মোহনবাগান অনুশীলনে বক্সে উড়ে আসা বল বিপন্মুক্ত করতে জোরকদমে অনুশীলন করালেন করিম। ঠিক তেমনই প্রথম দশ ম্যাচে মাত্র দু’গোল হজম করলেও শেষ নয় ম্যাচে নয় গোল ঢুকেছে ইস্টবেঙ্গলের জালে। এ দিনের অনুশীলনে মর্গ্যানও তাই সতর্ক তাঁর রক্ষণ আর গোলকিপারদের নিয়ে।
নিজের দলের ঢাক পেটাতে আবার দুই কোচ দুই মেরুতে। মর্গ্যান যখন বলছেন, “আমরা আন্ডারডগ।” তাঁর বিপক্ষ কোচের তখন হুঙ্কার, “টোলগে শুদ্ধু অনেক ফুটবলারের চোট, দলের ভাঙাচোরা মানসিকতা এখন আর নেই। আই লিগের যে কোনও দলকে হারাতে পারি।” তবে দুই কোচই হাতের সব তাস উপুড় করছেন না। মর্গ্যানের লুকোনো তাস বরিসিচের মতো করিম পেয়ে গিয়েছেন কুইন্টকে। দুই কোচের পরের দিকে নামিয়ে বিপক্ষকে ঝটকা দেওয়ার পরিকল্পনায় যে দুই নতুন বিদেশি রয়েছেন দুই শিবিরে।
২০০৯-এর ২৫ অক্টোবর এই ডার্বি ম্যাচেই লাল-হলুদকে পাঁচ গোল দেওয়ার চার মাসের মধ্যে মোহনবাগান ছাড়তে হয়েছিল কোচ করিমকে। চলতি মরসুমের মাঝপথে ফের সবুজ-মেরুন কোচের জুতোয় পা গলিয়ে আপাতত অবনমনের ভূত মোহনবাগানের ঘাড় থেকে নামাতে তৎপর তিনি। জানেন শনিবারের একটা জয়ই মোহন-সমর্থকদের বুকে জমে থাকা যাবতীয় ক্ষোভ-দুঃখ হালকা করে দিতে পারে। সেই লক্ষ্যেই ঘুঁটি সাজাচ্ছেন তিনি।
আর ২০১০ থেকে লাল-হলুদের মশালে সাফল্যের শিখা যিনি ধরে রেখেছেন সেই মর্গ্যানের চ্যালেঞ্জ অধরা আই লিগ স্পর্শ। তাই সাহেব কোচও জয়ের জন্য মরিয়া। তবে সেই সরণিতে রবিন সিংহ যেন বিঁধছেন কাঁটার মতো। ঠিক সময়ে ঘুম না ভাঙায় ডার্বির ফাইনাল ড্রেস রিহার্সালে লাল-হলুদ স্ট্রাইকার এলেন দেড় ঘণ্টা দেরিতে। অসন্তুষ্ট কোচের পরিকল্পনায় তাই ব্রাত্য রবিন। এমনকী বড় ম্যাচের পর রবিনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়াও হতে পারে। |